শীতের সবজিতে স্বস্তি ॥ বাধাকপি ও ফুলকপি কেজি দরে বিক্রি নিয়ে অসন্তোষ ক্রেতার শীতের সবজিতে স্বস্তি ॥ বাধাকপি ও ফুলকপি কেজি দরে বিক্রি নিয়ে অসন্তোষ ক্রেতার - ajkerparibartan.com
শীতের সবজিতে স্বস্তি ॥ বাধাকপি ও ফুলকপি কেজি দরে বিক্রি নিয়ে অসন্তোষ ক্রেতার

4:22 pm , December 12, 2024

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বাজারে আসতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি। শিম, মূলা, পালংশাক, শালগমসহ সবজির বাজারে এখন স্বস্তির ছোঁয়া। ২০ টাকা কেজিতে শালগম ও মূলা পেয়ে ক্রেতার চোখেমুখে স্পষ্ট স্বস্তি ফিরে আসতে দেখা গেছে। তবে শীতের নতুন সবজি বাধাকপি ও ফুলকপি কেজি দরে বিক্রি হওয়ায় এ নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে দাবী ক্রেতাদের।  বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী ও ভ্রাম্যমান সবজি বিক্রেতারা ৪০ ও ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। আর এ নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বেশিরভাগ ক্রেতা। কেননা কোনোটাতেই ওজন এক কেজির মিল হয়না। হয় বেশি নয়তো কম। ফলে এ নিয়ে সমস্যা পড়ছেন ক্রেতারা।  ক্রেতাদের দাবি ক্ষেত থেকে পিস হিসেবে কিনে ব্যবসায়ীরা কেজি দরে বিক্রি করে রীতিমত প্রতারণা করছেন। অপরদিকে আড়ৎদাররা বলছেন, কৃষকরাই সরাসরি কেজি দরে বিক্রি করছে, এতে তাদের কোনো হাত নেই। এদিকে বরিশালের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর বলছে কেজি দরে বিক্রি এটা কোনো অপরাধ না।  কেউ কেউ পিস হিসেবে আবার কেউ কেউ খুচরা কেজি দরে বিক্রি করছেন আমরা দেখেছি । এটা ঠিক আছে, তবে তরমুজ কেজি দরে বিক্রি নিষিদ্ধ বলে জানান উপপরিচালক অপূর্ব অধিকারী।
গতকাল বৃহস্পতিবার বরিশালের বিভিন্ন বাজার ও ভ্রাম্যমান বিক্রেতাদের ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বাধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে শিম ও বেগুন ৬০ এখনো ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পিস হিসেবে কিনে কেজি দরে বিক্রি হওয়ায় অনেক সময় বিক্রেতাদের সাথে ক্রেতাদের বাগবিতন্ডা হয়।  কেননা ৪০ টাকায় এক কেজি নিতে এসে হয় ছোট সাইজের  ৮শ গ্রাম কিংবা ১৪শ গ্রাম ওজন হচ্ছে। এটি কেটেও দেয়া সম্ভব না। ফলে যা কেটে ওজন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, তা কেজি দরে বিক্রি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ক্রেতাদের অনেকেই। এমন চিত্র দেখা আমতলা মোড় এলাকায় ভ্রাম্যমান বিক্রেতার কাছ থেকে বাধাকপি কিনতে গিয়ে।
পরিস্থিতি সামলাতে স্থানীয় একজন বড় দোকানের ব্যবসায়ী এসে ওজন করে একটি বড় সাইজের বাধাকপি (এক কেজি ৪৪০গ্রাম) কেজি দরে হিসেব করে ৫৫ টাকা পিস ধার্য্য করে দেন। তখন আর একজন ক্রেতা দাবী করেন-ক্ষেত থেকে এই বাধাকপি বড়জোর ১৫ টাকায় কেনা হয়েছে। ৫৫ টাকা অনেক বেশি দাম ধার্য্য হয়েছে।
এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার চরামদ্দির সঠিখোলা গ্রামের কয়েক একর জমিতে বাধাকপি ও ফুলকপি চাষাবাদ দেখতে পাওয়া গেছে। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা ক্ষেত হিসেবে ৫ একর জমিতে সবজি ঠিকা দরে বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে বাধাকপি, ফুলকপি, পালংশাক ও মূরা আগাম বিক্রি করে দিয়েছেন আড়ৎদারদের কাছে। যে কারণে পিস বা কেজি কোনো কিছুই তাদের হিসাবে নেই। একর প্রতি সবজি চুক্তি করেছেন   ৩০ হাজার টাকায় বলে জানান সঠিখোলার কৃষক সত্তার হাওলাদার।
অপরদিকে সদর উপজেলার টুঙ্গিবাড়িয়া এলাকায় শীতকালীন সবজি যেমন শিম, লাউ, ঢেড়স, বাধাকপি ও ফুলকপি চাষাবাদ হয়েছে। কৃষক দেলোয়ার জানালেন, লাউ বিক্রি করে মোটামুটি উপার্জন হলেও বাধাকপি ও ফুলকপি ক্ষেত হিসেবে চুক্তি করতে চায় মহাজনরা। তবে তিনি প্রতি পিস গড়ে ১০ টাকা দরে বিক্রি করতে আগ্রহী। ৫ হাজার পিস বাধাকপি ও ফুলকপির চাষ হয়েছে তার ক্ষেতে। তাই এতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা পড়বে তার ক্ষেত চুক্তি।  কিন্তু মহাজন ৩৫ হাজার পর্যন্ত বলেছেন।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শিউলি আক্তার বলেন, বানারীপাড়া, উজিরপুরের গুঠিয়ায় ফুলকপি ও বাধাকপির চাষাবাদ সবচেয়ে বেশি। চলতি শীত মৌসুমে বরিশাল জেলায় ৩৫ হাজার ১১৪ হেক্টর জমিতে এখন পর্যন্ত শীতকালীন সবজির চাষাবাদ হয়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ৫৫ হাজার ৪৯৫ হেক্টর।
বরিশালের পাইকারি কাঁচা বাজারের আড়ৎদার রাজিব এন্টারপ্রাইজ এর সত্বাধিকারী রাজিব বলেন, আমরা বরিশালের পাইকারী ব্যবসায়ীরা বেশিরভাগ চাষীদের পণ্য সরাসরি বিক্রি করে দেই কমিশন এজেন্ট হিসেবে। আমাদের কমিশন সাড়ে ৬% অর্থাৎ ১০০ টাকায় সাড়ে ছয় টাকা। গতকাল সকালে আমরা ২০ টাকা কেজি দরে বাধাকপি বিক্রি করেছি। খুচরা বিক্রেতারা সেটা পঁচিশ বা ত্রিশ টাকা দরে বিক্রি করলেতো আর সমস্যা হয়না।
মহাজন হারুন বলেন, কৃষক কখনো কখনো টাকার প্রয়োজন হলে তার ক্ষেতের সব ফসল চুক্তিতে বিক্রি করে দেন। তখনই শুধু আমরা তা কিনে নেই। এছাড়া বেশিরভাগ সময় তারাই তাদের সবজি নিয়ে আমাদের এখানে এসে বিক্রি করে চলে যায়। বিনিময়ে আমাদের ঘর ব্যবহার করার জন্য একটা কমিশন নেই আমরা। কৃষক নিজেই এখন বাধাকপি ও ফুলকপি কেজি দরে বিক্রি করছে বলে জানান তিনি। যদিও বেশিরভাগ কৃষক জানিয়েছেন তারা নয়, মহাজনের লোকেরাই কেজি দরে বিক্রি করছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT