‘আড়াই হাজার বিঘার মাছের ঘের দখলমুক্ত করা নিয়ে সংঘর্ষের শঙ্কা ‘আড়াই হাজার বিঘার মাছের ঘের দখলমুক্ত করা নিয়ে সংঘর্ষের শঙ্কা - ajkerparibartan.com
‘আড়াই হাজার বিঘার মাছের ঘের দখলমুক্ত করা নিয়ে সংঘর্ষের শঙ্কা

3:50 pm , October 30, 2024

উজিরপুরের সাতলায় আ’লীগ-যুবলীগ নেতার দখলে

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ক্ষমতার পর পরিবর্তনের পর বরিশালের উজিরপুরে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতার জবর দখল করে রাখা ‘আড়াই হাজার বিঘার মাছের ঘের উদ্ধারে মাঠে নেমেছে প্রকৃত ভূমির মালিকরা। ক্ষমতার দাপটে ও হামলা মামলা ও নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে উপজেলার সাতলার পটিবাড়ী বিলটি জবরদখল করে মাছ চাষ করে আসছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো : মশিউর রহমান মিঞা ও তার ভাই সাতলা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক মনির মিঞাসহ তাদের দলবল। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই মাছের ঘেরটি সাধারন ভূমি মালিকদের হাতে ফিরিয়ে দিতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়েছে এলাকাবাসী। তবে ইতিমধ্যেই এলাকার মানুষ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু করায় মো : রাহাত খন্দকার ও আনিচ খন্দকারসহ একাধিক ব্যাক্তিকে দেখে নেওয়ার হুমকি ধামকি দিচ্ছে প্রভাবশালী ওই আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতা। ইতিমধ্যেই পটিবাড়ী মাছের ঘেরটির’ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এ নিয়ে যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। উজিরপুরের সাতলা ইউনিয়নের পটিবাড়ি গ্রামের ‘আড়াই হাজার বিঘা বিল’ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল খালেক আজাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তার মৃত্যুর পর এখন তার দুই ছেলে বিলটি নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। এটি দখলমুক্ত করতে ইতিমধ্যেই স্থানীয়রা আন্দোলনে নেমেছেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক আজাদের মৃত্যুর পর ২০২২ সালে এলাকাবাসী একজোট হয়ে বিলটি রক্ষার আন্দোলন শুরু করলে তার দুই ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো মশিউর রহমান ও সাতলা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক মো : মনিরুজ্জামান জোর পূর্বক ও বিলে মাছ চাষ শুরু করে। এসময় তাদের হামলার শিকার হন রাজিহার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পটিবাড়ী ৯ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক উজ্জল কুমার মন্ডলসহ একাধিক ব্যাক্তি। স্থানীয় বাসিন্দা মো : রাহাত খন্দকার জানান, বহু বছর ধরে প্রাকৃতিকভাবে মাছ উৎপাদনের জন্য সুপরিচিত ‘আড়াই হাজার বিঘা বিলে’ জমির পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার একর। বিলের অধিকাংশ জমির মালিক পটিবাড়ি গ্রামের হিন্দু সম্প্রদাায়ের মানুষ। এক ফসলি জমির এ বিলে বর্ষাকালে থইথই পানি থাকে। বিলের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি বড় খালের সংযোগ রয়েছে বহমান নদীর সঙ্গে। খালটির মুখে বাঁধ দিয়ে ধানচাষ করেন স্থানীয়রা। ফসল উঠে গেলে বাঁধ কেটে দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে বিলটি পানির নিচে চলে যায়। ১৫ বছর আগেও বিলটিতে পরিকল্পিত কোনো মাছ চাষ ছিল না। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মাছ শিকার ছিল স্থানীয় মানুষের দ্বিতীয় পেশা। বিলে যার যতটুকু জমি সে ততটুকু অংশে মাছ ধরত। