3:32 pm , December 10, 2024
হেলাল উদ্দিন ॥ গরু কিংবা ছাগল নয় বরিশাল নগরীতে খুঁজে পাওয়া গেছে মাদকের হাট। এবার নগরীর বান্দ রোডস্থ কেডিসি কলোনীতে প্রতিদিনই বসে এ হাট। যার নিয়ন্ত্রন করছেন ৫০ জন মাদক বিক্রেতা। তবে এখানে খুচরো নয় সব মাদক বিক্রি হয় পাইকারী দরে। দিনে বিক্রি হয় কমপক্ষে ২০ কেজি গাঁজা এবং কয়েক হাজার পিস ইয়াবা। শুধু বিক্রি নয় মাদক সেবনেরও অন্যতম স্পট এটি। পাশাপাশি সমানে চলে দেহ ব্যবসা। দীর্ঘ বছর ধরেই এখানে এ ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ড চলছে। তবে চলতি বছরের ৫ আগস্ট দেশের পট পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যবসার ধরণও পাল্টেছে। পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে কলোনিটি বর্তমানে মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে। যেসব ব্যবসায়ীরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চাপে এতদিন ব্যবসা থেকে কিছুটা দূরে ছিলেন তারাও আবার পুরোদমে মাদকের সাথে জড়িয়েছেন। কারন একটাই অভিযান কিংবা গ্রেফতারের ভয় ছিলো না তাদের।
অনুসন্ধানে কলোনীটিতে অন্তত ৫০ জন মাদক ব্যবসায়ীর নাম পাওয়া গেছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো কলোনীতে এমন অনেক পরিবার আছে যে পরিবারের বাবা-মা থেকে শুরু করে সব সদস্যরা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। প্রাথমিকভাবে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলো Ñ আসমা,মিলন,ময়না,মানিক,শামীম,জুয়েল,নিলু,রুবেল ওরফে খোঁচা রুবেল ও নাজমা গ্রুপ। এর বাইরেও বেশ কিছু গ্রুপ রয়েছে। এসব টিমের রক্ষা কবজ হিসাবে কাজ করে দুলিয়া বেগম। কাঠ ব্যবসার আড়ালে কলোনীর সকল মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয় দেয় সে। অধিকাংশ মাদক কারবারী তার জিম্মায় মাদক রাখে। শুধু তাই নয় কোন মাদক ব্যবসায়ী যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয় তাদের ছাড়িয়ে আনার বিষয়েও লবিং করেন এই দুলিয়াসহ বেশ কয়েকজন। এছাড়া মাদক ব্যবসায়ীদের দৈনন্দিন নিরাপত্তা দিতে নিয়োজিত রয়েছেন পারু নামের এক নারী। আওয়ামী লীগ নেত্রীর তকমাও রয়েছে তার নামের সাথে। এই নারীর কাজ হচ্ছে কলোনীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রবেশ করছে কিনা তা ব্যবসায়ীদের অবহিত করা। এজন্য তার অবস্থান থাকে কলোনীর সম্মুখভাগে। এজন্য সকল মাদক ব্যবসায়ী মিলে দৈনিক নির্দিষ্ট হারে টাকাও দেয় তাকে। দৈনিক পারুর আয় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে কলোনীতে যে কয়জন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী রয়েছেন তাদের প্রত্যেকটি টিমে সর্বনি¤œ ৫ থেকে ১৫ জন কাজ করে। এদের কাজ হচ্ছে টিম প্রধানের নির্দেশে ক্রেতার কাছে মাদক পৌঁছে দেওয়া। দিনের বেলায় বাজার কিছুটা কম সরগরম থাকলেও সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পুরোদমে চলে বেচাবিক্রি।
কেডিসি কলোনী ছাড়িয়ে পুরো বেলর্সপার্ক, মডেল কলেজ সহ এর আশপাশেও ভীড় করে খুচরা মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীরা।
কিছুদিন আগে যৌথ বাহিনী এই কলোনীতে অভিযান পরিচালনা করে দেশীয় অস্ত্রসহ দুজনকে আটক করেছিল। আরেকটি অভিযানে অল্প পরিমানে গাজা উদ্ধার করা হয়েছিলো। কিন্তু অভিযানের পর থেকেই পুনরায় নতুন উদ্যমে ব্যবসায়ীরা মাদক ব্যবসার কাজ বেচাকেনা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন , আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মহল থেকে এই কলোনীর বিষয়ে অবগত হয়েছি। খুব দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।