নবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুল হক চড়েন ৬০ লাখ টাকার গাড়ীতে নবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুল হক চড়েন ৬০ লাখ টাকার গাড়ীতে - ajkerparibartan.com
নবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুল হক চড়েন ৬০ লাখ টাকার গাড়ীতে

4:22 pm , October 19, 2024

ঝালকাঠি প্রতিবেদক ॥ ঝালকাঠি সদর উজেলার নবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মজিবুল হক আকন্দের হিসাব বহির্ভূত সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।  মজিবুল নবগ্রাম ইউনিয়নের আতাহার আলী আকন্দের ছেলে।
এক সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের সর্বহারা পার্টির নেতা মজিবুল হক ১৯৯৮ সালে প্রথম ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর একটানা ২০২৪ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। ঝালকাঠি শহরের পালবাড়ি এলাকার জমি বিক্রি করে প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচন করেন। এর আগে মজিবুল হক সমাজ সেবা অধিদপ্তরের পরিদর্শক পদে ৭ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন। চাকরি ছেড়ে চেয়ারম্যান হবার পর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০০৬ সালে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক হন। সেই থেকে সাবেক এমপি আমির হোসেন আমুর সাথে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে পর্যায়ক্রমে  দলীয় পদ ও দলের প্রভাব খাটিয়ে ঠিকাদারী কাজ পেতে শুরু করেন। এরপর অবৈধ ড্রেজার মালিক সমিতির সভাপতি পদ দখল করে অবৈধ বালু ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েন। এখান থেকে তিনি সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চোরাইভাবে সুগন্ধা বিষখালী নদী থেকে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যান। এক পর্যায়ে আমির হোসেন আমু শিল্পমন্ত্রী থাকাকালীন ঝালকাঠি বিসিক শিল্পনগরীর নির্ধারিত স্থানে বালু ভরাটের টেন্ডার কাজ বাগিয়ে নেয়। ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে নলছিটি উপজেলার ভৈরবপাশা ইউনিয়নে ঢাপড় এলাকায় বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের জমিতে এ বালু ভরাট দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। প্রকল্প স্থানে একটি ডোবা থাকলেও ৪টি বিরাট পুকুর দেখিয়ে এ টাকা আত্মসাৎ করেন। এ দুর্নীতির সংবাদ ২০১৭ সালে পত্রিকায় প্রকাশের সূত্র ধরে দুর্নীতি দমন কমিশন  তদন্ত শুরু করে। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সমন্বিত জেলা কার্যালয় বরিশল দুদকের উপসহকারি পরিচালক মো. আল আমিন বাদী হয়ে নলছিটি থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় তৎকালীন বিসিকের প্রকল্প পরিচালক অসীম কুমার ঘোষ, মেসার্স হক ট্রেডার্সের ঠিকাদার নবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুল হক আকন্দসহ মোট ৬ জনকে আসামী করা হয়। দুদকের এই মামলায় উল্লেখ করা হয় যে, ৪টি পুকুরে মাটি ভরাট দেখিয়ে প্রকল্পের মোট ৫২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। পরবর্তিতে আমির হোসেন আমুর প্রভাব খাটিয়ে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে মামলা থেকে মজিবুল হক আকন্দসহ আসামীরা অব্যাহতি পায়। দুর্নীতির কারনে বিসিক শিল্পনগরী আলোর মুখ দেখেনি।  এখানে ৭৯টি প্লটের মধ্যে ৫৬ টি প্লট এখনো ফাঁকা। সরকার পতনের পর আমু, মজিবুল হক আকন্দসহ আসামীরা পলাতক রয়েছ। মজিবুল হক চেয়ারম্যান থকাকালীন সময়ে নবগ্রাম মডেল স্কুলে ২০ বছর ধরে সভাপতির পদ দখল করে ছিলেন। একই স্কুলে ১০ টি পদের নিয়োগে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়া ইউনিয়নের জেবুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পিয়ন, নৈশপ্রহরী নিয়োগে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করেন। অভিযোগ রয়েছে বেতরা ও কাফুরকাঠি এলাকার সুকুমার গাঙ্গুলীসহ অনেক হিন্দু পরিবারের প্রায় ৩০ বিঘা সম্পত্তি জবর দখল করেন। জমি বিক্রি করে নির্বাচন করা এই চেয়ারম্যান এখন ৬০ লাখ টাকার গাড়িতে চড়েন। তার ঢাকার শ্যামলীতে ফ্ল্যাট বাড়ি, বরিশালের ঝাউতলায় ১টি ৪ তলা এবং ১টি ১ তলা বাড়ি আছে। এছড়া এলাকায় নামে বেনামে তার প্রায় ৫০ বিঘা জমি রয়েছে। ১৯৯৭ সালে ইউপি নির্বাচনের সময় মজিবুল হকের নিজ বাড়িতে বোমা তৈরীর সময় বিস্ফোরনে ভাই টিপুসহ পরেশ ও মিজান নামে মোট ৩ জন আহত হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা নিহত হওয়ায় মজিবুলের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী অলিউর রহমান হিরুকে ফাঁসাতে হত্যা মামলা দায়ের করে বলে হিরু জানান। এলাকাবাসি জানান, ২০০১ সালে বর্তমান নবগ্রাম টেম্পুস্ট্যান্ডে ভাই জুয়েল আকন্দ, মনির আকন্দ, স্ত্রী ও সন্তানরা অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়। এরপর ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি হিরুকে  হারাতে পরমহল কেন্দ্র দখলে নিতে গোলাগুলির ঘটনা ঘটায় মজিবুল হক।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT