বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র করার জন্য আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে – মামুনুল হক বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র করার জন্য আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে - মামুনুল হক - ajkerparibartan.com
বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র করার জন্য আবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে – মামুনুল হক

3:55 pm , October 23, 2024

 

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এর মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেছেন, রক্ত দিয়ে যে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, আবার রক্ত দিয়ে সেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। খুনিদের বিচার করতে হবে। তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবার জন্য যদি আরেকটি সংগ্রাম করার প্রয়োজন হয়, বাংলার মানুষ সে সংগ্রাম করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।বুধবার (২৩ অক্টোবর) বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আয়োজিত গণ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার বিচারের দাবি এবং নৈরাজ্যবাদ প্রতিরোধে এই গণ সমাবেশে মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক আরও বলেন, বীর শহিদদের আত্মত্যাগ, কোরবানি আর জীবনদানের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। এই সকল শহিদানদের কে স্মরণ করে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। পাশাপাশি স্পষ্ট ভাষায় খুনি হত্যাকারী, বিদায়ী পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে, খুনি মন্ত্রীসভার সদস্যবৃন্দ, তাদের দলীয় সাঙ্গপাঙ্গ, হেলমেট লীগ, হাতুড়ি লীগের সদস্য এবং প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পরিবর্তে যারা আওয়ামী দলীয় বাহিনীতে নিজেদের পরিণত করেছে সেই সকল অত্যাচারী খুনিদেরকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানাই।এসময় তিনি ছাত্র-জনতা এবং দেশের আলেম সমাজকে সতর্ক করে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মনে রাখতে হবে বিজয় আর স্বাধীনতা অর্জন করা যত কঠিন, তার থেকেও বড় কঠিন ও বড় দায়িত্ব এই বিজয় এবং স্বাধীনতাকে রক্ষা করা। আজ বাংলার আকাশে শকুনের আনাগোনা দেখা যায়। বাংলাদেশের বিজয়কে ছিনতাই করে, ছাত্র-জনতার রক্ত দিয়ে গড়া এই মহান বিপ্লবকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য আবার নতুন ষড়যন্ত্রের দানা বাধতে আমরা দেখছি। অন্য আরেকটি দেশের আশ্রয়ে, প্রশ্রয়ে এবং তাদের প্রত্যক্ষ -পরোক্ষ মদদে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ব্যর্থ করার জন্য আবার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু বাংলার ২০ কোটি জনতাকে সেই ষড়যন্ত্রকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে।তিনি বলেন, যে ফ্যাসিবাদকে এ দেশের ছাত্র জনতা বিতাড়িত করেছে, সেই ফ্যাসিবাদ আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর পাঁয়তারা করছে। প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকা আওয়ামী দুর্বৃত্তদের দোসররা আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করছে।তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিভাজনের রাজনীতির ষড়যন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান এবং ব্যর্থ করে দিয়ে বাংলাদেশের আপামর রাজনৈতিক দল এবং ছাত্র- জনতা অভূতপূর্ব যে ঐক্য গড়ে তুলেছিল সেটিই ছিল আগস্ট বিপ্লবের সফলার যে মূল সূত্র, মূল রহস্য ছিল। সেই ঐক্যই ছিল শেখ হাসিনা ও তার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বাঙালি জনতার মূল হাতিয়ার। সেই ঐক্য ধরে রাখতে হবে।তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সেদিন চেষ্টা করেছিল আরও খুন করতে, হত্যা করতে। সে আর্মি, বিজিপি, র‌্যাব – পুলিশকে অর্ডার দিয়েছিল, নির্দেশ দিয়েছিল চালাও গুলি যত হত্যা করতে হয় হত্যা কর। রক্তের সাগর প্রবাহিত করেও ক্ষমতার মসনদে সে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। ধন্যবাদ জানাই দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে, তারা পরিষ্কার করে দিয়েছিল আমরা এ দেশের মানুষের বিরুদ্ধে একটি বুলেটও ছুড়তে পারবো না। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী দেশের জনতার পাশে এসে দাঁড়ানোর কারণে শেখ হাসিনার স্বপ্নটা ধুলোয় মিশে গিয়েছিল। পালিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটি ব্যবহারের সুযোগ পায়নি, আকাশ পথে উড়াল দিয়ে যে তার প্রভুর ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।তিনি বলেন, প্রমাণ হয়েছে জনতার শক্তির সামনে স্বৈরাচারী শক্তি যত বড়ই হোক না কেন কোনোদিন চিরস্থায়ী টিকে থাকতে পারে না, শেখ হাসিনাও পারেনি।এসময় তিনি মোদী সরকারের সমালোচনা করে বলেন, শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছ, সে খুন- হত্যা মামলার আসামি। হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের হত্যাকা-ের একজন আসামিকে প্রশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তোমরা অবস্থান গ্রহণ করেছ। বাংলাদেশের আদালত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। সেই আসামিকে বাংলাদেশে হস্তান্তর কর।অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই খুনি শেখ হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচারের ব্যবস্থা করুন। যদি সেটা করতে না পারেন ইতিহাস আপনাদেরও ক্ষমা করবে না। আপনাদের বড় দায়িত্ব হল সেই খুন এবং হত্যাকা-গুলোর বিচার নিশ্চিত করা আর আপনাদের আরেকটি বড় দায়িত্ব হল বাংলাদেশের স্থিতিশীলতাকে রক্ষা করা। এজন্য ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা বলতে চাই অতিসত্বর সকল রাজনৈতিক দলের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করে বাংলাদেশ বিরোধী প্রতিটি ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করবার ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এর মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক সমমনা সকল দলকে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এখনই আমাদের পারস্পরিক প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা, বিভেদে লিপ্ত হওয়ার সময় হয়নি। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিগত দিনের বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশ, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, এলডিপি, এনডিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ সকল রাজনৈতিক দল এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে আমি উদাত্ত আহ্বান জানাবো, এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে গড়ে ওঠা আমাদের ঐক্যকে সীসাঢাালা প্রাচীরের মতো মজবুদ রাখতে হবে। দেশপ্রেমিক জনতা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে বিদেশি কোন প্রভুদের প্রশ্রয়ে সেই ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশে আর নতুন করে ফিরে আসার সুযোগ পাবে না। কিন্তু আমরা যদি দ্বিধা বিভক্ত হই, আমাদেরকে আবার কোন ভিনদেশি শক্তির হাতে এ দেশের স্বাধীনতাকে ইজারা রাখতে হবে। কাজেই সেই দিন আমরা দেখতে চাই না।এসময় তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র এবং সরকারকে বলবো, সকল রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন। তাদের সহযোগিতা নিশ্চিত করুন এবং যত দ্রুত সম্ভব হয় আগামী দিনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। অনির্দিষ্ট কালের জন্য, অনন্তকালের জন্য ক্ষমতায় বসে থাকার কোন অভিলাষ আপনাদেরকে পেয়ে না বসে, সেজন্য সজাগ থাকতে হবে।তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালের বাহিরে কিন্তু আগস্ট বিপ্লবের সম্মানার্থে বিগত ফ্যাসিবাদের হাত থেকে মুক্তির সুবাদে এই সরকার এবং সহযোগীদেরকে এখনও পর্যন্ত বিনা শর্তে বাংলাদেশের মানুষ সহযোগিতা এবং সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আপনারা যদি মনে করেন এই সমর্থন অনন্ত কালের জন্য থাকবে তাহলে আপনারা ভুল করবেন। রাজনৈতিক সংলাপ ডাকুন। শুধু মাত্র লোক দেখানোর জন্য আনুষ্ঠানিক সংলাপ নয়। সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আপনারা সমন্বয় মজবুদ করুন, সকলের সাথে ইন্টারনাল-এক্সটারনাল সব ধরনের যোগাযোগ বৃদ্ধি করে সকলের সহযোগিতা নিয়ে এই সরকারকে সাফল্যম-িত করতে হবে। মনে রাখতে হবে এই সরকার ব্যর্থ হলে আগস্ট বিপ্লবের সুফল বাংলার মানুষ ঘরে তুলতে পারবে না। যে কোনো মূল্যে আগস্টের বিপ্লবকে সফল রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বলি এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ প্রমাণ করেছে এ দেশের মানুষের হৃদয়ের গহীনে সবচেয়ে গভীর ভাবে যে ভালোবাসা লুকিত রয়েছে সেটা হলো ইসলাম, আল্লাহ ও তার রসুলের প্রতি প্রেম আর ভালোবাসা। এজন্য একাত্মবাদ এবং তৌহিদের বিরুদ্ধে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে যে শেরেকি সংস্কৃতি বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছিল শেখ হাসিনা, ৫ আগস্টের প্রথম প্রহরেই তার শেরেকের সকল আস্তানা বাংলার মানুষ গুড়িয়ে দিয়েছে। এ দেশের মানুষ ইসলামকে ভালোবাসে, ইসলামের জন্য জীবন দিতে তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।মামুনুল হক বলেন, আমরা চাই বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, আমরা চাই ইনসাফপূর্ণ বাংলাদেশ। মানব খচিত তন্ত্র মন্ত্র দিয়ে কস্মিনকালেও পূর্ণাঙ্গ বৈষম্যহীন ইনসাফপূর্ণ সমাজ গড়া সম্ভব হবে না। এজন্য আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দেয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। আল্লাহর দেয়া সেই রাজনৈতিক বন্দোবস্তের একমাত্র নাম এবং শিরোনাম হলে খেলাপত ব্যবস্থা।অর্থাৎ আইন দিবেন আল্লাহ শাসন করবেন শাসক। শাসক হবে আল্লাহর প্রতিনিধি। সেই প্রতিনিধি জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত হবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত আইনের দ্বারা মানুষের সকল বৈষম্যকে ধূলিসাৎ করে সাম্য ন্যায় এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবে। এজন্য আমরা থেমে থাকতে চাইনা। শুধু শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদকে বিদায় করে আমরা আমাদের যাত্রা থামিয়ে দিতে চাই না, আমাদের গন্তব্য বহুদূর, মঞ্জিল বহুদূর।আমরা খ্যান্ত হবো সেদিক যেদিন বাংলার সংবিধান হবে আল কুরআন, যেদিন বাংলার মাটিতে বাস্তবায়ন হবে খেলাফত ব্যবস্থা।বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বরিশাল জেলার আহবায়ক মাওলানা মুহাম্মাদ জোবায়ের গালিব এর সভাপতিত্বে গণসমাবেশে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT