3:45 pm , November 6, 2024
বরিশালে সুজনের প্রধান সমন্বয়কারী
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সুজনের প্রধান সমন্বয়কারী দিলিপ কুমার সরকার বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে সারা দেশের মানুষের একটি অসন্তুষ্টি আছে। ২০১৪ সাল, ২০১৮ সাল, ২০২৪ সালের নির্বাচন এক একটা একেক ধরনের হলেও সবগুলি নিয়েই মানুষের মাঝে অসন্তুষ্টি আছে। সারাদেশের মানুষ চায় একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আর সে জন্যই কিন্তু নির্বাচনী আইন করা, সঠিক মানুষদের নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব দেয়া এবং নির্বাচনটা সঠিকভাবে দেয়ার কথা।ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা কার্যক্রম, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি সহ সংস্কার কমিশনের কাছে জন আকাঙ্খাভিত্তিক সুপারিশমালা প্রণয়নের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।বুধবার (০৬ নভেম্বর) বেলা ১১ টায় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সহযোগীতায় বরিশাল নগরীর সদররোডস্থ আর্যলক্ষ্মী মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় তিনি আরও বলেন, যখন নির্বাচন হবে, সেটা যেন অংশগ্রহণমূলক হয় এটা আমরা চাই। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গ আসছে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, আওয়ামী লীগের সাথে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ আছে। কিন্তু তাদের মধ্যে গত ১৫ বছরে অনেকে অপরাধকর্মের সাথে জড়িত থাকতে পারে, আন্দোলনের সময় অনেকে অন্যায় করতে পারেন, হত্যাকা-ের সাথে জড়িত থাকতে পারে, অনেকে দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকতে পারে। এককথায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হোক, তাদের বিচার করা হোকে।তিনি বলেন, বিগত দিনে আমরা মনে করি সারাদেশ ও দলের মধ্যে যেমন একটা কর্তৃত্ববাদী শাসন ছিল। ফলে একজনের কথায় দল চলত, এ কারণে নেতৃত্বের দায় দলের ওপর চাপানো ঠিক না।দিলিপ কুমার সরকার বলেন, বাংলাদেশে বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন যেমন গ্রহণযোগ্য হয়নি, যদি আমরা ওই দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন থেকে বাহিরে রাখতে চাই তখন দেখবেন যে বড় অংশের একটা ভোটার হয়ত ভোট কেন্দ্রে যাবে না। একটা নির্বাচন সুষ্ঠু’র জন্য আন্তর্জাতিক নির্দেশকগুলোকে যদি আমরা দেখি, সেখানে মানুষের অংশগ্রহনের কথা যেমন বলা আছে, তেমনি মানুষের সামনে অনেক বিকল্প থাকতে হবে। মানুষ যাকে যাকে দেখতে চায় ওই তালিকায় সবার উপস্থিতি থাকতে হবে।সেজন্য আমরা মনে করি- যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার হোক, কিন্তু কোন দল নিষিদ্ধ করা বা দলকে নির্বাচনে অংশ না দেয়াড় স্ট্যান্ড থাকা উচিত নয়। যারা অন্যায়কারী ছিল এবং যে ফেসগুলো আমরা দেখেছি অন্যায়কে উসকে দিতে, সংঘর্ষকে উসকে দিতে তারা যদি রাজনীতির অঙ্গনে আসে এবং তারা যদি সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে, সেটা হয়ত মানুষ ভালোভাবে নিবে না। এখান সৎ মানুষ, ভালো মানুষ, নতুন নেতৃত্ব, নতুন আওয়াজ তুলে এ জায়গায় আসতে হবে। অতএব পরিশুদ্ধ হয়ে সেইরকম নেতৃত্ব নির্বাচন করে দলকে এগিয়ে নিলে তখন একটা ইতিবাচক সারা মানুষের দিক থেকেও হয়ত পাবে।সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সুজনের প্রধান সমন্বয়কারী দিলিপ কুমার সরকার আরও বলেন, আইনের শাসন চাইলে মব জাস্টিজকে কখনও ই সমর্থন করা যাবে না। আমরা তা করিও না। ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পলায়নের মধ্য দিয়ে যখন আওয়ামী সরকারের পতন হলো, তার পরের দিনে আমরা ঢাকায় একটা প্রেস কনফারেন্স করেছি। সারাদেশে তাৎক্ষণিকভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ বিশেষ করে আওয়ামী ঘরওয়ানা যারা ছিল তাদের ওপর যে হামলা-নির্যাতন হচ্ছিল তা নিয়ে ওই প্রেস কনফারেন্স করেছি এবং সকলকে বলেছি এটা বন্ধ করতে হবে। সেইসাথে আমাদের সুজনের মানুষদের বলেছি আপনারা সতর্ক থাকবেন, এরকম কেউ আক্রান্ত হলে তার পাশে দাঁড়াবেন প্রয়োজনে সমাজের মানুষ নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।সংবাদ সম্মেলনে ধারণা পত্রে ১১ টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকার সমূহের মধ্যে বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন বাতিল করে নতুন করে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন প্রণয়ন করা, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে সৎ যোগ্য নিরপেক্ষ ও সাহসী ব্যক্তিদের স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ প্রদান করা সহ ১২ টি প্রস্তাব করা হয়। সংবিধানের মধ্য এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না এমন বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার করার প্রস্তাব করেন।এছাড়া জনপ্রশাসন সংস্কারের ক্ষেত্রে ৬ টি, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনে ৫ টি, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের অগ্রাধিকারে ৬টি, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনে ১০ টি, স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশনে ৭ টি, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে ৬ টি, শ্রমিক অধিকার বিষয়ক সংস্কার কমিশনে ১০ টি, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনে ৬টি এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনে ৯ টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।সুজন বরিশাল জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ গাজী জাহিদ হোসেন এর সভাপতিত্ব এসময় উপস্থিত ছিলেন মহানগরের সভাপতি অধ্যাপক মোতালেব হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দত্ত এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্টের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী (বরিশাল অঞ্চল) মেহের আফরোজ মিতা।