4:00 pm , October 16, 2024

২ হাজার রোগীর শের ই বাংলা হাসপাতালে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা নেই
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বার বার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেও তা থেকে উত্তরণের কোন পথ খুঁজছেন না কর্তৃপক্ষ। এক হাজার শয্যার এ হাসপাতালটিতে প্রতিনিয়ত প্রায় দুই হাজার রোগী চিকিৎসাধীন থাকলেও তাদের ন্যূনতম নিরাপত্তার বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত। হাসপাতালের মূল ভবন ছাড়াও মেডিসিন ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা ৫তলা প্রশাসনিক ভবনটির কোথাও ন্যূনতম কোন অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা নেই। গণপূর্ত অধিদপ্তরের নকশায় নির্মিত এসব ভবনে অগ্নিনির্বাপনের কোন পরিকল্পনাও ছিলোনা।
গত রোববার সকালে হাসপাতালটির মূল ভবনের পূর্বপাশে ‘প্রশাসনিক ভবন’এর মেডিসিন ওয়ার্ডের নিচতলার স্টেররুমে এক ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে পুরো এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ভবনটির নিচ তলাতে আগুন সীমাবন্ধ থাকলেও গজ,ব্যান্ডেজ সহ নানা দাহ্য পদার্থের ধোয়ায় পুরো ভবনটিতে এক অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দায়িত্বশীল কতিপয় চিকিৎসক ও কর্মকর্তার খামখেয়ালীপনায় সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে ভবনটিতে মেডিসিন ওয়ার্ড চালু করা হয়েছিল। এখানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মেঝেতেও প্রতিদিন ৩শ রোগী চিকিৎনাধীন থাকছেন। অগ্নি দুর্ঘটনার দিনও ৫তলা ভবনটিতে কয়েক শ রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন।
দুর্ঘটনার পরপরই দমকল,পুলিশ ও হাসপাতাল কর্মীদের সহায়তায় সব রোগীকে নিরাপদে বের করে আনা ছিল অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। ওয়ার্ডটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রেও প্রায় ৫০ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এ হাসপাতালে একজন পরিচালক ও উপ-পরিচালক ছাড়াও দুজন সহকারী পরিচালক থাকলেও তারা নিয়ম মাফিক হাসপাতালের কোন ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন না। ফলে যে যার মত করে এ হাসপাতালকে নিজেদের খেয়াল খুশিমত পরিচালনা করেন। অব্যবস্থাপনা আর অনিয়মই দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়মে পরিনত হয়েছে। হাসপাতালটির মেডিসিন ওয়ার্ডের জন্য বরাদ্দকৃত ২৫৬ শয্যায় বুধবার প্রায় ৭শ রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। ফলে নিচতলা থেকে ৫ তলার মেঝেতেও রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না।
রোববার মেডিসিন ওয়ার্ডে অগ্নিকান্ডের পরে এবারো তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ছাড়াও জেলা প্রশাসন, গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ৭ সদস্যের এ কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। তবে এখনো অগ্নিকান্ডের কোন সূত্র উদ্ধার করতে পারেননি। বৃহস্পতিবার আবার কমিটি বৈঠকে বসছে। তবে প্রাথমিকভাবে স্টোররুমে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট আগুনের কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২০ সালে নির্মিত এ ভবনটিতে ওই বছরের মার্চে করোনা ওয়ার্ড চালু করার কয়েক মাসের মধ্যেই শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। উচ্চ ঝুঁকির সংক্রমক রোগীরা ভীতিকর অবস্থায় তখন রাস্তায় নামতে বাধ্য হন।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে হাসপাতালাটির হৃদরোগ বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র-আইসিসিইউ’তে একইভাবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগলে দ্রুত রোগীদের সরিয়ে নেয়ার সময় একজন রোগীর মৃত্যু হয়। অগ্নিকান্ডের আতংকে ওই রোগীর মৃত্যু হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা মানেননি। কর্তৃপক্ষের দাবী ‘ ওই রোগী অত্যন্ত নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হৃদরোগেই তার মৃত্যু হয়েছিল’।
গত রোববার আবারো এ হাসপাতালটির মেডিসিন ওয়ার্ডটিতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলো। এবারো যথারীতি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। বরাবরের মত এবারও এ কমিটি আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
এদিকে আন্দোলনের মুখে গত ২৯ সেপ্টেম্বর হাসপাতালটির পরিচালক ডাঃ সাইফুল ইসলাম পদত্যাগ করার পরে ইতোমধ্যে তাকে ওএসডি করা হয়েছে। কিন্তু প্রায় ২০ দিনেও এ হাসপাতালে নতুন পরিচালক নিয়োগ হয়নি। ফলে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ হাসপাতালটি চলছে না চলার মত করেই। সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোর থেকে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক নিয়োগের দাবী উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।