4:28 pm , October 21, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মুলাদী উপজেলার সন্ত্রাসী মো. শামীম খান বরিশাল নগরীতে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় রাজনৈতিক আলোচনায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়াকে নিয়ে কটুক্তি করলে জনরোষের শিকার হন তিনি। জানা গেছে, মুলাদীর আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান খান মিঠুর ক্যাডার হিসেবে পরিচিত মো. শামীম খান। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আলোচিত সন্ত্রাসী শামীম এলাকা ছেড়ে বরিশাল শহরে আত্মগোপন করে । গত রোববার নগরীর গির্জা মহল্লা এলাকায় ঘরোয়া রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার খাওয়ার সময় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়াকে নিয়ে কটুক্তি করলে পাশের টেবিলে থাকা ছাত্রদল নেতা তরিকুল ইসলাম তারেকসহ অনেকেই প্রতিবাদ করেন। কিন্তু এরপরেও তিনি ক্ষমা প্রার্থনা না করে উল্টো হুমকি-ধামকি দিতে থাকেন। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে তরিকসহ স্থানীয় লোকজন তাকে মারধর করে। এই ঘটনার ভিডিওচিত্র নিয়ে নোংরামি শুরু হয়েছে। দলীয় প্রতিপক্ষ তরিককে হয়রানি করতে উঠেপড়ে লেগেছে। ঠুনকো এই বিষয়টিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে একটি পক্ষ। তরিকসহ সাধারণ জনতা যাকে উত্তমমাধ্যম দিয়েছে সেই শামীম মুলাদীতে ত্রাস হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ শাসনামলে খুন অনেক অপরাধের সাথে জড়িত। বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, মুলাদী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা তারিকুল হাসান খান মিঠুর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে শামীম গত ১৫ বছর কাজিরচর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। স্থানীয় আব্দুর রব হাওলাদারসহ একাধিক খুনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। কিন্তু তিনি প্রভাবশালী নেতার ছত্র-ছায়ায় থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তার অপরাধের লাগাম টানতে পারছিল না। জানা গেছে, শামীমসহ তার ক্যাডার বাহিনীর বিরুদ্ধে তৎকালীন সময়ে একাধিক প্রতিবাদ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেও কোনা সুফল পাওয়া যায়নি। বরং যারা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন, তাদের প্রত্যেককেই আওয়ামী লীগের শাসনামলে হয়রানির শিকার হয়েছেন। সূত্র জানায়, কাজিরচর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা শামীম আওয়ামী লীগ আমলে মীরগঞ্জ ফেরিঘাট ইজারা নিয়েও সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে। নিজেদের ইচ্ছেমত অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে গিয়ে বহু নামি-দামি ব্যক্তিকে লাঞ্ছিত করেন। বছর দুয়েক আগে এক ব্যক্তি ট্রলারে পার হতে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ না দেওয়ায় তাকে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপের মুখে তখনকার সময়ে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও ক্ষমতার কারণে তিনি ছিলেন ধরাছোয়ার বাইরে। স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, আওয়ামী লীগ শাসনামলে উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল হাসান খান মিঠুর দিক-নির্দেশনায় শামীমসহ ১০/১২ জনের সন্ত্রাসী বাহিনী গোটা উপজেলায় ত্রাস করে বেড়িয়েছে। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আলোচিত সন্ত্রাসী শামীম এলাকা ছেড়ে বরিশাল শহরে আত্মগোপনে আছেন। কাজিরচরের বিএনপি কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, শামীম এলাকায় ব্যাপক ত্রাস করলেও এখনো ধরাছোয়ার বাইরে। ৫ আগস্টের পর থেকে পালিয়ে থাকা এই যুবলীগ নেতা জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানকে নিয়ে কটুক্তি করে যাচ্ছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শামীমকে চড়-থাপ্পড় মারার পূর্বে তাকে ক্ষমা প্রার্থনার একটি সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি, বরং নিজের মন্তব্যে অনঢ় থাকেন। তাতেই ক্ষুব্ধ হন মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র সহ সভাপতি তরিকুল ইসলামসহ উপস্থিত অন্যান্যরা। এ সময় শামীমকে পুলিশে সোপর্দ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পান। মূলত এই সন্ত্রাসীকে হেনস্থা করার সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও নিয়ে তরিকবিরোধী অংশটি নোংরা রাজনীতি শুরু করেছে। দলের ত্যাগী নেতা তরিককে শায়েস্তা করা গেলে আগামীতে ফায়দা লোটার সুযোগ তৈরি হবে, এমন ভাবনায় বিরোধী পক্ষ মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে ছাত্রদল নেতা তরিকুল ইসলাম বলেন, তিনি রোববার (২০ অক্টোবর) দুপুরে ঘরোয়া রেস্তোরাঁর টেবিলে খাবার খেতে গিয়ে শুনতে পান পাশর্^বর্তী টেবিলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রতিবাদ করায় শামীমসহ তার ক্যাডার বাহিনী চড়াও হলে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা ছুটে আসেন। তবে এর আগে তাকে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি তা শোনেননি। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দের কথা বললে হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যান।
