4:08 pm , November 7, 2024
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দীর্ঘ ১৭ বছর পর শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে সমাবেশ করলো বিএনপি। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এ সমাবেশের আয়োজন করেছিল বরিশাল জেলা দক্ষিণ বিএনপি। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে এখানে কোন ধরণের সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি বিএনপিকে। এত বছর পর এখানে সমাবেশ করতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা। সমাবেল উপলক্ষে সকাল থেকে শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্র্মীরা। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বের করা হয় বর্ণাঢ্য র্যালি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, জেলা বিএনপির আহবায়ক আবুল হোসেন খান এবং সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহীনের নেতৃত্বে বের হওয়া র্যালিটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শুরুর স্থলে এসে শেষ হয়। র্যালীতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা অহিদুল ইসলাম প্রিন্স, আলহাজ্ব মন্টু খান, নাসির উদ্দিন হাওলাদার, যুবদল নেতা হাফিজ আহমেদ বাবলু, ছাত্রদল নেতা মাহফুজুল আলম মিঠুসহ আরো অনেকে।
এদিকে সদর বিএনপির কার্যালয়ের সামনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন মহানগরের আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান, সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার ও যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এ বছর দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। ঘোষণা করা হয়েছে ১০ দিনের কর্মসূচি। তাইতো বিপ্লব ও সংহতি দিবসের র্যালীতে শ্লোগান ওঠে- বাংলাদেশের অপর নাম জিয়াউর রহমান, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া লও লও, লও সালাম।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকা- এবং ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার ঘটনার ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীর তৎকালীন উপপ্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ তার অনুসারী সেনা সদস্যদের নিয়ে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দী করেন। নিজেকে সেনাপ্রধান ঘোষণা দিয়ে ৬ নভেম্বর বঙ্গভবনে গিয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদকে গ্রেপ্তার করে করে মন্ত্রিসভা বাতিল ও জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন খালেদ। প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে দেশের প্রেসিডেন্টের পদে বসান। ওই রাতেই সেনাবাহিনীর সাধারণ সিপাহিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সিপাহি–জনতার মিলিত সেই বিপ্লবে বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত হন জিয়াউর রহমান। পাল্টা অভ্যুত্থান ঠেকাতে গিয়ে ৭ নভেম্বর সকালে কয়েকজন অনুসারীসহ প্রাণ হারান খালেদ মোশাররফ। অভূতপূর্ব এক সংহতির নজির সৃষ্টি হয় দেশের রাজনীতিতে।
কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে জিয়াউর রহমান হয়ে উঠেন এই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় একজন শাসক; যা তাকে পরবর্তীতে রাজনৈতিক ময়দানের স্বার্থকতায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক মহান নেতায় পরিণত করে। অসীম সাহস, প্রগাঢ় দেশপ্রেম, দূরদৃষ্টি, ন্যায়বান ও সত্যনিষ্ঠায় জিয়াউর রহমান হয়ে উঠেন ঐ সময়ের বরপুত্র। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ঐ সময়ের বরপুত্র হওয়ার পরও তিনি নিজেকে সাধারণ মানুষের কাতারে বসিয়ে সময়কে কর্মের অধীন করে তোলেন। কৃষি নির্ভর বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়ে কৃষক, কুমার, তাতী ও জেলে সম্প্রদায়ের কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন অবিস্মরণীয় নেতা।
স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে মানুষের কাঙিক্ষত মুক্তির প্রয়োজনে জিয়াউর রহমান এমন একজন আলোচিত ব্যক্তি, এমন এক অবশ্যম্ভাবী চরিত্র হয়ে উঠেন যা অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতার মধ্যে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তিনি তার দেশপ্রেম ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও দৃঢ়তা দিয়ে দেশকে নিশ্চিত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে তুলে আনেন স্বনির্ভরশীলতার পথে।
এর পর থেকে ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। বিএনপি সরকারের আমলে এ দিনটিতে ছিল সরকারি ছুটি। তবে আওয়ামী লীগের দেড় যুগের শাসনামলে গত দেড় দশকেরও বেশি সময় দিবসটি স্বাচ্ছন্দ্যে উদযাপন করতে পারেনি বিএনপি। আবারও সেই একই আগস্টের পুনরাবৃত্তি ঘটে বাংলাদেশে।