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে তারা বাকি মাছ বিক্রি করে দিত। পটিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দাদের মতে, এ বিলে গড়ে এক থেকে দেড় কোটি টাকার মাছ ধরা পড়ত। এক পর্যায়ে বিলটির দিকে চোখ পড়ে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল খালেক আজাদের। কয়েক হাজার মানুষের আয়ের উৎসস্থল বিলটি তিনি দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। স্থানীয় বাসিন্দা জাকির খন্দকার বলেন, শুরুতে বিলটি দখল নেয় আজাদের ছোট ভাই ফুয়াদ হোসেন। জমির মালিকদের ৯০ ভাগ সংখ্যালঘু হওয়ায় ভয় দেখিয়ে বিলের নিয়ন্ত্রণ নিতে তার খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। একটা বৈধতার আবরণও তিনি তৈরি করেন। সমিতির মাধ্যমে মাছ চাষ করা এবং লভ্যাংশ সবাইকে দেওয়া হবে বলে প্রচারণা চালানো হয়। স্থানীয় কয়েকজনের নাম দিয়ে ‘লোক দেখানো কমিটি’ করা হয়। জমির মালিকানা অনুযায়ী কিছু লোকের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। অবশ্য প্রথম বছরেই মাছ চাষের নামে শুভংকরের ফাঁকি বুঝতে পারেন সবাই। পুঁজি হিসাবে নেওয়া টাকা রেখে মালিকদের মুনাফা বাবদ সামান্য অর্থ দেওয়া হয়। অথচ মুক্ত বিলে এর চেয়েও বেশি টাকার মাছ পেত স্থানীয়রা। বছর দুয়েক এভাবে চলার পর প্রকাশ্যে আসেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক আজাদ। তথাকথিত সমিতির সভাপতি তিনি নিজেই হয়ে যান। জমির মালিকদের কাছ থেকে অংশীদারত্বের টাকা নেওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। একইসঙ্গে লভ্যাংশ দেওয়াও তিনি বন্ধ করে দেন। পুরো বিলের নিয়ন্ত্রণ তার কাছে চলে যায়। মাছ চাষ থেকে শুরু করে লাভের টাকা-সব একাই নিতে শুরু করেন। স্থানীয় প্রশাসনকে সামাল দেওয়ার জন্য কাগজে-কলমে একটি কমিটি করলেও তাতে অংশগ্রহণ ছিল না সাধারণ গ্রমবাসীর। পটিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা যাকা তার একান্ত অনুগত ছিলেন তাদের দিয়েই করেছেন কমিটি। আর যারা মাছের ঘেরের বিরোধিতা করেছেন তাদের নামে ইউনিয়ন পরিষদে মামলা টুকে দিয়ে নানান ভাবে হয়রানী ও মারধর করা হতো। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, শুরু থকেই এলাকাবাসী সমিতি করা কিংবা বিল নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে ছিলেন। এ নিয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়া হলে নৃশংসভাবে বীর্য্য বৈদ্যকে খুন করা হয়। অনেক সংখ্যালঘু বাসিন্দাকে হুমকি দেওয়া হয়। এরপর সব থেমে গেলে বিলের ওপর একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন আজাদ। বীর্য বৈদ্য হত্যা মামলায় আজাদের ভাইয়ের ছেলে মামুন মিয়াকে আসামি করা হয়। সাক্ষীর অভাবে মামলার সঠিক বিচার হয়নি। প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার সাহস পায়নি কেউ। পটিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মামুন সরদার বলেন, টানা ১৩ বছর আজাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল বিল। দুই বছর আগে তার মৃত্যুর পর মূল মালিকদের হাতে বিল বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি ওঠে। আজাদের দুই ছেলে মশিউর রহমান ও মনিরুজ্জামান পিতার মতো ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিলে মাছ চাষ শুরু করে। ফলে এখনো পটিবাড়ী বিলটি তাদেও দখলে রয়েছে। তবে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সাথে সাথে এলাকাবাসী সোচ্ছার হতে শুরু করে। ইতিমধ্যেই বিলটি প্রকৃত ভ’মি মালিকদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবী জোড়ালো হচ্ছে। বিষয়টি আচ করতে পেরে মশিউর রহমান ও মনির মিয়া স্থানীয় কতিপয় নেতার ষড়নাপন্ন হয়ে ভয় ভীতি দেখিয়ে মাছ ধরে নিয়ে যাওয়ার পায়তারা শুরু করেছে। তবে এলাকাবাসী একজোট হওয়ায় দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্রে আশংকা রয়েছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত মশিউর রহমান ও তার ভাই মনিরুজ্জামনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেন নি। ফলে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো : সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কোন অপ্রীতকর ঘটনা বা আইন সৃংখলার অবনতি হলে প্রশাসনিক ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT