3:53 pm , October 12, 2024
আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর পাড় ঘেষে গড়ে তোলা মুক্তিযোদ্ধা পার্কটি হতে পারে চমৎকার পর্যটন আয়ের উৎস। এ কথা বলেছেন এখানে আগত দর্শনার্থীরা। তাদের দাবী, পার্কটির সংস্কার খুবই জরুরী প্রয়োজন। আলো, ছাওনি ও পাবলিক টয়লেট প্রয়োজন এখানে। এছাড়াও নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক বলয় তৈরি করা প্রয়োজন প্রশাসন থেকেই। এ নিয়ে ইতিপূর্বে লেখালেখিও হয়েছে। তারপরও আজ পর্যন্ত কোনো উন্নতি হয়নি এই পার্কের।
সরেজমিনে শনিবার দুপুরে ডিসি ঘাট এলাকা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পার্কের ভিতর প্রবেশ করতে গেলে প্রথমেই চোখে পড়ে বিশৃঙ্খলা পরিবেশ। ডিসি ঘাট থেকে মুক্তিযোদ্ধা পার্কের প্রবেশদ্বার পর্যন্ত গড়ে উঠেছে অনেকগুলো অবৈধ দোকানপাট। পাশেই বিশাল বস্তি এলাকার ছেলেমেয়েদের ছুটোছুটি, হাঁস মুরগীর ঘর, কাপড় শুকানোসহ বস্তিবাসী মহিলা- পুরুষের আড্ডার চিত্র এই এলাকার পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলে। একটু হেঁটে পার্কে প্রবেশ করতে গেলেই বাধা খাদ্য গুদামের মালামাল উঠানামা করানো শ্রমিকদের কারনে। তাদের টপকে পার্কের ভিতর প্রবেশ করে চোখে পড়ে স্কুল কলেজ পড়ুয়া কিশোর কিশোরীদের আড্ডা। আছেন লঞ্চের যাত্রীরাও। বয়স্ক কর্মহীন মানুষ। ছাগল ভেড়া, রাজহাঁস সবই আছে এখানে। শুধু নেই দর্শনার্থীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়, পাবলিক টয়লেট ও নিরাপত্তার নেই কোনো সুব্যবস্থা। প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এ পার্কটি বরিশালবাসী শুধু নয়, দূর দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের অন্যতম একটি আকর্ষণ।
২০১১ সালের ২৬ মার্চ এই পার্কটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরন। তবে এর কাজ শুরু হয় ২০১০ সালেই। নদীর তীরে মেরিন ওয়ার্কশপ এলাকায় সম্পূর্ণ পরিপাটি করে সাজানো গোছানো এ মুক্তিযোদ্ধা পার্কটি প্রাথমিক ভাবে নির্মান করতে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। ২০১২ সালে ২১ মার্চ আনুষ্ঠানিক ভাবে পার্কটির উদ্বোধন করেছিলেন পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই থেকে মুক্তিযোদ্ধা পার্কটি নগরবাসী তথা প্রকৃতিপ্রেমীদের বিচরণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছু না কিছু মানুষের উপস্থিতি এখানে সবসময় থাকে। পার্কের বেঞ্চে শুয়ে, বসে অবসর কাটান তারা। তবে বেশিরভাগ বেঞ্চ এখন ভেঙে গেছে। লাইটগুলো ভেঙে বা খুলে নিয়ে গেছে কেউ। নিরাপত্তার জন্য কোনো ব্যবস্থা যেমন নেই, তেমনি নেই প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেয়ার কোনো ব্যবস্থা এ অভিযোগ প্রায় সকলেরই। পার্কে ঘুরতে আসা কলেজ পড়ুয়া সোহানার অভিযোগ, এখানে বখাটেরা এসে তাদের বিরক্ত করে। তাছাড়া একটি পাবলিক টয়লেট থাকলে খুব ভালো হতো। জরুরী প্রয়োজনে মেয়েদের খুব সমস্যা হয় বলে জানান তিনি। আর বয়োবৃদ্ধ ব্যবসায়ী খান মোহাম্মদ বলেন, সন্ধ্যার পর পার্ক এলাকায় আসা যায়না। কোনো আলোর ব্যবস্থা থাকেনা। অন্ধকারের মধ্যে আজেবাজে আড্ডা দেখা যায়। এটা সন্ধ্যার পর অন্যজগত হয়ে যায়। অথচ এই পার্কটি শহরের প্রাণ। নদী তীরবর্তী বস্তিগুলো সরিয়ে দিলে এটিকে আরো দীর্ঘ করা যায় এবং সোজা ত্রিশ গোডাউন হয়ে কীর্তনখোলার ব্রীজে যাওয়া যেত। বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন মানিক বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে দীর্ঘ ৪০ বছর আমাদের দাবি ছিলো এ মুক্তিযোদ্ধা পার্ক নির্মানের জন্য। প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরনের প্রচেষ্টায় নির্মিত এই পার্কটি সাধারণ জনগনের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংশ্লিষ্ট কিছু ভাস্কর্য বা জাদুঘর থাকা উচিত ছিল । একটি মুক্তমঞ্চ এবং কয়েকটি ছাতা তৈরি করার কথা ছিলো। কথা ছিলো সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার। এটি সংরক্ষণ ও ভ্রমণকারীদের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দায়িত্ব। অথচ ইদানিং প্রায়ই অভিযোগ শুনছি পার্কে এটা ওটা দূর্ঘটনা ঘটছে। মানিক আরো বলেন, অনেকদিন পার্কটিতে যাওয়া হয়নি। তবে গত বছর ১২ আগস্ট বরিশাল সাহিত্য সংসদ আয়োজিত সাহিত্য আড্ডায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পার্কটির অবস্থা দেখে হতাশ হয়েছিলাম। তখনই এ নিয়ে প্রতিবাদ করি আমি। এ নিয়ে ঐ সময় সংবাদ হয়েছিল বলে জানান মহিউদ্দিন মানিক। আর নদী তীরবর্তী এই এলাকায় মাদকের অভয়ারণ্য দাবী বরিশালের সাংস্কৃতিক সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি নজমুল হোসেন আকাশের। তিনি বলেন, এখানে একটি মুক্তমঞ্চ ও বিদ্যুৎ পানি সুবিধাসহ একটি পাবলিক টয়লেটও রাখতে হবে। পাবলিক টয়লেট এখন আয়ের উৎস। আর উম্মুক্ত সাহিত্য সাংস্কৃতিক চর্চায় বাঁধা দেওয়া যাবেনা। এক্ষেত্রে কখনোই অনুমতির প্রয়োজন হয়না। বরিশাল সিটি করপোরেশন এজন্য অনুমতি দাবি করে বলেই নদী পার কেন্দ্রিক সাহিত্য আড্ডা কমে গেছে বরিশালে। নগরীর কোলাহল থেকে একটু স্বস্তি পেতে এবং খোলা আকাশের নিচে কীর্তনখোলা নদীর মুক্ত বাতাসের স্বাদ নিতে নগরীর অনেকেই ছুটে আসেন এই পার্কে। স্ব-পরিবারে কিংবা একা প্রতিদিন বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিড় বাড়ে মুক্তিযোদ্ধা পার্কে। পাশাপাশি এখানে সাহিত্য সাংস্কৃতিক আয়োজন হলে দর্শক আরো বিনোদন পাবেন। তবে সন্ধ্যার পর পার্কে ঘোরার পরিবেশ থাকেনা বলে জানান তারা।