4:11 pm , December 4, 2024
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল মহানগরীর নাগরিক পরিসেবা এখনো স্বাভাবিক ছন্দে ফেরেনি। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পরিবর্তে মনোনিত প্রশাসক সহ ভারপ্রাপ্ত কাউন্সিলরগন পুরো মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের দায়িত্ব লাভ করলেও এখনো নতুন এ নগর পরিষদ নগরবাসীর যথাযথ সেবা নিশ্চিত করতে পারছেন না বলে অধিকাংশেরই অভিমত। নগরীর ময়লা আবর্জনা পরিস্কারের বিষয়টি প্রায় স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকলেও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা এবং পানি সরবরাহ ও স্ট্রিট লাইট ব্যবস্থা সহ বেশীরভাগ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিয়ে নগরবাসী সন্তুষ্ট ক্রমশ কমছে বলে জানিয়েছেন। নগরীর বটতলা এলাকা থেকে চৌমাথা পর্যন্ত ড্রেনের সøাব গত ১ বছর আগে চুরি হয়ে গেছে। প্রতিদিন ড্রেনের গর্তে পরে পথচারীরা আহত হচ্ছেন। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের এব্যাপারে কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি।
গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পরে সাবেক মেয়র সহ নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের বেশিরভাগই এলাকা ত্যাগ করেন। ১০ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদেরও অনেকে এলাকায় না থাকার মধ্যেই প্রথমে মেয়র ও পরে পুরো নগর পরিষদ বাতিল করা হয়। ইতোমধ্যে বিভাগীয় কমিশনারকে মেয়র ও বিসিসির বিভিন্ন কর্মকর্তাদের ৩০টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ নিয়োগের দুমাস পরেও বেশীরভাগ মনোনীত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের এলাকাবাসী চেনেননা। এখনো বেশীরভাগ ওয়ার্ডেই কাউন্সিলরদের অফিস স্থাপিত হয়নি। আবার যেসব ওয়ার্ড কাউন্সিলদের অফিসের সাইনবোর্ড লাগান হয়েছে, তারও বেশীরভাগই কখনো খুলতে দেখা যাচ্ছে না। বিভাগীয় কমিশনার নিজ দপ্তরে ৬টি জেলার কাজ শেষ করে নগর ভবনে প্রশাসকের দায়িত্ব পালন দুরুহ হয়ে পড়েছে। ফলে দিনের শেষভাগ বা সন্ধ্যার পর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত তাকে নগর ভবনে অফিস করতে হচ্ছে।
মনোনীত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের এলাকায় না পাওয়ার পাশাপাশি প্রশাসক নিজের দপ্তরেও ফাইলের স্তুপ সরিয়ে সরেজমিনে নগরীর উন্নয়ন কর্মকান্ড সহ নাগরিক পরিসেবা নিশ্চিত করণে তেমন কিছু দেখভালের সময়-সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে অনেক ওয়ার্ডের নাগরিক চাহিদার বিষয়গুলো এখন যথাযথভাবে নগরভবনের দায়িত্বশীল মহলে পৌছচ্ছে না।
এমনকি বিগত মেয়র ও নগর পরিষদের সময়ে ভরা বর্ষার মধ্যেই নগরীর ৫৫ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন সহ যে ১৬৫টি ছোট-বড় রাস্তার নির্মান ও পুণঃ নির্মান কাজ শুরু হয়েছে তার অনেকগুলোই ইতোমধ্যে শেষ পর্যায়ে পৌছেছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, এসব উন্নয়ন কাজের বেশীরভাগই নগর ভবনের প্রকৌশল শাখার দায়িত্বশীল মহল থেকে দেখভাল করা হচ্ছে না।
অপরদিকে নগরীর অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের পুণঃনির্মান সহ উন্নয়ন কাজের বিষয়েও প্রকৌশল বিভাগ উদাসীন বলে অভিযোগ রয়েছে। মনোনীত ওয়ার্ড কাউন্সিরগন তাদের নিজ নিজ এলাকার খোজ না রাখায় এলাকাবাসীর দূর্ভোগ লাঘব হচ্ছে না। এমনকি নগরীর যে নবগ্রাম রোড সামান্য বৃষ্টিতেই প্লাবিত হচ্ছে, সেখানে এখনো মূল রাস্তার অর্ধেক দখল করে নির্মান সামগ্রী ফেলে পাশেই বহুতল ভবন নির্মান করা হচ্ছে। ঐ সড়কটির বটতলা থেকে চৌমহনী পর্যন্ত পুরো ১ কিলোমিটার এলাকার ড্রেনটির বেশীরভাগ অংশই ইট,খোয়া বালুতে ঠাশা থাকলেও নগর ভবনের স্বেচ্ছা অন্ধত্ব ঘোচেনি। এমনকি এ জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটির পাশের কভার্ড ড্রেনের বেশীরভাগ ম্যানহোল ইতোমধ্যে মরনফাঁদে পরিনত হলেও তা দেখার কেউ নেই। নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের রাজকুমার ঘোষ রোডটি গত প্রায় ১৫ বছরেও কোন উন্নয়ন দুরের কথা রক্ষনাবেক্ষন কাজও হয়নি। এতদিন সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী দরপত্র আহবান করে ঠিকাদার নিয়োগের কথা বললেও এখন ‘আগামী অর্থ বছরের তালিকায় আছে’ বলে জানিয়েছেন। এভাবেই মহানগরীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা জনদূর্ভোগ বৃদ্ধি করায় নাগরিক পরিসেবা প্রশ্নের সম্মুখীন। এসব বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি ‘সব কিছুই গুছিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগছে’ বলে জানিয়ে ‘নাগরিক পরিসেবা নিশ্চিত করনে সম্ভব সব কিছু করা হচ্ছে’ বলে জানান।