4:28 pm , December 17, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালের নতুন বাজারে মঙ্গলবার দুপুরে সয়াবিন তেল কিনতে যান একটি এনজিওর কর্মচারী লক্ষণ দাস। ৩জন কর্মচারী মিলে মেসে নিজেরাই রান্না করেন তারা। এজন্য সব সময় ২ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল কেনেন। কিন্তু মঙ্গলবার বাজারে গিয়ে ২ লিটারের কোন সয়াবিন তেল পাননি। খোলা তেল নেওয়ার জন্য কোন বোতলও সাথে ছিলো না। তাই বাধ্য হয়ে বাড়তি দাম দিয়ে ৫ লিটারের বোতল কিনে আনতে বাধ্য হন। তবে বাজারে বর্তমানে ৫ লিটারের বোতলও সরবরাহ আগের তুলনায় কম। এমন অবস্থায় বরিশালজুড়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছে সংকটের পিছনে তাদের কোন হাত নেই। কোম্পানীগুলো গত এক মাসেরও বেশী সময় ধরে অর্ডার নেয়নি। যে কারনে যা মজুত ছিলো তা ফুরিয়ে গেছে। দু/একদিন ধরে কোম্পানী অর্ডার নেওয়া শুরু করেছে। তবে তাও শুধু ৫ ও ১ লিটারের জন্য। তাদের প্রত্যাশা জানুয়ারী মাসের প্রথম থেকে সংকট কিছুটা কেটে যেতে পারে।
বরিশাল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর বলছে তেলের জাতীয় সংকট চলছে। তবে কেউ অবৈধভাবে মজুত করছে কিনা সে ব্যাপারে নজর রয়েছে তাদের।
বরিশালের হাট খোলা ও বাজার রোডে অন্তত ১০ টি বড় দোকান রয়েছে যারা সব সময় বিপুল সংখ্যক বোতলজাত সয়াবিন তেল মজুত করে। ওই সব দোকান থেকে বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা পাইকারী দরে তেল কিনে থাকেন। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে বড় বড় এসব দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে না তেল। বিশেষ করে আধা লিটার, দুই কেজি ও তিন কেজির বোতল একদমই নেই।
নগরীর মুন্সি গ্যারেজ এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, মূলত সংকটের শুরু হয়েছে ৫ আগস্টের পর থেকে। কিন্তু মজুত থাকায় আমরা বিক্রি করতে পেরেছি। ক্রেতারাও সংকট তখন বুঝতে পারেনি। গত ৩ মাসের ব্যবধানে ব্যবসায়ীদের যত মজুত ছিলো সব শেষ হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, অধিকাংশ কোম্পানী গত ২ মাস ধরে অর্ডার নিচ্ছে না। কেউ কেউ স্বল্প পরিসরে অর্ডার নিলেও তা এক ও পাঁচ লিটারের।
অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, মঙ্গলবার অনেক কোম্পানী অর্ডার নিয়েছে। হয়ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। একদিকে সংকট চলছে অন্যদিকে কিছু দিন আগে সব ধরনের সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এইসব বিষয় আঁচ করতে পেরে অনেক ব্যবসায়ী তেল মজুত করেছে। বরিশালেও অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী রয়েছে যাদের কাছে এখনো অনেক তেল মজুত আছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারী বাড়ানো উচিত বলে মন্তব্য তার।
বরিশাল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, এটা জাতীয় সংকট। তাই স্বাভাবিকভাবেই বরিশালেও এর প্রভাব পড়েছে। সংকটের সময়ে পণ্য দুইভাবে মজুত হয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা তো করেই। সাথে সাথে অনেক পরিবার প্রয়োজনের তুলনায় বেশী বেশী ক্রয় করে থাকে। ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তো আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি কিন্তু পারিবারিক মজুতের বিষয়ে তো আমরা কিছু করতে পারি না। বরিশালে যারা বড় বড় ব্যবসায়ী রয়েছেন তাদের সাথে নিয়মিত আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। আমরা খোঁজ খবর রাখছি। মজুতের কোন খবর বা আলামত আমরা পাইনি। প্রশাসনের সবাই এ বিষয়ে সর্তক রয়েছে।