4:10 pm , November 13, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কামালের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে আওয়ামী লীগ পরিচয়দানকারী কামাল এখন নতুন মোড়কে জামায়াত-বিএনপির সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন, যা দেখে হতবাক-বাকরুদ্ধ সবাই। নানা অপকর্মের হোতা এই কামালের হাত থেকে রেহাই মেলেনি আপন ভাগ্নে মুসারও। হামলা-মামলা, জেল-জরিমানা দিয়ে পথে বসনো হয়েছে মুসাকে। অপরাধ ছিলো একটাই আপন মামা কামালকে ব্যবসার জন্য ১৫ লক্ষ টাকা ধার দিয়েছিলেন তিনি। আর সেই টাকা চাইতে গেলেই মুসার জীবনে নেমে আসে বিপদের কালো ছায়া। শুধু আপন ভাগ্নেকে নয়, কামালের কালো হাতের ছোবল থেকে নিস্তার মেলেনি প্রতিবেশী প্রবাসী তোফাজ্জেল হোসেনের। জানা গেছে, বাকেরগঞ্জ পৌরসভার সদর রোডে আফসার মার্কেটের বিপরীতে নিজের ক্রয়কৃত জমিতে স্থাপনা নির্মান করতে গেলে চাঁদা না পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেয় কামাল। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হয়েছে। সালিশে ওই প্রবাসীর কাজে কখনো বাঁধা দিবেন না আশ্বাস দিলেও পরে কথা রাখেননি। পরে ওই প্রবাসীর বিরুদ্ধে বাকেরগঞ্জ পৌরসভায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয় ধুরন্ধর কামাল। অভিযোগে ক্রয়কৃত জমির চেয়ে বেশী জমি দখল করে স্থাপনা নির্মানের কথা উল্লেখ করে পুনরায় হয়রানি শুরু করে। পরে বাকেরগঞ্জ পৌরসভার সুপারভাইজার নুর জামান সরেজমিনে গিয়ে উভয়পক্ষের দখলকৃত জমি পরিমাপ করেন। এতে প্রবাসী তোফাজ্জেল হোসেনের জমির পরিমান সামান্য কম আছে উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করেন প্রবাসী তোফাজ্জেল হোসেন পৌরসভার প্লান মেনে নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে পৌরসভার সুপারভাইজার নুর জামান বলেন, কামালের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরোজমিনে গিয়ে জমি পরিমাপ করে দেখতে পাই, প্রবাসী তোফাজ্জেল হোসেনের ক্রয়কৃত জমির পরিমানের চেয়ে দখলে কম রয়েছে। অভিযোগকারী কামালের জমির পরিমান বেশী। শুধু তাই নয়, কামালের স্থাপনার কোন বৈধ কাগজও দেখাতে পারেনি। পরে বিষয়টি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। কর্তৃপক্ষ কামালকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে পৌরসভায় স্ব-শরীরে উপস্থিত থাকার জন্য নোটিশ প্রদান করলেও তিনি বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে বাকেরগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রথমে আমি প্রবাসীর কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেই। এরপর সরোজমিনে তদন্ত করে শুনানির জন্য উভয়পক্ষকে পৌরসভায় স্ব-শরীরে উপস্থিত থাকার জন্য নোটিশ প্রদান করি। কিন্তু কামাল তার হার্টের অসুস্থতা দেখিয়ে ধার্য্য দিনে উপস্থিত ছিলেন না। পুনরায় দিন ধার্য্য করলেও কামাল বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে ফের অুনপস্থিত ছিলেন। পরে আমি প্রবাসী তোফাজ্জেল হোসেন’র অনুমোদিত প্লান যাচাই-বাছাই করে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেই। তবে পুনরায় কামাল যদি তাদের কাজে বাঁধা প্রদান করে সেক্ষেত্রে তারা আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারে। তিনি আরো বলেন, আমার টেবিল নিরপেক্ষ। আমি আইনানুযায়ী তদন্ত সাপেক্ষে প্রবাসীকে কাজের অনুমতি দিয়েছি। স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, সব সেক্টরে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সালিশ-দরবার, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার সভাপতি বিভিন্ন বাস ও সিএনজি স্ট্যান্ডে চাঁদা আদায়সহ সব সেক্টরে দুর্নীতি ও লুটপাট করে ১৫ বছরে কোটিপতি বনে গেছেন কামাল। এসব অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি মোসলেম সিকদারের ৮৫ লক্ষ টাকার জমি আত্মসাত করেছেন। পরে মোসলেম সিকদার কামালের বিরুদ্ধে মামলা দিলে তিনি একমাস কারাভোগ করেন। তারা আরো জানায়, জৈনিক বাপ্পী নামে এক ব্যক্তির ১০ লক্ষ টাকা কামাল আত্মসাত করেছে। শুধু তাই নয়, তার আপন ভাগ্নে মুসারও ১৫ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছে তিনি। এমনকি ভাগ্নে মুসাকে তিনি জেলও খাটিয়েছে। কামালের বড় ভাই বাবুলের মেয়ের সাথে মুসার বিয়েও হয়েছিল কিন্তু সেই বিয়েও টিকতে দেয়নি কামাল। এসব অভিযোগের বিষয়ে কামাল বলেন, ভাই জায়গা কি আমার বাপের, আমি বাঁধা দেব কেন? তাছাড়া ভাই আমি অসুস্থ। ঢাকা বারডেমে চিকিৎসা করিয়েছে। তাহলে পৌরসভায় আপনাকে উপস্থিত থাকার জন্য বারবার নোটিশ দিলেও কেন আপনি উপস্থিত থাকেননি জানতে চাইলে বলেন, তখন আমি অসুস্থ ছিলাম। তিনি বলেন, আমার প্রতিপক্ষরা আমার দেয়াল ভেঙে ফেলেছে, তারপরও আমি বাঁধা দেইনি। পরে আমি থানায় জিডি করলে বিষয়টি সমাধান হয়। এখন তারা তাদের জায়গায় স্থাপনা করছে আর আমি আমার জায়গায় আছি। তাহলে কেন তাদের নির্মানাধীন কাজে বাঁধা দেব। ভাগ্নের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, মুসা আমার বড় বোনের ছেলে। আমাকে নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করতে পারে তবে আমি ও’র অভিযোগের বিষয়ে কোন কিছুই বলবো না।