3:38 pm , November 18, 2024
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় গবেষনাগারের খাবার পানি পরীক্ষার সবকটা যন্ত্র দীর্ঘদিন থেকে অকেজো থাকায় পানির ব্যাক্টেরিয়া পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। বিসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি এমন অবস্থাজনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। খুব শীঘ্রই এ অবস্থার পরিবর্তন হবে এরকম কোন আভাসও মিলছে না।
বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট গোলাম কিবরিয়া জানান, প্রায় তিনবছর ধরে বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের পানি পরীক্ষার যন্ত্র মাল্টি মিটার, অটোক্লেভ ও ইনকিউবিটার্সহ সবকটা অচল হয়ে পড়ে আছে। এ কারনে নিরীক্ষা করা যাচ্ছে না খাবার পানির জীবানু। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে বর্তমান পরিস্থিতিতে পানি পরীক্ষার সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ইতিপূর্বে যখন পানি পরীক্ষা করা হতো তখন প্রায়শই নগরীর এবং উপজেলা পর্যায়েও হোটেল রেঁস্তোরার খাবার পানিতে পাওয়া যেতো অতিমাত্রায় ক্লোরিফ্রম ব্যাক্টেরিয়া। পরীক্ষার যন্ত্র বিকল থাকায় বর্তমানে সরবরাহকৃত পানির ক্ষতিকর দিক জানা যাচ্ছে না
পরিবেশ অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের ল্যাবরেটরিতে সব ধরনের পানির মান পরীক্ষা করা হতো। বর্তমানে পানি পরীক্ষার যন্ত্রপাতিগুলো কিছুটা অচল অবস্থায় থাকায় এখানে গবেষনাকাজ বন্ধ আছে। নতুন প্রকল্পের আওতায় আমারা নতুন যন্ত্রপাতির চাহিদাপত্র প্রেরন করেছি। এগুলো এলে আমরা কাজ শুরু করতে পারবো।
আগে প্রতি সপ্তাহে বরিশাল মহানগরসহ বিভাগ পর্যায়ে হোটেল রেঁস্তোরা, নলকূপ, পুকুর ও গৃহস্থালী থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে এর গুনগত মানের অবস্থা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হতো পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন থেকে বলা হয়েছে দীর্ঘদিন থেকে পানির প্রতিবেদন তারা পাচ্ছেন না। কিছু নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছেন। এদিকে পানি বিষয়ে কিছু না জানার কারনে ব্যবস্থা নিতে না পারায় নগরে পানিবাহীত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্য কিছুটা হলেও সংকটে রয়েছে।
বিসিসির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আমরা নিয়মিত পানি পরীক্ষার রিপোর্ট না পেয়ে নিজেরাই নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকা পাঠাচ্ছি। কিন্তু ঢাকা থেকে পানি পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়া অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা আসলে এক প্রতিষ্ঠান অন্য প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল। ইতিমধ্যে নগরীর বস্তি এলাকায় পানিবাহীত রোগ চুলকানির মাত্রাটা বেড়ে গেছে। পানি দূষণে এ রোগ হয়েছে। এ অবস্থায় পানি পরীক্ষার কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এদিকে খাবার পানি ব্যবহারে সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন-পানি পানের নামে তারা কি পান করছেন তা কেউই জানেন না। তারা এ ব্যাপারে সরাসরি দায়ী করছেন পরিবেশ অধিদপ্তরকে। গৃহস্থালীদের মতে গত এক দশকেও বাসাবাড়ি থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। তাদের মতে বরিশালের মানুষের জন্য এটা সবচেয়ে বড় দু:সংবাদ। তারা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বাইরে খাবার খান এমন কয়েকজন বলছেন, আমরা নিয়মিত হোটেলে খাবার খাই। এসময় যে পানি দেয়া হয় তাতো চোখে দেখছি স্বচ্ছ। কিন্তু এ পানি পান করে প্রায়শই অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরিবেশ অধিদপ্তর এ পানি পরীক্ষা করলে আমাদের জন্য ভালো হতো।
হোটেলে খাই নিয়মিত, পানি কেমন তা জানিনা। মাঝে মধ্যেই পেটের পীড়া হয়। এই পানির কারনেই এটা হচ্ছে। হোটেল মালিকরা বলছেন, আমরাতো খদ্দেরদেরকে পরিস্কার পানিই দিয়ে থাকি। কিন্তু এ পানির মধ্যে কি আছে তাতো আমরা জানিনা। আগে পরিবেশ অধিদপ্তর থাকে এসে পানির নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যেতো, খারাপ পানি হলে জরিমানাও করতো। এখন তারাও আসে না। শুনেছি তাদের মেশিন নষ্ট। বরিশাল মহানগরীতে ছোট বড় তিন হাজার হোটেল রেঁস্তোরা ও খাবার দোকানে লক্ষাধিক মানুষ প্রতিদিন খবার খাচ্ছেন। এখানে রয়েছে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ অধিবাসী। এদের সবারই খাবার পানির সাথে প্রতিদিন চলতে হচ্ছে। এ অবস্থায় পানির মান নির্ণয় বন্ধ থাকায় শংকিত সবাই। যদিও অফিস পরিবর্তনের দোহাই দিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে নতুন যন্ত্রপাতি এলে আবার গবেষনা শুরু হবে, তবে তা কবে নাগাদ এর কোন উত্তর দিতে পারেননি। বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে নতুন ভবনে গবেষনাগারের জন্য স্থান নির্ধারন করেছি। প্রকল্প থেকে যন্ত্রপাতি এলে আমরা তা স্থাপন করে খাবার পানির দূষণ নির্ণয়ের কাজ শুরু করবো। বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।