3:38 pm , November 18, 2024
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ সাবেক ফুটবলার জাকারিয়া পিন্টু আর নেই (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। খবরটি শোনামাত্র বরিশালে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নওগাঁর ছেলে হলেও বরিশালেই ছিলো তার ঘর। কিশোর যৌবন কেটেছে তাঁর বরিশালের নদী-জলে সাঁতার কেটে। এখানের মাঠেই ফুটবলে হাতেখড়ি জাকারিয়া পিন্টুর।
জানা গেছে, বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীর নিয়ে অনেক দিন ধরে ঘরবন্দী ছিলেন। প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে যেতেন না স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু। গত ১৭ নভেম্বর রবিবার হঠাৎ অসুস্থতা বাড়ায় তাঁকে ভর্তি করা হয় ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই ১৮ নভেম্বর বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ফুটবলার জাকারিয়া পিন্টু। তাঁর নামের সাথেই মিশে আছে সম্মান ও শ্রদ্ধা। ক্রীড়াঙ্গনের একজন খাঁটি মানুষ হিসেবে তাঁর পরিচয় সর্বজন স্বীকৃত বলে জানালেন বরিশালের ক্রীড়াবিদদের একজন আসাদুজ্জামান খসরু। তিনি জানান, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮ পুরো সময়টা জাকারিয়া পিন্টুর কেটেছে বরিশালে। তাঁর পিতা নাজিম উদ্দীন এর একটি ক্লিনিক এখনো রয়েছে সদর রোডে। যেটি তার ভাই পরিচালনা করছেন।
জানা গেছে সাবেক ফুটবলার জাকারিয়া পিন্টু দীর্ঘদিন ধরে হার্ট, লিভার ও কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। যে কারণে তাঁকে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল এবং ৮৫ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন তিনি। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) জাকারিয়া পিন্টুর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
বরিশালের ক্রীড়া সংগঠক ও ক্রীড়াবিদ আসাদুজ্জামান খসরু জানান, রোববার সন্ধ্যায় হার্টে ব্যথা হলে মাটিতে পড়ে যান। এরপর কিংবদন্তি এ ফুটবলারকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসেন ছেলে তানভির।
আসাদুজ্জামান খসরু বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বাংলার আপামর সাধারণ মানুষ শুধু অস্ত্র হাতেই নয়, তারা লড়েছেন গান, কবিতা ও ফুটবল পায়ে নিয়েও। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ফুটবলের জাদু দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরির কাজ করেছিল ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’।সেই দলের অকুতোভয় অধিনায়ক ছিলেন জাকারিয়া পিন্টু। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে জাকারিয়া পিন্টু ও তার নেতৃত্বাধীন ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের’ নাম অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে চিরকাল। তবে শুধু স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে নন, একজন অসাধারণ ফুটবলার, অধিনায়ক এবং একজন খাঁটি মানুষ হিসাবেও স্মরণীয় হয়ে থাকবেন সাবেক এই ডিফেন্ডার। ১৯৭১ সালে তার নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ভারতের নদীয়াসহ বিভিন্ন রাজ্য ও জেলায় ১৬টি ম্যাচে অংশ নিয়ে ১২টিতে জিতেছিল। ওই ম্যাচগুলো খেলে যে অর্থ সংগ্রহ হয়েছিল, তা তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধ তহবিলে দিয়েছিলেন তারা।
১৯৭২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা স্টেডিয়ামে রাষ্ট্রপতি একাদশ ও মুজিবনগর একাদশের মধ্যে প্রথম ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। মুজিবনগর একাদশের অধিনায়ক ছিলেন এই ডিফেন্ডার। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রথম অধিনায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ১৯তম মারদেকা ফুটবলে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেন। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল, বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক এবং একজন দুর্দান্ত খেলোয়াড় হিসাবে তিনি ইতিহাস হয়ে আছেন। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে সংগঠকও ছিলেন। ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানের পরিচালক পদেও কাজ করেছেন সাবেক এই তারকা ফুটবলার।
যেহেতু তিনি তাঁর জন্মস্থান নওগাঁর তুলনায় বরিশালে বেশি সময় অতিবাহিত করেছেন, তাই বরিশালের ক্রীড়াঙ্গনেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তাঁর মৃত্যুর সংবাদে বরিশাল ক্রীড়াঙ্গনের প্রায় সবাই শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ক্রীড়া সংগঠক মঞ্জুরুল আলম ফেরদৌস, টিটন ও মিলনসহ কয়েকজন ছুটে গেছেন ঢাকায়। সেখানে তাঁর নামাজের জানাজায় অংশ নেবেন তারা।