4:18 pm , December 22, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ঘন কুয়াশায় ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটে দুটি যাত্রীবাহী লঞ্চের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। লঞ্চ দুটি হচ্ছে প্রিন্স আওলাদ-১০ ও কীর্তনখোলা-১০। কীর্তনখোলা-১০ বরিশাল থেকে ছেড়ে ঢাকা যাচ্ছিলো আর প্রিন্স আওলাদ-১০ ঢাকা থেকে ছেড়ে বরিশাল আসছিলো। তবে এ ঘটনায় কোনো যাত্রী হতাহত হয়নি। শনিবার দিবাগত রাত ২টায় মেঘনা নদীর চাঁদপুর ও বরিশালের সীমান্তবর্তী হিজলা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুই লঞ্চের ৪ জন মাস্টার কে শোকজ করা হয়েছে। আগামী ৩ কর্ম দিবসের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ঘটনার পরে দুই লঞ্চের ২ জন করে মোট ৪ জন মাস্টার কে শোকজ করা হয়েছে। আগামী ৩ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দিতে বলা হয়েছে। জবাবে সন্তুষ্ট না হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হওয়ায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। দুর্ঘটনার পর কীর্তনখোলা-১০ ধীরে ধীরে ঢাকায় চলে গেলেও প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চটিকে মেঘনার চরে নোঙর করে রাখা হয়। পরবর্তীতে বরিশাল থেকে শুভরাজ-৯ নামে একটি লঞ্চ ঘটনাস্থলে এসে দুর্ঘটনা কবলিত আওলাদ-১০ এর যাত্রীদের উদ্ধার করে বরিশালে নিয়ে আসে। আর প্রিন্স আওলাদ লঞ্চটি মেরামতের জন্য ঢাকা চলে গেছে। ঢাকা সদরঘাট দপ্তরের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চটি সকালে যাত্রীদের নিয়ে নিরাপদে ঢাকায় পৌঁছেছে। দুর্ঘটনার কারণে স্বাভাবিক সময়ের থেকে কিছুটা বিলম্বে লঞ্চটি ঢাকায় পৌঁছে। কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের যাত্রী স্বপন বলেন, তাদের বহনকারী লঞ্চটি মেঘনা নদী দিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। আর গভীর রাতে নদীতে এত ঘন কুয়াশা ছিল, যে একহাত সামনেও দেখা যাচ্ছিলো না। এর মাঝেই হঠাৎ করে বরিশালগামী প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের অগ্রভাগের সাথে আমাদের বহনকারী কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের অগ্রভাগের বিকট শব্দে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় লঞ্চের সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে চালক কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চকে তাৎক্ষণিক নদীর তীরে নিয়ে ভাসিয়ে রাখে। পরে সবকিছু চেক করে আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। তিনি আরও বলেন, সংঘর্ষে কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের শুধু সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন নয়, লঞ্চটির সামনে রাখা যাত্রীদের ২০টির বেশি মোটরসাইকেলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোনো যাত্রী হতাহতের খবর পাইনি। এদিকে প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের একাধিক কর্মচারী বলেন, সংঘর্ষের কারনে ফ্যান্টারের নীচের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লঞ্চের চালক সেটিকে চরে তুলে দেয়। শুনেছি নীচের একটি অংশ থেকে পানিও লঞ্চের ভেতরে প্রবেশ করছিল, তাই ঝুঁকি এড়াতে লঞ্চটি আর চালনা করা হয়নি। সকাল ৯টার দিকে শুভরাজ-৯ লঞ্চ ঘটনাস্থল থেকে যাত্রীদের উদ্ধার করে বরিশালে পৌঁছে দিয়েছে। এর আগ পর্যন্ত সব যাত্রীই নিরাপদে লঞ্চে অবস্থান করছিল। তবে সবার মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছিল। লঞ্চের যাত্রীরা বলছেন, বিলাসবহুল যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোয় ফগ লাইট, রাডার, ইকো সাউন্ডার, ভিএইচএফসহ আধুনিক নৌ-সরঞ্জাম থাকার পরও এমন সংঘর্ষ ঘটায় তারা অনেকটাই হতবাক। ঘটনার সময় যন্ত্রপাতিগুলো সচল ছিল কিনা, কিংবা এগুলো চালানো হচ্ছিল কি না তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন তারা। সেইসাথে যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ায় দায়িত্ব অবহেলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।