কৃষি ও জনস্বাস্থ্যে বিরুপ প্রভাব অব্যাহত কৃষি ও জনস্বাস্থ্যে বিরুপ প্রভাব অব্যাহত - ajkerparibartan.com
কৃষি ও জনস্বাস্থ্যে বিরুপ প্রভাব অব্যাহত

3:50 pm , November 16, 2024

হেমন্তের শেষভাগেও বরিশালে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ওপরে

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ হেমন্তের মধ্যভাগ পেরিয়েও বরিশাল অঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ওপরে। পাশাপাশি মেঘনা অববাহিকা সহ পুরো বরিশাল অঞ্চলজুড়ে শেষরাতে হালকা থেকে মাঝারী কুয়াশায় দিগন্ত ঢেকে যাচ্ছে। অগ্রহায়নের সকাল থেকে বরিশালজুড়ে যেখানে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন ধান কাটার ধুম লেগে যেত সেখানে এবার ফসল অনেকটা থোর পর্যায়ে। বর্ষায় বৃষ্টির আকালের পরে শরৎ ও হেমন্তজুড়ে অতি বর্ষণে আমন আবাদ বিলম্বিত হয়েছে। আবহাওয়ার এ বৈপরিত্যে জনস্বাস্থ্যের সাথে কৃষি ক্ষেত্রেও নানা ধরনের বিরুপ প্রভাব অব্যাহত রয়েছে। এবার ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’এর পরে গত মাসের শেষে আরেক ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ দক্ষিণ উপকূল থেকে প্রায় ৫শ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম দিয়ে উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করলেও এর প্রভাবে অতিবর্ষণে বরিশাল অঞ্চলের আগাম শীতকলীন সবজির আবাদ বিলম্বিত হয়েছে।
গত ভাদ্রের পূর্ণিমায় ভর করে অতি বর্ষণে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজির প্রায় পুরোটাই বিনষ্ট হয়েছে। হেমন্তের  অকাল বর্ষণ আগাম শীতকালীন সবজির আবাদকেও বিলম্বিত করেছে। ফলে সবজির বাজারে এর বিরুপ প্রভাব পড়েছে । আবহাওয়ার এ আচরনে বরিশাল অঞ্চলজুড়ে জ¦র ও সর্দি সহ ঠান্ডাজনিত নানা সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়োবৃদ্ধ সহ নানা বয়সের মানুষ। ঘরে ঘরে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতেও এ ধরনের রেগীর আগমন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলেছে।
হেমন্তের শেষ প্রান্তেও স্বাভাবিকের অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে বরিশাল অঞ্চলজুড়ে এডিস মশাবাহী রোগ ডেঙ্গুর দাপট অব্যাহত রয়েছে। পুরো বছরজুড়ে যে পরিমান রোগী সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন অক্টোবরেই তার প্রায় সমান ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১৮ জনের মৃত্যু হলেও শুধু অক্টোবরেই মারা গেছেন আরো ১৭ জন। চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে বরিশাল অঞ্চলের সরকারি হাসপাতালগুলোতে আরো প্রায় দেড় হাজার ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যু হয়েছে ১২জনের।
এবার বর্ষা মৌসুমজুড়ে বৃষ্টির আকালের ফলে ফসলের আবাদ নিয়ে বিপাকে পড়েন কৃষিযোদ্ধারা। পুরো বর্ষা মৌসুমজুড়ে বৃষ্টির দেখা না মিললেও শরতের শেষপ্রান্ত থেকে হেমন্তের শেষভাগে অতিবর্ষণ কৃষিকে আরো ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। অথচ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বরিশাল উপকূল থেকে বিদায় হয়েছে প্রায় একমাস আগে।
চলতি নভেম্বরে বরিশালে সর্বোচ্চ স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২৯.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসের স্থলে মাসের শুরুতে তা প্রায় ৩৫ ডিগ্রীর কাছে থাকার পরে মধ্যভাগে এসে স্বাভাবিকের প্রায় ২ ডিগ্রী ওপরে রয়েছে। দিনের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ১৮.৮ এর স্থালে মাসের শুরুতে প্রায় ২৫ ডিগ্রী থাকলেও শনিবারে তা স্বাভাবিকের প্রায় ২ডিগ্রী ওপরে ছিল।
