3:38 pm , November 27, 2024
১৫ বছর আওয়ামীলীগের সাথে যুক্ত থেকে এখন বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আওয়ামীলীগ আমলে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে লুটপাট করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতকারী মেকানিক সৈয়দ মহিউদ্দিন পুরোদস্তুর বিএনপি হতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আওয়ামীলীগ আমলে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সৈয়দ মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কর্মীসভা। মহিউদ্দিনকে সভাপতিত্ব করতে দেখে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
এছাড়া মহিউদ্দিন পানি উন্নয়ন বোর্ডের যান্ত্রিক বিভাগে মেকানিক পদে কর্মরত থাকলেও গেল স্বৈরশাসকের আমলে মুলাদী উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে গ্রাম রক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প
নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর মহাপরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে বরিশাল যান্ত্রিক বিভাগের কেন্দ্রীয় গুদাম থেকে রাতের আধারে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি সরিয়ে নেয়ারও।
মঙ্গলবার মেকানিক মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হলে আলোচনায় আসেন মহিউদ্দিন। কারণ গেল ১৬টি বছর আওয়ামীলীগের সাথে মিলেমিছে লুটপাট করেছেন তিনি। ওই সময় তাকে দলীয় কোন কর্মকান্ডেও দেখা যায়নি। তিনি নিজের আখের গোছাতেই বেশী ব্যস্ত ছিলেন। এখন আবার নতুনভাবে বিএনপি সাজতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে মহিউদ্দিন ওই সভা ডাকেন। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বরিশাল মহানগর শ্রমিকদলের সভাপতি ফয়েজ আহমেদ খানসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন শাহ আলম শাহিন ও আতাহার আলী। অভিযোগের কপি বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলী এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের কাছে প্রেরণ করা হয়।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, সৈয়দ মহিউদ্দিন মেকানিক পদে চাকরির সুবাধে বরিশাল যান্ত্রিক বিভাগের কেন্দ্রীয় গুদাম হতে রাতের আধারে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নিয়ে যায় এবং বরিশাল সদর আসনের সাবেক এমপি ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এর প্রভাব খাটিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জিম্মি করে কার্যাদেশ ইস্যু করতে বাধ্য করতেন।
কাজের মধ্যে রয়েছে : মুলাদী উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর রক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প। মেসার্স রূপালী কনস্ট্রাকশন নামের ২০১৮ সালে ৩টি প্যাকেজে ১০ কোটি ৩১ লাখ ২০ হাজার ২৫৬ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১৯ সালে সালে আহমেদ নূর হোসেন জেভি নামের লাইসেন্সের বিপরীতে ৪টি প্যাকেজে মেঘনা নদীর ভাঙ্গন হতে উলানিয়া গোবিন্দপুর রক্ষা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৭২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৬ হাজার ৪১৬ টাকা। ২০২২ সালে মেসার্স হাসান এন্ড ব্রাদার্সের বিপরীতে দুর্গাপাশা এলাকা রক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয় ৪১ কোটি ৩৭ লাখ ৭৫ হাজার ৭০৮ টাকা। এছাড়া জরুরী মেরামত বাবদ জেআর এন্টারপ্রাইজ এর বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয় ২২ লাখ টাকা। কাজগুলো নামমাত্র বাস্তবায়ন করে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে ধরা হয় অভিযোগপত্রে। এতে আরো উল্লেখ করা হয় মহিউদ্দিন তার স্ত্রী জাকিয়া আক্তার ও ছেলে সৈয়দ মাইনুল ইসলাম এর ব্যাংক হিসাবে টাকা লেনদেন করেন। মহিউদ্দিন ঢাকার উত্তরায় ৩ কোটি টাকা দিয়ে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ক্রয় করেন। বরিশালের বিভিন্ন স্থানে তার স্ত্রী ও ছেলের নামে জমি রয়েছে। আছে তাদের হিসাব নম্বরে কোটি কোটি টাকা গচ্ছিত। যান্ত্রিক শাখায় ২০/২২ বছর কর্মরত থাকায় বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাফিয়া হয়ে উঠেছেন বলে আখ্যা দেয়া হয়। সৈয়দ মহিউদ্দিন আওয়ামীলীগ এর এমপি ও নেতাদের ব্যবহার করে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডে এর নির্বাহী প্রকৌশলী, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, উপ-সহকারি প্রকৌশলী এবং সাধারন কর্মচারীদের বদলিসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে মোটা অংকের টাকা ভাগিয়েছেন। ৩য় শ্রেণীর কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও আওয়ামীলীগ নেতা হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর সমমানের বাসা বরাদ্দ নেন।
সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের মেকানিক সৈয়দ মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, এ সকল অভিযোগ মিথ্যা। এর কোন ভিত্তি নেই। এ ব্যাপারে মহানগর শ্রমিকদলের সভাপতি ফয়েজ আহমেদ খান বলেন, সৈয়দ মহিউদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির পদে রয়েছেন। একইভাবে মহানগর শ্রমিক দলেরও সদস্য তিনি। তার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তা সঠিক নয়।