3:27 pm , November 21, 2024
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ অভিজ্ঞ ডাক্তারের বদলীর কারনে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট আবার অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ন্যূনতম জটিল অগ্নিদগ্ধ রোগী এখানে আসা মাত্রই চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে না। যারা ভর্তি আছে তারাও ধুকছেন দিনের পর দিন।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে ঝালকাঠিতে লঞ্চে আগুন লাগার পর বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটটি অনেকটা গুছিয়ে ফেলা হয়। ঢাকা ও রংপুর থেকে বিশেষজ্ঞদের বরিশালে পদায়ন দিয়ে পুরোদমে শুরু হয় দগ্ধদের চিকিৎসা দেয়ার কাজ। কিন্তু সম্প্রতি দক্ষ চিকিৎসকরা পদোন্নতি পেয়ে ঢাকা চলে যাওয়ায় আবার মুখ থুবড়ে পড়েছে এই ইউনিটটি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ তথ্য স্বীকার করে বলছেন বার্ন ইউনিটটিই এখন তাদের কাছে বার্নিং ইস্যু।
শেবাচিম হাসপাতালের সহকারি পরিচালক মোঃ রেজওয়ানুর আলম বলেন, ঝালকাঠিতে ভয়াবহ লঞ্চ দুর্ঘটনার পর থেকে বার্ন ইউনিট নিয়ে আমরা নড়েচড়ে বসি। কিন্তু সম্প্রতি এই ইউনিটের দুজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পদোন্নতি পেয়ে অন্যত্র যোগদান করায় অনেকটা বিপাকে রয়েছি। একজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে এখন ইউনিটটি চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সামনে শীত আসছে, এসময় বার্ণ রোগী বাড়তে পারে। পর পর দুজন সিনিয়র ডাক্তার চলে যাওয়ায় আমরা বিপদে আছি।
২০১৫ দালের মার্চ মাসে চালু হওয়া বার্ন ইউনিনে এর আগে ডাক্তার শূন্যতার কারনে ২০২০ সালের ১৮ মে বন্ধ হয়ে যায়। ২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঝালকাঠিতে লঞ্চে অগ্নিকান্ডের পর এখানে ৮১ জন দগ্ধ রোগী ভর্তি হলে পুনরায় বার্ন ইউনিট চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। ঢাকা ও রংপুর থেকে একজন সহযোগী অধ্যাপক, একজন রেজিস্টার ও একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট যোগদান করার পর পুনরায় চালু হয় এই ইউনিট। কিন্তু এ ইউনিটের দু’জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের বদলী হলে আবার মুখ থুবড়ে পড়ে এ ইউনিট। এখন রান্নায় দগ্ধ কিংবা চুলার আগুনে ফোস্কা পড়ে দগ্ধ হয়ে যারা ভর্তি হচ্ছে তাদেরও সেবা এখানে সুনিশ্চিত নয়। রোগীর স্বজনদের দাবি এমন স্পর্শকাতর স্বাস্থ্য সেবা ইউনিটে নতুন ডাক্তার না দিয়ে কোন বদলী করা ঠিক হয়নি।
রোগী ও তাদের স্বজনরা বলছেন, এটা দুঃখজনক যে বার্ন ইউনিটের রোগী এখন রাখা হচ্ছে শিশু সার্জারিতে। ইউনিটে সিট নেই, ডাক্তার নেই, শুধু নেই নেই। দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার বার্ন রোগীর আল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই।
এ ইউনিটে চিকিৎসারত এক রোগী বলেন, গরম পানি পড়ে আমার বাচ্চার পা পুড়ে গেছে। কিন্তু তাকে ভর্তি দিয়েছে শিশু সার্জারি বিভাগে। সার্জারির ডাক্তার বলতে পারে না কি ওষুধ দিতে হবে। সে নার্সকে জিজ্ঞেস করতে বলে। আমরা বার্ন ইউনিটেতো ঠাঁই পাইনি। পেয়েছি এখানে, তাও বারান্দায়।
বার্ণ ইউনিটে প্রফেসর, রেজিস্টার, ২জন সহকারি রেজিস্টার ও ইএমওসহ ৮ জন ডাক্তার ও অন্তত ১০জন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারির পদ শূন্য থাকায় রোগীরা পুড়ছে বাড়তি অনলে। একই সাথে এখানে কর্মরত ২৩ জন নার্সের মধ্যে ২১ জনেরই কোন প্রশিক্ষন না থাকায় সেবা ক্ষেত্রে বিঘœ সৃস্টি হচ্ছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেন -এই হাসপাতালে পৃথক বার্ন ইউনিট গঠনের পর এমন সমস্যা আর থাকবে না।
শেবাচিম হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য যে মাপের বার্ন ইউনিট থাকা দরকার তা আমাদের নেই। এখন একজন মেডিকেল অফিসার, ইন্টার্ন ও নার্সদের দিয়ে এ ইউনিট চালিয়ে রাখা হচ্ছে। একটি পৃথক বার্ন ইউনিট নির্মানের কথা চলছে সেটা হলে আর সমস্যা থাকবে না। তবে সেটা কবে হবে তা জানি না।
উল্লেখ্য বরিশাল বিভাগের একমাত্র এই বার্ন ইউনিটে শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৭০০০ অগ্নিদগ্ধ সেবা পেয়েছেন। এখানে অপারেশন করা হয়েছে অন্তত ২ হাজার জনের।