3:34 pm , November 5, 2024
মাধবপাশা চন্দ্রদ্বীপ হাইস্কুল এন্ড কলেজ
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বাবুগঞ্জের মাধবপাশা চন্দ্রদ্বীপ হাইস্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাতের প্রমান পেয়েছে তদন্ত কমিটি। অধ্যক্ষ প্রনব কুমার বেপারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গত ২৫ আগষ্ট শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ৬ সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সাম্প্রতি ওই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছে। তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে ৭টি দুর্নীতির প্রমান পেয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে বরাদ্দ পেতে চিঠি পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, ২০০৫ সালে চন্দ্রদ্বীপ হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন প্রনব কুমার বেপারী। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অধ্যক্ষ হয় সে। এরপর থেকে বেড়ে যায় ক্ষমতার দাপট। ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট পর্যন্ত অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থলোপাট, স্বজনপ্রীতি, শিক্ষার্থী নির্যাতন সহ নানা অপকর্ম করেছেন প্রনব কুমার বেপারী। গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা বন্ধ করে দেন তিনি। পরে তার পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। তাদের কর্মসূচিতে সমর্থন দেয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও অভিভাবকরা। এরপরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসার চেষ্টা করেন। তখন শিক্ষার্থীরা তার অনিয়ম, দুর্নীতিসহ নানা অপকর্মের লিখিত অভিযোগ দেয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে। শিক্ষার্থীদের দাবীর প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৬ সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। তদন্ত কমিটি সাম্প্রতি তদন্ত প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন।
তদন্ত কমিটি সুত্রে জানা গেছে অধ্যক্ষ প্রনব কুমার বেপারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অগ্রনী ব্যাংকের কাশিপুর শাখার হিসাব নম্বর থেকে ২০২২ সালের ২৫ জুলাই এক লাখ, ২০২৩ সালের ১৪ মে ৫০ হাজার এবং সোনালী ব্যাংকের গুঠিয়া শাখা থেকে একই দিনে ২০ হাজার টাকা উঠিয়েছেন। ওই টাকা কোথায় খরচ করেছেন, তার কোন ভাউচার জমা দেয়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। চন্দ্রদ্বীপ হাইস্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে প্রতিমাসে ছয় হাজার দুইশ এবং প্রধান শিক্ষক পদের জন্য পাঁচ হাজার পাঁচশ টাকা বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। লাইব্রেরীর জন্য প্রায় এক লাখ টাকা মুল্যের ৩২৮ টি বই ক্রয় করে ভাউচার জমা দেন। কিন্তু সেখানে বই পাওয়া গেছে মাত্র ৫৪টি। যার দাম সর্বোচ্চ ১৫/১৬ হাজার টাকা বলে তদন্ত কমিটির সদস্যরা মন্তব্য করেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে খরচ দেখিয়েছেন। কিন্তু কোন ভাউচার ও খাত উল্লেখ করেননি। নিলাম প্রক্রিয়া না মেনে প্রতিষ্ঠানের পুকুর ইজারা দিয়েছেন। ইজারার টাকাও বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা দেয়নি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭ শতাধিক শিক্ষার্থীর পরীক্ষার খাতা বিক্রয়ের টাকা আত্মসাত করেছেন। দুইটি ভাউচারের মাধ্যমে ৭০ টি চেয়ার ও পাঁচটি টেবিল কিনেছেন উল্লেখ করলেও তদন্ত কমিটি মাত্র ২০ টি চেয়ার পেয়েছে। সহকারী শিক্ষক মো. আল আমিন শেখের স্বাক্ষর জাল করার প্রমান পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এছাড়াও প্রনব কুমার বেপারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা রহমানের স্বাক্ষর জাল করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানাগারের জন্য যন্ত্রপাতি ক্রয় করার জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়ার প্রত্যয়ন পত্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার অভিযোগও রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য প্রনব কুমার বেপারীর কাছে কল কলেও সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।