4:05 pm , December 2, 2024
কৃত্রিম সংকটে চলছে মূল্য বৃদ্ধির প্রক্রিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সারা দেশের ন্যায় নগরীর বাজারে দেখা দিয়েছে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট। অতি জরুরি এই ভোগ্য পণ্যের অভাবে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। খুচরা বাজারে হাতে গোনা দু-তিনটি কোম্পানি ছাড়া অন্য কোনো ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল মিলছে না। তাও আবার পেতে হলে ওই কোম্পানির অন্যান্য পণ্য কিনতে হবে। এক ও দুই লিটারের বোতলের সরবরাহ একেবারেই কম। তবে বাজারে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের সরবরাহ ঠিক আছে। পণ্য দুটির দামও কিছুটা কমেছে। এমন পরিস্থিতিকে তেলের দাম বাড়ানোর একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন সাধারন ক্রেতা-বিক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন তারা কোম্পানির কাছে অসহায়। জানা গেছে, বাজারে প্রায় একমাস ধরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ সংকট চলছে। সরকার ভোজ্য তেল আমদানিতে ভ্যাট কমালে সরবরাহ কিছুটা বাড়ে। তবে এক সপ্তাহ ধরে বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ আবার কমিয়ে দিয়েছে কম্পানিগুলো। গতকাল সোমবার নগরীর বাজাররোড, চৌমাথা, নতুন বাজার সহ বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। মুদি বিক্রেতা মো. আব্দুল লতিফ বলেন, আগে নিয়মিত পাঁচ থেকে ছয়টি কোম্পানি তেল দিতো। দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে মাত্র দুটি কোম্পানি তেল দিচ্ছে যা দিয়ে আমাদের চাহিদার ১০ শতাংশও পূরণ হচ্ছে না। বাকি কোম্পানিগুলোর ডিলাররা জানাচ্ছেন তারা নাকি কোম্পানি থেকে তেল পাচ্ছেন না। আগে সপ্তাহে আমাকে তিনটি কোম্পানি প্রায় ২০ কার্টন করে তেল দিতো।
এখন সেই তিন কোম্পানি এক কার্টনও তেল দিচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, এখন ক্রেতারা দোকানে এসেই আগে তেল খোঁজেন। যদি তেল দিতে না পারি, পণ্য কিনতে চান না তারা। বাজারে নতুন করে তেলের দাম বাড়াতেই কোম্পানিগুলো এমন টালবাহানা করছে বলেও অভিযোগ এ বিক্রেতার। চৌমাথা বাজারের একটি মুদি দোকানের বিক্রয় সহকারী বেলাল উদ্দিন বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে চাহিদার অর্ধেকও বোতলজাত সয়াবিন তেল পাচ্ছি না। কোম্পানিগুলো ডিলারদের ঠিকমতো তেল না দেওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দাম বাড়াতেই এমন কারসাজি হচ্ছে। এ বিষয়ে কথা হয় ক্রেতা পারভীন আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাজারের বেশ কয়েকটি মুদি দোকান ঘুরেও এক লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল পাইনি। দু-একটি দোকানে পাঁচ লিটারের বোতল মিলছে। তাই বাধ্য হয়ে খোলা সয়াবিন তেল কিনলাম। ভোজ্য তেল সরবরাহকারী বড় এক প্রতিষ্ঠানের বিতরণ শাখার প্রধান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা এলসি খুলতে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি না। বরং একাধিকবার এলসি বাতিল করা হয়েছে। যার কারণে বাজারে আমাদের তেল সরবরাহ কমে গেছে। বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ভোজ্য তেলের ওপর বর্তমানে প্রযোজ্য আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর আগে ১৬ অক্টোবর পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরোপনীয় ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়। ফলে বর্তমানে শুধু আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট চালু রয়েছে। টিসিবির হিসাবে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে দুই টাকা ও পাম তেলের দাম এক টাকা কমেছে। বর্তমানে এক লিটার খোলা সয়াবিন ১৬৫ থেকে ১৬৮ টাকা এবং এক লিটার খোলা পাম তেল ১৫৭ থেকে ১৫৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৭ থেকে ১৭০ টাকায়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের বরিশালের কর্মকর্তারা জানান, ভ্যাট কমানোসহ নানা সুবিধা দেওয়ার পরও ভোজ্য তেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো তেলের দাম না কমিয়ে উল্টো সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। রমজান মাস আসছে। এখনি যদি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এবারের রমজান অস্বস্তিকর হতে পারে। আশা করা হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে এখন থেকেই ব্যবস্থা নেবে। রমজানের একমাস বা ১৫ দিন আগে ব্যবস্থা নিলে এর সুফল ভোক্তারা পাবে না। বাজারে খোলা তেল পাওয়া গেলেও ভেজালের ভয়ে অনেক ভোক্তা খেতে চায় না। আবার অনেকে এটি খেতে অভ্যস্ত না হওয়ায় খোলা তেল কিনতে আগ্রহী না।