3:57 pm , October 8, 2024
পঙ্গু বাবার হুইলচেয়ার ঠেলে জীবিকা নির্বাহ
আরিফ আহমেদ ॥ ছোট্ট মিষ্টি ও বিনয়ী শিশু নুসরাত। মায়াভরা চোখে দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভিক্ষা করছে। হাতের ইশারায় হুইলচেয়ারে বসা এক বৃদ্ধকে দেখিয়ে বলছে – ‘আমার বাবা কাজ করতে পারে না, পঙ্গু’। মাত্র পাঁচ কি ছয় বছর হবে এই শিশুটির বয়স। এই বয়সে ওর ভিক্ষার হাত কষ্ট দিলো বরিশালের জিলাস্কুলের সামনে চা দোকানে বসা প্রায় প্রতিজন মানুষকে। সবাই কমবেশি যার যার সামর্থ্য নিয়ে শিশুটির হাত ভরিয়ে দিলেন। শিশুটি তার সব উপার্জন নিয়ে তুলে দিলেন বৃদ্ধ পঙ্গু বাবার হাতে।
বাবা নুরে আলম জানালেন, ২০১৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পান তিনি। ধীরে ধীরে ইনফেকশন হয়ে ২০২১ সালে পুরো পাটাই কেটে ফেলতে হয় তার। একপায়ে কখনো খুড়িয়ে, কখনো হুইলচেয়ারে চলাচল এই মানুষটির। বরিশাল নগরীর কাউনিয়া বিসিক রোডের একটি বাড়িতে বসবাস তার। স্ত্রী ও দুই সন্তান। মেয়ে নুসরাত বড়। ছেলেটি ছোট। হুইলচেয়ার নিয়ে এভাবে কখনো একা, কখনো মেয়েকে সাথে নিয়ে ভিক্ষা করেই চলছে চারজনের জীবীকা। ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুর বারোটার কিছু পরে নুসরাত তার পঙ্গু বাবার হুইলচেয়ার ঠেলে চলে যায় দৃষ্টির আড়ালে। চা দোকানদার সুমন ও জসিম বলেন, ‘আপনিতো শহরে নতুন, জানেন না, অনেক ভিক্ষুক এভাবে ছোট শিশুদের ভাড়া নিয়ে তারপর ভিক্ষায় নামে এই শহরে’ । তাদের এ কথায় সায় দেয় চা দোকানে আড্ডারত আরো অনেকে। বিষয়টির অনুসন্ধানে উঠে আসে আরো করুন চিত্র। অসহায় পঙ্গু নুর আলমের দেয়া ঠিকানা খুঁজে প্রতিবেদক চলে আসে কাউনিয়ার বিসিক রোডে। এখানে আব্দুর রব সাহেবের বাড়ি ও মড়কখোলার ঠিক বিপরীতেই ভাড়া ঘরে থাকা নুরে আলম পরিবার প্রায় সকলের পরিচিত। উপরে টিন আর বাঁশের বেড়া দেয়া দুই রুম ও রান্নাঘর। মাটির চুলোয় রান্না তাদের। মাত্রই ঘরে ফিরে গোসল সেরে পরিচ্ছন্ন হয়েছে শিশু নুসরাত। চিনতে পেরে মা কাকলী বেগমকে সাথে নিয়ে অনেকটা ছুটে আসে ও। ছুটে আসেন তাদের আশ্রয় দেয়া বাড়িওয়ালা রেনু বেগম। কোলের শিশু সন্তানটি তখন বাড়িওয়ালার ঘরে ঘুমিয়ে আছে।
মা কাকলী বেগম বলেন, গত প্রায় ১০ বছর ধরে এই বাড়িতে ভাড়া থাকি। ঘরভাড়া ৩ হাজার টাকা। লাকড়ির চুলায় রান্না। কাঠ কিনতে হয়। খাবার টাকা ঠিকভাবে জোগাড় হয়না। বাচ্চারে পড়ামু কেমনে। ২০১৪ সালে রোড এক্সিডেন্ট করে স্বামী শয্যাশায়ী হয়। চার বছর আগে পা কেটে পুরোপুরি পঙ্গু হয় সে। বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন কাকলী বেগম। তারপর জানান, সরকারের কোনো সাহায্য সহযোগিতা তারা কখনোই পাননি। আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর চেয়ে আবেদন করেছিলাম। কেউ আমাদের ঘর দেয়নি।
বাড়িওয়ালা রেনু বেগম বলেন, খুব ভদ্র আর ভালো মানুষ এরা। ছোট কোলের শিশুটা আমার কাছেই বেশি থাকে। ওদের জন্য মায়া হয়। কিন্তু আমার তো ওদের জন্য কিছু করার সামর্থ্য নেই। এলাকার কাউন্সিলরের কাছে নিয়ে গেছিলাম। তারাও কিছু করে নাই । ওদের নিজস্ব কোনো ফোন নম্বরও নেই। আমার নম্বর (০১৩১৯০৫৭২৫২ এটা বিকাশ নম্বর)। এটাই ওদের ব্যবহার করতে দিয়েছি।
