3:55 pm , November 20, 2024
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ১৮০ কার্যদিবসে মামলা নিস্পত্তির কথা থাকলেও বরিশাল দ্রুত বিচার আদালতে সাড়ে ২১ বছর আগের মামলা এখনো বিচারাধীন আছে। উচ্চ আদালতের স্থগীতাদেশ ও সাক্ষি অনুপস্থিতির কারনে এমন মামলার নিস্পত্তি হচ্ছে না। এ নিয়ে আইন কর্মকর্তা ও পুলিশের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। বরিশাল কলেজের সাবেক ভিপি ফারুক হত্যা মামলায় ২০ জনকে আসামি করে দায়ের করা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসে ২০২৩ সালে। সেই থেকে মামলাটি এখনো একই আদালতে বিচারাধীনই আছে। উচ্চ আদালতের বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও সাক্ষিদের হাজির করতে না পারায় বছরের পর হাজিরা দিতে হচ্ছে আসামিদের। ইতিমধ্যে এ মামলার একজন আসামি মারাও গেছেন। এভাবে ২০১০ ও ২০১৫ সালের আরো দুটি মামলা ধীর কার্যক্রমের শিকার হয়েছে। উভয় মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ জটিলতা রয়েছে। এতো সময় ধরে বিচারের প্রতীক্ষায় থাকা আসামিরা এখন যেন হাপিয়ে উঠেছে।
ফারুক হত্যা মামলার আসামিদের ভাষ্য, আমরা কোর্টে বছরের পর বছর আসি-যাই, কষ্ট ভোগ করে আমাদের পরিবার। অপরাধি হলে বিচার করে দিন। হাজিরা দিতে দিতে মামলার একজন আসামি অসুস্থ হয়ে মারাও গেছেন। দ্রুত বিচারের এই আইন শুধু কাগজে কলমে আছে আসলে আদালতে বাস্তবায়ন হয় না। আর যেন কেউ এমন মামলায় আমাদের মতো দুর্ভোগে না পড়ে।
তাদের মতে মামলায় ফাঁসি হলে তাও মেনে নিতাম। আশা করি বেকসুর খালাস পাবো। কিন্তু খালাস পেলে বলবো ফিরিয়ে দাও আমার ২৩টি বছর। হাজিরা দিতে দিতে এ মামলার অনেক আসামি অসুস্থ হয়ে গেছে।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয় ২০০২ সালের ২০ নভেম্বর। বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে ৩৪১ টি মামলা। এরমধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মামলা ৬ টি, বিশেষ দায়রা মামলা ৯২টি, ফৌজধারি আপিল মামলা ১৯২ টি এবং ফৌজদারি রিভিশন মামলা ৫১ টি। সংশ্লিস্ট আইনজীবীদের মতে দ্রুত বিচার আদালতে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলা নিস্পত্তি হবার কথা। অনেক ক্ষেত্রে বিচারকের স্বল্পতা এবং না জানিয়ে সাক্ষি করায় সাক্ষিদের সাক্ষ্য দিতে না আসার কারনে মামলাগুলো ঝুলে থাকতে পারে যেটা কারোরই কাম্য নয়। এ ক্ষেত্রে বিগত দিনে যারা মামলা পরিচালনায় সরকারি দায়িত্বে ছিলেন তাদের গাফলতিও অন্যতম কারন। সিনিয়র আইনজীবী আবুল কালাম শাহিন বলেন, আসলে দ্রুত বিচার বলতেই মামলাটি দ্রুত সমাধানের দিকে যাবার কথা। বরিশালে এই আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৪১ টি। মামলার দীর্ঘসূত্রিতায় আসামিদের অনেক দুর্ভোগ হয়। সাক্ষিরা আসতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় যে রায় ১৮০ দিনে হবার কথা তার বাস্তবায়ন হয়না। মামলায় কিছু মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়, সাক্ষিদের না জানিয়ে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে মামলাও নিশ্চল হয়ে পড়ে। যত দ্রুত সম্ভব এ সমস্যার সমাধান দরকার।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি মহসিন মন্টু বলেন, মামলার দ্রুত নিস্পত্তির জন্যই এই আদালত তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আলোচিত মামলাগুলো। বিগত দিনে যারা এই আদালতের পিপি ছিলেন তাদের গাফেলতির কারনেই মামলাগুলো বিলম্বিত হয়েছে। এই আদালতের পিপি হিসেবে দ্রুত মামলার নিস্পত্তিতে যা যা সহায়তা দরকার আমি তা করবো।
এ পর্যন্ত বরিশাল দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসা ৬০৭টি মামলার মধ্যে গত ১০ মাসে নিস্পত্তি হয়েছে ২৬৬ টি মামলা। বরিশাল আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটরের মতে পুলিশ যথাসময়ে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়না বলেই দীর্ঘসূত্রিতা হচ্ছে। বিগত সময়ে পুলিশ তার কাজ সময়মতো করেনি। তবে এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। খুব অল্প মামলা এখানে আছে যার সমাধানও দ্রুত হবে।
বরিশালের পিপি মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বেশিরিভাগ রাজনৈতিক মামলাগুলোই দ্রুত বিচারে যায়। বর্তমানে এসব অনেক মামলাই নিস্পত্তি হবার পথে। এখানে আর বেশি মামলার জট নেই। এছাড়া আপাতত এই কোর্টে বিচারক নেই। এ জন্যও কিছু বিলম্ব হতে পারে। বিগত সময় পুলিশ তাদের কাজ ঠিকমতো করেনি। পুলিশ যদি যথা সময়ে যথার্থভাবে তাদের রিপোর্ট প্রদান করে তাহলে বিলম্বিত হবার কোন কারন নেই।
তবে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বিলম্বের কথা অস্বীকার করে বলা হয়েছে পুলিশ তার দায়িত্ব যথা সময়ে পালন করে থাকে। নানা আইনী জটিলতায় মামলা বিলম্বিত হলে তার দায় পুলিশের নয় বলে দাবি করেছেন বিএমপি কমিশনার মোঃ শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, দ্রুত বিচার মামলার টাইম ফ্রেম মেনেই আমরা কাজ করে থাকি। অতিরিক্ত সময়ের দরকার হলে আদালতকে জানিয়ে আমরা যৌক্তিকভাবেই কাজ করে থাকি। কিন্তু এতো দেরি হবার কোন সুযোগ নেই। এসব মামলার পুলিশ রিপোর্ট হয়তো যথাসময়ে দেয়া হয়েছে কিন্তু বিচারিক প্রক্রিয়ায় এমন বিলম্ব হতে পারে। স্থগিতাদেশের ব্যাপারে পুলিশের কিছুই করার নেই।