বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় তালা ভেঙে স্কুলে প্রবেশ বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় তালা ভেঙে স্কুলে প্রবেশ - ajkerparibartan.com
বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় তালা ভেঙে স্কুলে প্রবেশ

4:21 pm , December 12, 2024

শেরে বাংলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদের কান্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীর শেরে বাংলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ বন্ধ থাকা বিদ্যালয়ের তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে চেয়ার দখল করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় বাধা দিলে প্রতিহত করার জন্য তার সাথে স্থানীয় মাস্তান প্রকৃতির লোকজন ছিল। সন্ত্রাসী কায়দায় প্রবেশের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি নিজেকে বিএনপি নেতা বলে দাবি করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী কর্মচারী রুবেল সরদার বলেন, বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক হারুন স্যার বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে দলবল নিয়ে এসে প্রধান শিক্ষকের কক্ষের তালা খুলতে বলেন। তাকে বারবার অনুরোধ করি স্যার স্কুল বন্ধ, খোলার দিন আপনি আসেন। তানা হলে আমার পক্ষে তালা খোলা সম্ভব নয়। এক পর্যায়ে হারুন স্যার আমার কাছে থাকা মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে তালা ভাঙ্গা শুরু করেন। বারবার তাকে অনুরোধ করা হলেও তিনি কোন কথা না শুনে দরজায় লাগানো ৩টি তালা ভেঙ্গে দলবলসহ ভিতরে প্রবেশ করে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে পড়েন।
এরপর দ্রুত স্কুলের বাইরে গিয়ে দোকানের মোবাইল থেকে বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আশরাফুন্নেছাকে অবহিত করেন। প্রায় একঘন্টার বেশী সময় সেখানে অবস্থান করেন বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক। এ সময় ওই কক্ষের কাছেও তাকে যেতে দেয়া হয়নি। এ কারনে কক্ষে বসে তিনি কি করেছেন তা রুবেল বলতে পারেননি। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আশরাফুন্নেছা বলেন, ৭০ লাখ টাকা আত্মসাত এবং ৯টি ল্যাপটপ চুরির বিষয়টি তদন্ত কমিটির কাছে প্রমানিত হওয়ায় ২০২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী তাকে স্কুল থেকে বরখাস্ত করা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানিরও প্রমান পায় তদন্ত কমিটি। ৫ আগস্টের পর থেকেই ওই প্রধান শিক্ষক নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করে বিভাগীয় কশিনার এবং বরিশাল শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেন। আগামী মার্চ মাসে তার পেনশনে যাওয়ার কথা রয়েছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় এনে তাকে স্বল্প সময়ের জন্য স্কুলে বসার সুযোগ চান। এ সময় ওই দুই প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে অবহিত করা হয় পেনশনের ৩ থেকে ৪ দিন পূর্বে তার উপর আরোপকৃত শাস্তি তুলে নেয়া হবে। এরপর থেকেই বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক স্কুলে যোগদানে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এর পূর্বেও একদিন স্কুলে এসে দায়িত্ব চাইলে এর পক্ষে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতিপত্র চাওয়া হয়। তিনি তা দেখাতে পারেননি। এরপর শিক্ষক ও ছাত্রীদের রোষানলে পড়ে স্কুল ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় গতকাল বুধবার থেকে স্কুল বন্ধ ঘোষনা করা হয়। এ সুযোগে বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ মাস্তান নিয়ে এসে তালা ভেঙ্গে কক্ষে প্রবেশ করে। সেখানে স্কুলের টাকা এবং জরুরী কাগজপত্র রয়েছে। তা খোয়া গেলে অনেক সমস্যায় পড়তে হবে। এ কারনে আইনগত পদক্ষেপ নিতে কোতয়ালী থানায় অবস্থান করছেন বলে জানান তিনি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে সাধারন ডায়েরী করেছেন।
বরিশাল শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ইউনুস আলী বলেন, তাকে স্কুলে যোগদানের কোন অনুমতি দেয়া হয়নি। মানবিক দিক বিবেচনায় তাকে বলা হয়েছে বাসায় থেকে কাজ করতে। আর সে যে কাজ করেছে তা কোন প্রধান শিক্ষক করতে পারে না। এ ধরনের কাজ করবে সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক। আর স্কুল বন্ধ সেখানে তার যাওয়া কোনভাবেই ঠিক হয়নি। তারমধ্যে ৩টি তালা ভেঙ্গে অপরাধ সংঘটিত করেছে। এর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, একজন প্রধান শিক্ষক তালা ভেঙ্গে স্কুলে প্রবেশ করতে পারেন না। বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। তবে এ বিষয়ে কোন ধরনের অভিযোগ দিতে হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের অনুমতি লাগবে। সে ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর আমার কোন পুলিশ সদস্য এ কাজে জড়িত থাকলে তার প্রমান পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের অনুমতিক্রমে তিনি যোগদান করতে এসেছেন। বন্ধ থাকাকালীন কেন তালা ভেঙ্গে যোগদান করতে হবে এ প্রশ্নের উত্তরে বলেন, স্কুল খোলা থাকালীন কয়েকবার এসে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে না পেয়ে তালা ভেঙ্গে নিজ দায়িত্ব নিজেই নিয়েছেন। এটা কোন প্রধান শিক্ষক পারে কিনা এর উত্তর এড়িয়ে যান তিনি।
আপনাকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত এবং ল্যাপটপ চুরিসহ ছাত্রীদের হয়রানির অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এর উত্তরে বলেন, এসব সত্য নয়, তৎকালীন আওয়াীলীগ নেতার যোগসাজসে তাকে হেনস্তা করতে এ অভিযোগ তোলা হয় বলে দাবি করেন তিনি। একই সাথে বলেন, তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। নিজেকে বিএনপি নেতা হিসেবে তুলে ধরেন।
এ ব্যাপারে বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন, তিনি বিএনপির কোন কর্মী নন। তাহলে কিভাবে বিএনপি নেতা হলেন। এদের কারনেই বিএনপির দুর্নাম হচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলে জানান তিনি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT