2:23 pm , December 6, 2024
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ নবী করিম (সা:) কোনো কাজ করার পূর্বে সাহাবা (রা:) এর সাথে পরামর্শ করতেন। রাষ্ট্র, সমাজ বা গোত্রের ক্ষেত্রে তিনি সাহাবা (রা:) ও গোত্র প্রধানদের সাথে পরামর্শ করতেন। আবার ঘরের কাজ হলে তিনি (সা:) স্ত্রীদের সাথে পরামর্শ করতেন। এভাবেই ৬ ডিসেম্বর জুম্মাবারের খুতবা শুরু করেন বরিশাল সদর উপজেলার পরিষদ মসজিদের ঈমাম আলী আকবর। তিনি এসময় পবিত্র কুরআন থেকে আয়াত ও হাদিসের কথা উল্লেখ করেন। যেখানে আল্লাহ তাআলা পরামর্শ করাকে ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য বলেছেন। ‘(মুমিন তারা,) যারা তাদের প্রতিপালকের আহ্বানে সাড়া দেয়, নামাজ কায়েম করে, নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে কাজ করে এবং আল্লাহর দেওয়া রিজিক থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা শুরা: ৩৮) অর্থাৎ, ঈমানদারদের প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের বিষয়ে পরস্পরের মাঝে পরামর্শ করার কথা বলা হয়েছে। এবং বলা হয়েছে, কেউ যেন নিজের মতকেই শেষ মত না ভাবে।
ইসলামে পরামর্শের বিষয়টিকে এতোটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে আল্লাহ তায়ালা নবীজি (সা:) ‘কেও পরামর্শের কথা বলেছেন, হে নবী আপনার কাজে কর্মে মোমিনদের সাথে পরামর্শ করুন। -(সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১৫৯)
অপরদিকে রাসুলে করিম (সা:) নিজেও যেকোন কাজের ক্ষেত্রে পরামর্শ করার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতেন। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা:) থেকে সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে বেশি পরামর্শকারী অন্য কাউকে দেখিনি। -(সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৪৮৭২)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘নিজের একক সিদ্ধান্তে কেউ সফল হয়নি আর পরামর্শ করে কেউ কখনো বিফল হয়নি।(জামে সগীর : ২/৩১)
আরেক হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা:) ইরশাদ করেছেন, ‘যখন তোমাদের নেতারা হবেন ভালো মানুষ, ধনীরা হবেন দানশীল এবং তোমাদের কার্যক্রম চলবে পরামর্শের ভিত্তিতে, তখন মাটির ওপরের অংশ নিচের অংশ থেকে উত্তম হবে।’ (তিরমিজি)
যাদের থেকে পরামর্শ চাওয়া হয়, তাদের উদ্দেশে রাসুল (সা:) বলেন, ‘যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়, সে ওই ব্যক্তির মতো, যার কাছে কোনো আমানত রাখা হয়।’ (আবু দাউদ) অর্থাৎ, আমানতের খিয়ানত করা যেমন কবিরা গুনাহ, তেমনি নিজ স্বার্থের জন্য জেনেশুনে ভুল পরামর্শ দেওয়াও মারাত্মক কবিরা গুনাহ।
রাসুল (সা:) নিজেও ছোট-বড় সব বিষয়ে সাহাবিদের (রা:) সঙ্গে পরামর্শ করতেন। যেমন হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) বলেন, রাসুল (সা:) নামাজের জন্য ডাকতে কী পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে, তা নিয়ে সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। কেউ শিঙা বাজানোর এবং কেউ ঘণ্টা বাজানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু এগুলো বিধর্মীদের পন্থা হওয়ায় রাসুল (সা:) তা গ্রহণ করেননি। সেই রাতে আবদুল্লাহ বিন জায়েদ নামে এক আনসারি সাহাবি ও ওমর (রা:) কে স্বপ্নে আজান দেখানো হয়। আনসারি সাহাবি তাৎক্ষণিক রাসুল (সা:) কে তা জানালে তিনি বেলাল (রা:) কে স্বপ্নে দেখা পদ্ধতিতে (অর্থাৎ আজান দিয়ে) নামাজে ডাকার নির্দেশ দেন (ইবনে মাজাহ)। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব উল্লাহ মজুমদারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে তাদের পারিবারিক ও সামাজিক সুস্থতা ও সমৃদ্ধি কামনা করে ঈমাম আলী আকবর বরিশালের ঈদগাহ ময়দানে আন্তর্জাতিক ক্বিরাত প্রতিযোগিতা ও সিরাত মাহফিলের সবাইকে নিমন্ত্রণ জানিয়ে জুম্মার বয়ান শেষ করেন।