3:30 pm , November 5, 2024
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বাজার সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে গত প্রায় একমাস ধরে রীতিমতো যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বরিশালের বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা। তারা ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা’ এর ব্যানারে ন্যায্যমূল্যের দোকান বসিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে কাঁচা বাজার সামগ্রী যেমন মূলা, পটল, বাধাকপি, ফুলকপি, চিচিঙ্গা, কাঁচামরিচ ইত্যাদি প্রয়োজনীয় উপকরণ ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করছেন। এর প্রভাব পড়েছে বাজারেও। রাতারাতি ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে নিত্যপণ্যের দাম। ৮০ টাকার লাউ কমে হয়েছে ৪৫/৫০ টাকা। আবার মুলা ও পটল ৫৫ টাকা থেকে কমেছে হয়েছে ৩৫/৪০ টাকা।
৫ অক্টোবর বরিশালের আমতলা মোড়ের মডেল মসজিদের সামনে তাদের এই ন্যায্যমূল্যের দোকানে ক্রেতাদের উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে প্রচার বা পূর্ব সংবাদ না থাকায় অতটা ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি।
কয়েকজন ক্রেতা স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, আমতলা মোড়ে ভাসমান ভ্যানের সবজি বিক্রেতারা এতোদিন আমাদের জিম্মি করে রেখেছিল। গতকাল রাতেও যেই লাউ ৮০ টাকা বিক্রি করেছে আজ ছাত্র-জনতার বাজার আসামাত্র সেই লাউ ৪৫/৫০ টাকা বিক্রি শুরু হয়েছে। চিচিঙ্গার দাম গতরাতে ছিল ৬০ টাকা এখন ৫০ টাকা হয়েছে।
আরেকজন ক্রেতা ছাত্রদের এই বাজার দেখে থমকে দাঁড়ান। তার হাতে বাজারের ব্যাগ। তিনি বলেন, এইমাত্র বাংলা বাজার থেকে বাজার করে ফিরলাম। সেখানে এখন মোটামুটি ১০/২০ টাকা কমেছে দাম। এটা আরো কমে যেত যদি ছাত্রদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্র সংগঠন এরকম উদ্যোগ নিতো। তাহলে হয়তো দেশে কোনো বাজার সিন্ডিকেট তৈরি হতো না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ জাতীয় কোনো সেবামূলক কার্যক্রম না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কয়েকজন ক্রেতা।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার এই বাজারের দায়িত্বে থাকা এনামুল হক সজিব বলেন, আমরা গত এক সপ্তাহ ধরে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে এই বাজার পরিচালনা করছি। আজ থেকে তিনদিন আমতলা মোড়ের মডেল মসজিদের সামনে ও পলাশপুর কলোনির ১ নং গলিতে এই বাজার পরিচালিত হবে। এখানে ন্যায্যমূল্যে মাছ ও গরুর মাংস বিক্রি হবে। আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা মোটামুটি ভালো মানের ইলিশ ৫০০ টাকা দরে এবং গরুর মাংস ৬০০-৬৮০ টাকার মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সুজয় শুভ বলেন, লক্ষ্য করে দেখুন এই ব্যানার ছাত্র জনতার ব্যানার। বিএম কলেজ, বরিশাল কলেজ, হাতেম আলী কলেজের দলমত নির্বিশেষে শিক্ষার্থীরা এটি করছে। তারা চায় দলমত নির্বিশেষে জনতা যেভাবে ৪ ও ৫ আগস্ট ছাত্রদের সাথী হয়েছেন তেমনি বাজার সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান এই ব্যানারের। কিন্তু এই উদ্যোগটা শুধু কতিপয় শিক্ষার্থীর। যাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। অথচ দলমত নির্বিশেষে অপরাপর ছাত্র সংগঠন, সাধারণ মানুষ এখানে আমাদের সাথী হলে আমরা আরও শক্তিশালী হতে পারতাম। এতে করে আরো কম দামে সবজি ক্রয় করা সম্ভব হতো। কারণ পাইকারি বাজারে আপনি যত বেশি পরিমাণ পণ্য কিনবেন, ততই খরচ কমবে। একসাথে নগরীর ১০টি বা ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ন্যায্যমূল্যের বাজার বসলে বাজার সিন্ডিকেট মুহূর্তেই ধ্বংস হবে। রাজনৈতিক দলগুলো আন্তরিক হলে এটা আরও সহজ হতো বলে জানান সুজয় শুভ।
জামায়াতে ইসলামী বরিশাল মহানগরের আমীর জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা ব্যানার মানেই হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্ররাও ওখানে সম্পৃক্ত রয়েছে। আলাদা করে ছাত্র শিবির এটা করেনি কারণ, তাদের পড়াশুনা রয়েছে। তারপরও ছাত্র শিবির বা জামায়াতে ইসলামী যাতে এর সাথে সম্পৃক্ত থাকে বিষয়টি দেখবো এবং দ্রুত তাদের এমন উদ্যোগে সহযোগী হবার পরামর্শ আমার থাকবে।