3:28 pm , December 15, 2024
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ৫৮ বর্গকিলোমিটার বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের উল্লেখযোগ্য ১৩টি সড়ককে ঘিরে গড়ে উঠেছে হাটবাজার ও বাণিজ্যিক এলাকা। এসব সড়কের পুরোটাই দখল করে চলছে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য। আবার ৩০ ওয়ার্ডের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা রেখে সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন চলছে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়। বিশেষ করে শিল্পকারখানা রয়েছে এমন এলাকাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে চলছে বরিশাল সিটি করপোরেশন এর যাবতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কার্যক্রম। যে কারণে বিগত সময়ে আধাআধি সম্পন্ন হওয়া ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার কাজ সরিয়ে গ্যাসটারবাইন, অপসোনিন, এ্যাংকর সিমেন্ট ইত্যাদি শিল্পকারখানা বহুল এলাকার সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক করতে ব্যস্ত বিসিসির নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব জায়গায় কাজের গতি খুবই ধীর বলে জানালেন ২৪ ও ২৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। বললেন, যে গতিতে কাজ চলছে তাতে আগামী এক বছরেও এ কাজ শেষ হবে কিনা সন্দেহ। এদিকে নগরীর ২৩ নং ওয়ার্ড এর বেশিরভাগ সড়কের বেহাল দশা। পাঁচ বছর ধরে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইসলাম পাড়া ও থানা কাউন্সিল সংযোগ ড্রেন, সড়কের চলমান নির্মাণ কাজ আজ পর্যন্ত শেষ হয়নি। একই অবস্থা ২১ নম্বর ওয়ার্ডের মুসলিম গোরস্থান রোডের। আবার নগরীর অভ্যন্তরীণ ব্যস্ততম সড়ক আমতলা মোড় থেকে বাংলাবাজার পর্যন্ত নতুন তৈরি সড়কে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। পাঁচ বছর মেয়াদি এই সড়কের বয়স একবছরও হয়নি। বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দারা বলেন, প্রতিদিন এই সড়কে হাজারো যানবাহনের চলাচল। খানাখন্দ এড়াতে এখানে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ঘটছে দুর্ঘটনা। পাঁচ বছর মেয়াদি এই সড়কের নির্মাণ কাজ হয়েছে সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সময়ে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নৈতিক দায়িত্ব এই সড়ক সংস্কার করা। এলাকাবাসীর অভিযোগ বিসিসির প্রশাসক বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছারকে বিষয়টি অবহিত করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
এদিকে সরজমিনে ১৫ ডিসেম্বর রবিবার সকাল থেকে বরিশালের জেলখানা মোড় হয়ে সদর রোড, চকবাজার, কাটপট্টি সড়কের যানজটে অস্থির পরিস্থিতি চোখে পড়ে। ট্রাফিকের সদস্যরা হিমশিম খাচ্ছেন মানুষ ও রিকশার জট সামলাতে। কনস্টেবল মুরাদ দেখালেন জেলখানা মোড়ের আশেপাশের ফুটপাতে পথচারী চলতে না পেরে তারা সড়কে নেমে এসেছেন। সিএনজি ও ইজিবাইকের রীতিমতো জটলা এখানে।
চকবাজার এলাকায়ও একই অবস্থা। এখানে দায়িত্বরত সার্জেন্ট তরুণ বলেন, পুরো ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে। মানুষ চলাচলের কোনো উপায় নেই। একেতো বাণিজ্যিক এলাকা হিসেবে এখানকার ফুটপাত আরো বড় হওয়া উচিত ছিলো। তা তো নেই-ই বরং যেটুকু আছে তাও দোকানদারেরা দখল করে রেখেছে। তিনি বলেন, আমরা সড়কের পাশের বাণিজ্যিক ভ্যান ও ভাসমান ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু স্থায়ী ব্যবসায়ীদের কিছু বলা আমাদের কাজ নয়।
এসময় ৯ নং ওয়ার্ড পদ্মাবতীর বাসিন্দা রুহী বেগম বলেন, গত ত্রিশ বছর ধরে আমরা এই সড়কে চলাচল করছি। চকবাজার, ফলপট্টি মোড় থেকে কাটপট্টি, পোর্ট রোড পুরো এলাকার ফুটপাত দখল হয়ে আছে। কেউ কিছু করছে না। প্রতিদিন কোনো না কোনো ভোগান্তি আমাদের পোহাতে হচ্ছে। ফুটপাত ব্যবহার কখনোই করতে পারিনি। উল্টো সড়কে নেমে পথ চলতে গিয়ে রিকশায় লেগে কাপড় ছিঁড়েছে বহুবার, কতজন যে আহত হয়েছে তার হিসাব নেই বলে।
নগরীর অন্যতম ব্যস্ত সড়ক পোর্ট রোড। এটি এখন ব্যবহার অনুপযোগী। এ নিয়ে অসংখ্যবার সংবাদ হলেও সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এটি বিসিসির আওতায় নয় বলে জানিয়েছেন ৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। তিনি বলেন, এটি বিআইডব্লিউটিএর অধীনে। তাই বিআইডব্লিউটিএর সাথে এ নিয়ে বসতে হবে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে।
এদিকে নগরীর ২৯ নং ওয়ার্ডের কাশিপুর এলাকার প্রতিটি সড়ক ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন। ২৫০ কোটি টাকার সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের ছিটেফোঁটা এ সব এলাকায় নেই বলে একাধিক অভিযোগ বাসিন্দাদের। ২৩ ও ২৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা রীতিমতো অভিশপ্ত জীবনযাপন করছেন বলে জানালেন ঠাকুরবাড়ি সড়কের বাসিন্দা ব্যবসায়ী সুখেন্দু রায়। তিনি বলেন, ২৩ নং ওয়ার্ডের দরগাবাড়ি থেকে এই ঠাকুরবাড়ি ব্রীজ পর্যন্ত সড়কের যে কাজ হয়েছে তা কতদিন টিকবে এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেননা সড়কের কাজের মান খুবই নি¤œমানের হয়েছে। তারপর হাঁটু কাদা সড়কে পিচ ঢালাই হয়েছে। এজন্য সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। কিন্তু ঠাকুরবাড়ি থেকে দক্ষিণে কালিজিরা এবং উত্তরে নতুনহাট পর্যন্ত সড়কের নির্মাণ না হলে খুব একটা লাভ নেই আমাদের। ভোগান্তি থেকেই যাবে। অন্যদিকে ২৩ নং ওয়ার্ড এর ইসলাম পাড়া, হাওলাদার পাড়া, থানা কাউন্সিল সড়কের দুপাশে মাটিভরাট সহ সড়ক নির্মাণ অসমাপ্ত পড়ে থাকায় এই এলাকার বাড়ির মালিকরা বিপাকে পড়েছেন বলে জানান বারেক হাওলাদার। তিনি বলেন, এখানে আশেপাশে অসংখ্য বাড়িতে টু-লেট ঝুলছে। ভাড়াটিয়া পাচ্ছে না, কারণ সড়ক নেই। ড্রেনের স্লাব ব্যবহার করে আমাদের চলাচল এখানে। গত পাঁচ বছর ধরে এভাবেই চলছি।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, উন্নয়ন কাজ আগে যা চলমান ছিলো, সেই একই ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। আমি মাত্রই দায়িত্ব নিয়েছি। পুরো কাজের তদারকি এখনো সম্ভব হয়নি। তবে কয়েকটি এলাকার কাজ ঘুরে দেখেছি। আশা করি আগামী জুনের মধ্যে অসমাপ্ত অনেক সড়কের কাজ সমাপ্ত হবে।