4:04 pm , October 31, 2024
বিক্ষোভে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয় ॥ সড়ক অবরোধে দীর্ঘ যানজট
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইসা ফৌজিয়া মিম নিহত হওয়ার ঘটনার বিচার এবং সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে করে উভয় প্রান্তে দীর্ঘ যানবাহনের লাইন পড়ে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী এবং যানবাহনের সাথে জড়িতরা। এমনকি বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে মাইসার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগীয় প্রশাসনের সাথে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও
বাস মালিক পক্ষের একজনকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপস্থিত হওয়ার দাবিতে অনঢ় রয়েছেন তারা। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর যাত্রীবাহী বাস ছাড়া অন্য সকল যানবাহন ছেড়ে দেয়া হয়। নিহত মাইসার নেত্রকোনার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর মেয়ে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তার বাবা ঢাকায় বসবাস করেন। ঢাকায় জানাজা শেষে আজিপুর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হবে বলে নিশ্চিত করেছেন মাইসার বাবা।
গত বুধবার রাতে সড়ক বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বরিশাল-ভোলা সড়ক পাড়াপাড়ের সময় নারায়ণগঞ্জ ট্রাভেলস নামে বাসটি তীব্র গতিতে এসে মাইসাকে ধাক্কা দেয়। এ সময় সে সড়কের উপর ছিটকে পড়ে। এরপর বাসটি পালিয়ে যাওয়ার সময় মাইসাকে চাকায় পিষ্ট করে। এতে করে মাইসার মুখ থেতলে যায় এবং মাথা ফেটে প্রচুর রক্তপাত হয়। দ্রুত বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসকগণ মৃত ঘোষনা করেন। ঘটনার সাথে সাথে শিক্ষার্থীরা ঘাতক বাসটিকে নগরীর রূপাতলী এলাকায় আটক করে বিশ^বিদ্যালয়ের সামনে নিয়ে আসে। এরপর বাসটিতে আগুন দেয়া হয়। শিক্ষার্থীরা বাসের চালক ও হেলপার এবং মালিকের বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা না হলে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে সড়ক অবরোধের ঘোষনা দেন তারা। গতকাল সকাল ১০টা থেকে একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখ সড়ক বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এতে করে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা মুখী এবং কুয়াকাটা থেকে আসা যাত্রীবাহী বাসের যাত্রীরা পড়েন ভোগান্তিতে। ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যানবাহনের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টদের। তারা বারবার খবর নিচ্ছিল কখন শেষ হবে এ অবরোধ। কিন্তু কোনভাবেই শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে না নেয়ায় ঘন্টায় ঘন্টায় দীর্ঘ হতে থাকে যানবাহনের লাইন। দুপুর ১২টার দিকে নিয়ে আসা হয় মাইসার লাশবাহী গাড়ি। গাড়ি থাকাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখ সড়কের উপর মাইসার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় মাইসার বাবা, মামা, ভাই, আত্মীয়স্বজন, সহপাঠী এবং বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলী, জেলা প্রশাসক মো.দেলোয়ার হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। একই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন মাইসার মা। তার সাথে দেখা করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুচিতা শরমিন। উপাচার্য তার সাথে দেখা করে শান্তনা দেন। এ সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মাইসার মা। তার চোখের জল মুছিয়ে দেন উপাচার্য। উপাচার্য সুচিতা শরমিন বলেন, মাইসার পরিবারকে কোনভাবেই শান্তনা দেয়ার ভাষা আমাদের নেই। তারপরও শিক্ষার্থীরা যে সকল দাবি উত্থাপন করেছে তার বেশীরভাগ বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হয়েছে। বরিশাল-পটুয়াখালী ও বরিশাল-ভোলা সড়কে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে ঢাকায় মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সকল দাবি বাস্তবায়ন হবে। এমনকি যাদের বিচার চাওয়া হয়েছে তাদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে। এরপর প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে কথা বলেন বিভাগীয় কমিশনার। তিনি নিশ্চিত করেন শিক্ষার্থীরা যে সকল দাবি জানিয়েছেন তা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। ইতিমধ্যে গতিরোধকের কাজ শুরু হয়েছে। ফুটপাত ও ওভারব্রিজের জন্য অর্থের প্রয়োজন। এ বিষয়ে সেখানে উপস্থিত সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলীকে সামনে আনেন। তিনি বলেন, অর্থের বিষয় থাকায় কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। সময় না দিলে কোনভাবেই এ কাজ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। পরবর্তীতে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, মন্ত্রণালয়ে তার সাথে কথা হয়েছে। তারাও প্রকল্প আকারে পাঠানোর জন্য বলেছেন। চালক ও হেলাপারের গ্রেফতারের বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, পুলিশ কমিশনার তাদের গ্রেফতার নিয়ে কাজ করছেন। এ বিষয়ে একাধিকবার কথা হয়েছে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা বলেন, তাদের যে সকল যৌক্তিক দাবি তা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন এবং মালিক পক্ষের একজনকে গতকালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির করার দাবি জানান। না আসলে কোনভাবেই সড়ক থেকে তারা উঠবেন না বলে জানিয়ে দেন। এরপর থেকে সড়ক অবরোধ চলতে থাকে। সন্ধ্যায় ছয়টার দিকে উভয় প্রান্ত থেকে সকল যানবাহন ছেড়ে দেয়া হলেও বাস আটকে রাখা হয়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সুজয় শুভ জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৬:১৯ মিনিটে রাস্তা ছেড়ে দেয়া হলেও ৩০টি বাস আটকে রাখা হয়। ক্ষতিপূরণ ও শিক্ষার্থীদের দবীর সমাধান হলে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।