3:10 pm , December 14, 2024
সুবিচার নিশ্চিতসহ স্মৃতি ফলক নির্মাণ ও পাঠ্যবইয়ে মূল্যায়নের দাবী সাধারণ মানুষের
আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ সারাদেশের ন্যায় নানা আয়োজনে বরিশালেও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উদযাপন করেছে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন হর রাজনৈতিক দলগুলো। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। অপরদিকে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বধ্যভূমিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এসময় তারা তরুণ প্রজন্মকে সাথে নিয়ে বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সকাল ১০টায় বরিশালের ত্রিশ গোডাউন এলাকার কীর্তনখোলা নদী তীরবর্তী বধ্যভূমিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষে স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক আনোয়ার হোসেন ও জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেনসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এরপর বরিশাল সার্কিট হাউস মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
স্মৃতিস্তম্ভে সকালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ। পরে দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সংগঠনের আহবায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার, ১নং যুগ্ম আহবায়ক আফরোজা খানম নাসরিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম ফরিদ, যুগ্ম আহবায়ক মো. আল-আমিন, সাজ্জাদ হোসেন সহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে বধ্যভূমি ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা সাধারণ মানুষের অনেকেই প্রশ্ন তোলেন – এই বুদ্ধিজীবী হত্যার ন্যায়বিচার নিয়ে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসিবুর রহমান শান্ত লিখেছেন ‘দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের শেষে বিজয়ের দুইদিন পূর্বে আমাদের জাতির মেরুদ- ভেঙে দেয়ার উদ্দেশ্য জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা হয়। এটা সবার জানা তবে বিভিন্ন বইপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে তখনকার বাস্তবতা মতে এমন নিখুঁত পরিকল্পনা করে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা পাকিস্তান সরকারের পক্ষে সম্ভব না বলে আমি মনে করি। আমি মনে করি এখানে অন্য কোন দেশের স্বার্থ, উদ্দেশ্য থাকতে পারে। সুতরাং আমি বর্তমান আমাদের সৃষ্ট নতুন বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আবেদন করছি এই হত্যার আসল আসামিদের সামনে আনতে। নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হউক। আমাদের জাতির সূর্য সন্তানদের হত্যাকারীদের আমরা দেখতে চাই আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে চাই। তাদের হত্যাকারীদের চিহ্নিত করা ও বিচার নিশ্চিত করাই হবে আমাদের তাদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান জানানো ও তাদের হক আদায়।
শান্ত’র এই দাবীতে সহমত বরিশালের হাজারো জনতার। তারা অনেকেই একই দাবী তুলেছেন। একইসাথে বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রকৃত তথ্য পাঠ্যপুস্তকে লিপিবদ্ধ করা এবং তাদের জন্য স্মৃতি ফলক নির্মাণের দাবি জানান তারা।
একই দাবীতে স্মৃতি স্তম্ভে শ্রদ্ধা জানাতে আসা কয়েকজন তৃণমূল বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলেন, এই হত্যাযজ্ঞ অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন এ বিষয় নিয়ে কাজ করতে চাইলেও একশ্রেণির সুশীলদের বাধার মুখে তা পারেনি। আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে এমন অনেক অমিমাংশিত বিষয় গুরুত্ব পাবে। বিএনপির ৩১ দফার গভীরে এর উল্লেখ রয়েছে বলে জানান তারা।
তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের মাধ্যমে এই জাতিকে মেধাশূন্য করার একটা চক্রান্ত করা হয়েছিলো। এর বীজ অনেক গভীরে লুকানো হলেও ওই সময়ের আলবদর, আলশামস বাহিনীকে দিয়েই এগুলো ঘটানো হয়েছিল বলে জানান তিনি ।
জেলা প্রশাসনের সার্কিট হাউসের আলোচনাতেও ছিলো এ নিয়ে বিশেষ আলোচনা। বেলা ১১ টায় অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক খোন্দকার আনোয়ার হোসেন। জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন এর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ডিআইজি (বরিশাল রেঞ্জ) মঞ্জুর মোর্শেদ আলম, পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) বেলাল হোসাইন। অতিথিরা ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এর তাৎপর্য্য তুলে ধরে আলোচনা করেন এবং পাঠ্যপুস্তকে বিষয়টি আরো গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।