2:53 pm , October 18, 2024
আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ খাল পুনরুদ্ধারের কাজ করতে গিয়ে সড়কের অর্ধেকই ভেঙ্গে ফেলেছে ফ্রেজার। বাকী অর্ধেক সড়কেও ফাটল ধরেছে এবং যেকোনো মুহূর্তে ভেঙ্গে বন্ধ হবে চলাচল। এই মুহূর্তে প্রচ- ঝুঁকি নিয়ে চলছে ইজিবাইক, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল। ভাঙ্গনের কারণে সড়ক সরু হয়ে যাওয়ায় রীতিমতো যানজট হচ্ছে। কারণ, একটি যানবাহন ওদিক থেকে আসার পর এদিক থেকে একটি পার হচ্ছে অতিসন্তর্পণে। এটা বরিশাল সিটি করপোরেশন এর ২৩ নং ওয়ার্ড সাগরদি বাজার থেকে দরগা বাড়ি সড়কের চিত্র। একই ওয়ার্ডে পাশেই প্রায় ১৫ বছর পর টিয়া খালি সড়কের উন্নয়ন কাজ ধরা হয়েছে। দুদিন হলো ভাঙ্গা সড়কের উন্নয়ন ঘটিয়ে কার্পেটিং করা হয়েছে। অথচ মাঠ থেকে সড়কে এসেই গরুর খুড় দেবে গেল এই পিচঢালা পথে। হুমড়ি খেতে খেতে গরুটি পা ঝাড়লো এবং সড়কের অনেকখানি চটলা বা পিচ উঠে গেল। ছুটে এসে আঙ্গুল দিয়ে পাথর তুলে দেখালেন স্থানীয় বাসিন্দা। কাজের মান নিয়ে সরদার বাড়ি পুল সংলগ্ন এই বাসিন্দা বললেন, ৬ মাসও টিকবে না এই সড়ক। বৃষ্টি হলেই ধেবে যাবে বা খানাখন্দের সৃষ্টি হবে আবার।
তাকে ধমকে থামিয়ে দিয়ে আরেকজন বললেন, ‘তুই কাজের মান কি বোঝ। ১৫/২০ বছর পর রাস্তা পাকা হইছে এটাই বড় কথা। হাঁটু কাদায় তো আর চলতে হইবোনা’।
জানা গেল, টিয়া খালি সড়কের ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ কাজ গত ১৫ অক্টোবর শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত দায়িত্ব গ্রহণের পর খাল পুনরুদ্ধার ও নগরীর ড্রেনগুলো আধুনিকায়নের জন্য ৭৯৭ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার। এই প্রকল্পের মধ্যে ২৬৮ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ এই মুহূর্তে চলমান রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ২৫০ কিলোমিটার রাস্তার কার্পেটিং, ৪৩ কিলোমিটার আরসিসি রাস্তা, ৫০ কিলোমিটার সিসি রাস্তা, ১০০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মান, ৯০৪৫ বর্গমিটার আরসিসি চত্বর, নগরের ২১টি রাস্তার মোড়ের সৌন্দর্যবর্ধন, নগরীতে ৪টি ভাস্কর্য নির্মাণ ও নির্মাণ সহায়ক যানবাহন ক্রয়। এছাড়াও বরিশাল নগরীর উন্নয়নের জন্য যৌক্তিক পর্যায়ে সাড়ে ৩ হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে আছে ৯২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর খাল খনন ও খালের দুই পাড়ে ওয়ার্কওয়ে নির্মানসহ নান্দনিক সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ। ২২শ কোটি টাকার আরো একটি সমন্বিত প্রকল্প। এরমধ্যে রয়েছে ফুটওভার ব্রিজসহ নগরীর রাস্তা, ড্রেন বিদ্যুৎ খাল ও পানি সরবরাহের অত্যাধুনিকিকরনের কাজ। এছাড়া অন্য একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করা হবে নতুন নান্দনিক অত্যাধুনিক নগরভবন তৈরির পরিকল্পনা। বিদায়ের আগ মুহূর্তে খোকন সেরনিয়াবাত ২৬৮ কোটি টাকার সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করে যান। তিনটি প্যাকেজে তিনজন ঠিকাদার ১৮টি প্রকল্পের কাজ করছেন বলে জানা গেছে।
সরকার পরিবর্তানের পর মেয়রকে অপসারণ করা হয়। তবে মেয়রের নেয়া পদক্ষেপ অনুসারেই চলছে বরিশাল সিটি করপোরেশন এর উন্নয়ন কাজ। মেয়রের স্থানে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার শওকত আলী। তিনি বলেছেন, উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। নিজেই তদারকি করেছেন বেশ কয়েকটি উন্নয়ন কাজ।
কিন্তু তার নজর এড়িয়ে গেছে সাগরদি খাল পুনরুদ্ধারে ভেঙ্গে যাওয়া সাগরদি- দরগা বাড়ি সড়ক।
২৩ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর এর দায়িত্ব পালন করছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্র্তা ডাঃ শুভ্র। তিনি বলেন, ভাঙ্গা সড়কের পাশেই আমার বাড়ি। রাতে কতটা ঝুঁকি নিয়ে আমাদের চলতে হয় তা বলে বোঝানো যাবে না। আগামী বৈঠকেই আমি সড়ক দুটির বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি প্রশাসককে জানাবো।
এ বিষয়ে প্রশাসক শওকত আলী বলেন, আমি ইতিমধ্যেই সড়কের কাজের মান যাচাই করতে লোক পাঠিয়েছি। আর দরগা বাড়ি সড়কে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।