গত জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী মাসে বরিশালে কোন বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু মার্চে ৩০ ভাগ এবং এপ্রিলে ৮৬% কম বৃষ্টির পরে ঘূর্ণিঝড় রিমাল এ ভর করে মে মাসে স্বাভাবিকের প্রায় ৫০ ভাগ বেশী বৃষ্টি হয়। কিন্তু জুন মাসে প্রায় ৬০ ভাগ এবং জুলাই মাসেও স্বাভাবিকের প্রায় ৩১ ভাগ কম বৃষ্টির প্রভাব পড়ে বরিশালের ফসলের মাঠে। আবার ভাদ্রের পূর্ণিমায় ভর করে লাগাতার প্রবল বর্ষণে আগষ্ট মাসে ৬২% বেশী বৃষ্টিপাতে উঠতি আউশ ক্ষতির কবলে পড়ে। সেপ্টেম্বরেও স্বাভাবিকের প্রায় ৫২% বেশী বৃষ্টির পরে অক্টোবরে বরিশালে স্বাভাবিকের ৬২.১% বেশী, ২৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরেই ঘূর্ণিঝড় ও প্লাবনের সাথে অস্বাভবাবিক বজ্রপাত সহ অসময়ের অতিভারি বর্ষণের সম্মুখিন হচ্ছে পুরো বরিশাল সহ সংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চল। তবে প্রকৃতির এ বৈরী আচরনকে জলবায়ুর বিরুপ প্রভাব বলে মানতে চাচ্ছেন না আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। কেউ কেউ একই মৌসুমে ঘন ঘন আবহাওয়ার পরিবর্তনকে ‘জলবায়ুর ভারসাম্যহীনতা’ বলে মনে করে প্রকৃতির এ অস্বাভাবিক আচরনকে জলবায়ুর ধারবাহিকতার সাময়িক দৃশ্যমান বিচ্যুতি বলেও দাবী করছেন।
বরিশাল অঞ্চলজুড়ে হেমন্তের মধ্যভাগ পেরিয়ে শেষ রাতের কুয়াশার দাপট শীতের আগাম বার্তা দিলেও বেলা বাড়ার সাথে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ওপরে উঠে যাওয়ায় জনজীবনে অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। আবহাওয়া বিভাগের মতে হেমন্তের প্রায় শেষভাগে নভেম্বরে বরিশালে দিনের সর্বোচ্চ স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২৯.৪ ডিগ্রী থাকার কথা। কিন্তু মাসের শুরুতে তা প্রায় ৩৫ ডিগ্রীতেও উন্নীত হয়েছে।
অপরদিকে এবার মূল বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির আকালে বরিশাল অঞ্চলে ২ লাখ ১০ হাজার হেক্টরের স্থলে মাত্র ১ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টরে সীমিত থাকলেও ঘূর্ণিঝড় রিমাল এর প্রভাবে আরো আড়াই হাজার হেক্টরের ধান সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়েছে। ফলে এবার প্রায় ১৪ লাখ টন উদ্বৃত্ত বরিশাল কৃষি অঞ্চলে আউশের উৎপাদন ৫ লাখ ৭০ হাজার হেক্টরের স্থলে মাত্র ৩.৪৫ লাখ টনে নেমে এসেছে। যা এ অঞ্চলের সাথে সারা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় জন্য একটি বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন কৃষিবীদরা।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, এবার মূল বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির আকালে আউশ বীজতলা তৈরী ও রোপন যেমনি বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি গত মে মাসের শেষভাগে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’এ ভর করে প্রবল বর্ষণে রোপা আউশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশি^নের পূর্ণিমার প্রভাবে অতি বর্ষণ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা সঞ্চালনশীল মেঘমালার প্রবল বর্ষণে উঠতি আউশ ধানের আরো একদফা ক্ষতি হয়েছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT