4:22 pm , December 22, 2024
মো: আফজাল হোসেন, ঢালচর থেকে ফিরে ॥ ভোলার মনপুরা ঢালচরের পাকা ধান কেটে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে নোয়াখালীর হাতিয়ার ভূমিদস্যুরা। শুধু ধানই নয় তারা প্রতিটি ঘরে ঢুকে নারী নির্যাতন,গৃহপালিত গবাদী পশু নিয়ে যাচ্ছে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। তারা ইতিমধ্যে হাজারো একর জমির ধান কেটে নিয়ে গেছে। প্রতিকার চেয়ে অসহায় কৃষকরা মানববন্ধন করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে,চরাঞ্চলের ধানের শীষে সোনালী রং ধারন করার সাথে সাথেই লাঠিয়াল ও ভূমিদস্যুদের চোখ লাল হয়ে উঠে। তোড়জোর শুরু হয় অসহায় কৃষকদের ধান কেটে নেয়ার। দ্বীপ জেলা ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা উপজেলা। একইভাবে মনপুরার সাথে বিচ্ছিন্ন ঢালচর। এ চরটি সব সময় অবহেলিত থাকে। কলাতলী ইউনিয়ের ঢালচরটি নিয়ে নোয়াখালীর হাতিয়ার সাথে দীর্ঘ বছর ধরে বিরোধ ছিলো। তবে সর্বশেষ সুপ্রিমকোর্ট এর রায়ের পর সীমানা নির্ধারন করা হয়। এর পরেও হাতিয়ার ভূমিদস্যুরা থামছে না।
ঢালচরের কৃষক মো: সালাউদ্দিন বলেন,জোরপূর্বক হাতিয়ার লোকজন ধান কেটে নিয়ে যায়। শুধু তাই নয়,নিজেদের ঘরে নিজেরাই আগুন দিয়ে মিথ্যা মামলা করে হয়রানী করছে আমাদের। আমরা ধান কাটতে বাঁধা দিলেই তখন মিথ্যা মামলা দেয় আমাদের নামে। হাতিয়ার মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে এসব হচ্ছে। এনায়েত হোসেন বলেন,মেঘনা নদীর ভাঙ্গনের ফলে আমরা বহু বছর ধরে ঢালচরে বসবাস করছি। ১৯৮৬ সালে প্রথম সীমানা নির্ধারন করা হয়। যখন ভূমি সচিব মোকাম্মেল স্যার ছিলেন। যত বার সীমা নির্ধারণ করা হয়,জরিপে প্রতিবারই ভোলার মনপুরার আওতায় পড়ে ঢালচরটি। আমরা হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্ট থেকে রায় পাই। অথচ ধান পাকলেই হাতিয়ার ভূমিদস্যু ও জলদস্যুরা এসেই ধান কেটে নিয়ে যায় এবং গবাদীপশু লুটপাট করে ।
মো: সেলিম বলেন,১৯৭০ সালে ঢালচর থেকে আমার বাবা ধান চাষ করেছেন। বাবা চলে যাবার পরে আমরা ধান চাষ করছি। তবে প্রতিবছর ভূমিদস্যুদের কারনে পাকা ধান ঘরে তুলতে পারছি না। গত ১৫/১৬ বছর ধরে অত্যাচার নির্যাতন চলছে আমাদের উপর।
ঘরে স্ত্রী-সন্তানদের রাখতে পারিনা। সারাক্ষন থাকি চরম আতংকে। পাশের গাইষ্যার চর থেকে খোকন ও বজলুর নেতৃত্বে শত শত লাঠিয়াল আসে ধান লুট করতে। মাইনুদ্দিন বলেন,তার একটি গরু নিয়ে গেছে গত কয়েকদিন আগে। চরের উত্তর মাথায় যেতেই পারি না। গেলেই জলদস্যুরা জিম্মি করে।
এ ঘটনায় মনপুরার ঢালচরের শত শত মানুষ মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
ঢালচর ৯নং ওয়ার্ড এর ইউপি সদস্য মো: বেল্লাল বলেন, হাতিয়ার লোকজন কিভাবে এটি তাদের দাবী করে আমার বুঝে আসে না। এটা যদি হাতিয়ার অংশ হতো তাহলে আমি মনপুরা উপজেলার কলাতলী ইউনিয়নের মেম্বার হলাম কিভাবে। ধান পাকলেই হাতিয়ার জলদস্যুরা এসে ধান কেটে নিয়ে যায়। নিজের ঘরে নিজেরাই আগুন দিয়েছে ঐ জলদস্যুরা। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
নিজেদের ধান যাতে নিজেরাই কাটতে পারে সেজন্য সহায়তা চেয়ে মো: ইউনুছ নাজির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে আবেদন করেছেন। তিনি মনপুরা থানার ওসি এবং কোষ্টগার্ড কন্টিনজেন্ট কমান্ডারকে কৃষকদের সহযোগীতার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে কোন ধরনের সহযোগীতা না পাওয়ার অভিযোগ করেন মো: ইউনুছ নাজির।
মনপুরা থানার ওসি মো: আহসান কবির বলেন,কোর্ট থেকে একটি আদেশ পেয়েছি। তবে কোষ্ট গার্ডসহ যৌথভাবে কাজ করবো আমরা। এজন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছি। ম্যাজিস্ট্রেট পেলেই কৃষকদের ধান কাটতে সহযোগীতা করা হবে। কৃষকদের ধান রক্ষায় ডিআইজি স্যার ৩০ জন অতিরিক্ত ফোর্স দিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাঠান মো: সাইদুজ্জামান বলেন,ধান কাটা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি আমাদেরো নজরে এসেছে। ইতিমধ্যে মনপুরা থানা পুলিশ এবং কোষ্টগার্ড কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পুলিশ যদি প্রয়োজন মনে করে যে সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজন জেলা প্রশাসক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেবেন।