বিশ্ব ইজতেমাকে ঘীরে প্রশাসনের দারস্থ হলেন কয়েক হাজার সাদপন্থী তাবলীগ জামাত বিশ্ব ইজতেমাকে ঘীরে প্রশাসনের দারস্থ হলেন কয়েক হাজার সাদপন্থী তাবলীগ জামাত - ajkerparibartan.com
বিশ্ব ইজতেমাকে ঘীরে প্রশাসনের দারস্থ হলেন কয়েক হাজার সাদপন্থী তাবলীগ জামাত

4:04 pm , December 2, 2024

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ পবিত্র হজের পরে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমাকে এবারও দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। টুঙ্গীর তুরাগ নদীর পাড়ে ৩১ জানুয়ারি থেকে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব চলবে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এতে নেতৃত্ব দেবেন শূরায়ী নেজাম বা জুবায়ের পন্থী জমায়েত। এরপর দ্বিতীয় পর্ব ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি সাদপন্থীদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এরই ধারাবাহিকতায় দেশব্যাপী তাবলীগ জমায়েতের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে দু’পক্ষের ভিতরেই। তবে প্রচারণা ও কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন বরিশালের সাদপন্থী জমায়েত। নগরীর চৌমাথায় অবস্থিত নূর মসজিদ বা মার্কাজ মসজিদে থাকা মাওলানা সাদ এর অনুসারীরা বরিশালের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনার এর মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর দুই দফা দাবীতে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে-কোনো রকম যৌক্তিক কারণ ছাড়াই দাওয়াত ও তাবলীগের বিশ্ব আমীর হযরত মাওলানা সাদ (দা.বা.) বাংলাদেশে আসতে পারছেন না। বিগত ৭ বছর যাবৎ আমরা কোরআান ও হাদিসের আলোকে উনার মূল্যবান বক্তব্য শোনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। অথচ তিনি ইতোপূর্বে বিশ্ব ইজতেমার প্রধান বক্তা ছিলেন এবং আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করতেন। তিনি বাধাহীনভাবে সারা বিশ্বে তাবলীগের কাজে সফর করে চলেছেন। তাই এবছর মাওলানা সা’দ (দা.বা.) যাতে বাংলাদেশে আসতে পারেন সেজন্য জোর দাবী জানাচ্ছি। বিগত ৭ বছর যাবৎ শুরাই নেজাম নামধারী ব্যক্তিবর্গ আমাদের মূলধারার সাথীদের দাওয়াতের কাজ বন্ধ করার জন্য বিভিন্নভাবে মারধর, হত্যা ও জুলুম-নির্যাতন এবং কুৎসা রটনা ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। যা ইসলামি শরিয়ত, বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের সুস্পষ্ট লংঘন। তাই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠুভাবে বজায় রাখার স্বার্থে দেশের সকল মসজিদে বাধাহীনভাবে তাবলীগের কাজ পরিচালিত হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট আদেশ জারির জন্যও দাবী জানানো হয়েছে।
সোমবার সকাল সাড়ে দশটায় প্রথমে পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে এবং পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ, বরিশাল জেলার পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর এই স্মারকলিপি পেশ করা হয়। এতে সাক্ষর করেছেন মাওলানা বেলায়েত হোসেন, মাওলানা ফোরকান, মাওলানা মামুন, মুফতি মাহমুদ, মাওলানা আবু তালহা, মুফতি মাওলানা  হাবিবুল্লাহ, মাওলানা সুলায়মান রুমী প্রমূখ। এসময় শফিকুল আলম খান, মোজাম্মেল হক, শাজাহানসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপি পেশ শেষে জেলা প্রশাসনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মাওলানা বেলায়েত হোসেন বলেন, দাওয়াত ও তাবলীগের কার্যক্রম সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও শাত্তিপুর্ণ। আজ থেকে প্রায় একশ বছর আগে ভারতের দিল্লীস্থ নিজামুদ্দীন বাংলাওয়ালী মসজিদ হতে হযরত মাওলানা ইলিয়াহ (রহ:) রসুলুল্লাহ (সাঃ) এবং সাহাবা (রাঃ) এর তরিকার অনুসরণে এ মেহনত শুরু করেন। বর্তমানেও উক্ত নিজামুদ্দীন বিশ্ব মার্কাজ মসজিদ হতে বিশ্ব আমীর হযরত মাওলানা সাদ কান্দলবী (দাঃ বাঃ) এর মাধ্যমে এটি সমগ্র বিশ্বে পরিচালিত হচ্ছে এবং ক্রমাগত প্রচার-প্রসার লাভ করছে। নিজামুদ্দিন বিশ্ব মার্কাজকে যারা অনুসরণ করছেন তাঁরাই আসল তাবলীগওয়ালা।
দাওয়াত ও তাবলীগের বিশ্ব আমীর হযরত মাওলানা সাদ (দাঃবাঃ) সম্পর্কে দেওবন্দ মাদ্রাসাকে উদ্ধৃত করে অযাচিতভাবে  শুরাই নেজাম বা আলমী গুরা (মাওলানা জুবায়ের গ্রুপ) পন্থীগণ এবং তাদের প্ররোচনায় কিছু আলেম অসত্য তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। প্রকৃত বিষয় হলো ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসার কিছু ব্যক্তির সাথে মাওলানা সাদ এর মত পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছিল। বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে মর্মে দেওবন্দ মাদ্রাসার সর্বোচ্চ কর্ণধার বিশ্ব বরেণ্য আলেম হযরত মাওলানা আরশাদ মাদানী (দাঃবাঃ) গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে এসে স্পষ্টভাবে তা জানিয়ে গেছেন। তার অডিও রেকর্ড আমাদের সংরক্ষণে আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দেওবন্দ মাদ্রাসা কখনোই হযরত মাওলানা সাদ (দাঃবাঃ) কে আমীর মান্যকারীদের মসজিদে আমল বন্ধ করা বা বাধা দেওয়ায় কথা বলেননি। বরং দেওবন্দ মাদ্রাসার ৬৯৫১৮ নং ফতোয়া হলো- নিজামুদ্দীন মার্কাজওয়ালাদের যে গোমরাহ বলবে সে নিজেই গোমরাহ। এছাড়া দেওবন্দ মাদ্রাসার ৬৯১৫৮, ১৫৬১০১, ১৬৫৩৯৫, ১৫২৬৮৭ নং ফতোয়াসমূহে নিজামুদ্দীন মার্কাজের অনুসারীদের মসজিদে আমল করতে বাধা দেওয়াসহ তাদের ব্যাপারে আপত্তিকর কথা বলার ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। দেওবন্দ মাদ্রাসার ওয়েবসাইটে ফতুয়াসমূহ রয়েছে। অপর বিশ্ব বরেণ্য আলেম পাকিস্থানের হযরত মাওলানা মুফতি ত্বকী উসমানী (দাঃবাঃ) গত অক্টোবরে সৌদী আরবে অবস্থানকালে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন তাবলীগের উভয় পক্ষই হক। তাহলে আসল তাবলীগওয়ালাদের মসজিদে আমল বন্ধ করার জন্য যারা অপতৎপরতা চালাচ্ছে তারা ইসলাম দরদি নয় বরং সন্ত্রাসী বলে উল্লেখ করেন বক্তারা।
এর আগে গত ৫ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ থেকে তাবলীগ জামাতের একাংশের তরফে সাদপন্থিদের নিষিদ্ধ করাসহ ৯ দফা দাবি জানানো হয়েছে। ‘ওলামা-মাশায়েখদের ইসলামি মহাসম্মেলন’ থেকে এসব দাবি তুলে ধরেন শায়খুল হাদিস পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। এই সম্মেলনে জমায়েত হন তাবলীগের অপর পক্ষ জুবায়েরপন্থিরা, যারা নিজেদের ‘শুরায়ে নিজাম’ পরিচয় দিয়ে থাকেন।
তার আগেরদিন ৪ নভেম্বর সোমবার দুই পক্ষকে নিয়েই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সভার উদ্যোগ নেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সেখানে সাদপন্থিরা এলেও অন্যরা আসেননি। ওই বৈঠকে এবারও দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। আগে এক মঞ্চ থেকে একবারই বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন হতো। কিন্তু দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভি এবং বাংলাদেশের কাকরাইল মারকাজের মাওলানা জুবায়ের আহমদের অনুসারীরা নিজেদের মধ্যে বিভেদে জড়িয়ে ২০১৯ সাল থেকে এই ইজতেমা মাঠে বিভক্তি টেনে আনেন।। এক পর্যায়ে দুই পক্ষ বিশ্ব ইজতেমা দুইবারে করার সিদ্ধান্ত নেন। মাঝে কোভিড মহামারীর কারণে ইজতেমা দুই বছর বন্ধও রাখা হয়। পরে ২০২২ সাল থেকে দুই পর্বে ইজতেমার আয়োজন হচ্ছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT