অতি বর্ষণে চরম দু:শ্চিন্তায় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা অতি বর্ষণে চরম দু:শ্চিন্তায় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা - ajkerparibartan.com
অতি বর্ষণে চরম দু:শ্চিন্তায় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা

3:33 pm , October 4, 2024

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল কৃষি অঞ্চলে ৮ লাখ ৮৫ হাজার হেক্টরে আবাদ লক্ষ্য অর্জনের কাছে পৌঁছলেও বর্ষা মৌসুমের অনাবৃষ্টির পরে শেষ শরতের অতিবৃষ্টি কৃষি যোদ্ধাদের চরম দু:শ্চিন্তায় ফেলছে। প্রায় ১৪ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত বরিশাল কৃষি অঞ্চলে চলতি খরিফ-২ মৌসুমের শুরুতে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের অভাবে আমন বীজতলা ছিল হুমকির মুখে। এরপরেও লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১০৪% বীজতলা তৈরী হলেও গত মে মাসের ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’এ ভর করে প্রবল বর্ষণে এ অঞ্চলের বিপুল পরিমান জমির বীজতলা বিনষ্ট হয়েছে। ফলে বীজ সংকটে আমনের রোপন নিয়েও সংশয় ছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহলে।
তবে বীজ বিনিময় সহ নানা উপায়ে মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসে রোপা আমনের লক্ষ্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে বরিশালের কৃষিযোদ্ধারা। ডিএই’র হিসেব মতে গত বুধবার পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৯ ভাগ অর্জিত হয়েছে। দায়িত্বশীল মহলের মতে আজকালের মধ্যেই আমন আবাদের শতভাগ অর্জিত হবে।
সুতরাং এতদিন বরিশাল অঞ্চলের প্রধান ‘দানাদার খাদ্য ফসল’ আমনের আবাদ নিয়ে যে দু:শ্চিন্তা কাজ করছিল তার উত্তরন ঘটছে। কিন্তু বৃষ্টির খামখেয়ালিপনায় কৃষকদের মাঝে সেই দু:শ্চিন্তা আবার বেড়েছে। সাথে গত প্রায় ১৫ দিন ধরে সাগর কিছুৃটা ফুসে থাকার সাথে উজানের ঢলে বরিশাল অঞ্চলের অনেকগুলো নদ-নদী প্রায় বিপদসীমার কাছে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বর্ষণের সাথে নদ-নদীর প্রবাহ নিয়েও কিছুটা দু:শ্চিন্তা তাড়া করছে কৃষিযোদ্ধাদের।
চলতি খরিপ-২ মৌসুমে দেশে ৫৭ লাখ ১৮ হাজার ৩শ হেক্টরে পৌনে ২ কোটি টনেরও বেশী আমন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।  ডিএই’র মতে, এরমধ্যে বরিশাল অঞ্চলে ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩১০ হেক্টরে আবাদের মাধ্যমে ২৩ লাখ ৮০ হাজার ৫৫৮ টন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করেছে মন্ত্রণালয়। গত বছর দেশে আমনের উৎপাদন ছিল প্রায় ১ কোটি ৭৩ লাখ টন। এরমধ্যে বরিশাল অঞ্চলের অবদান ছিল প্রায় ২৩ লাখ টনের কাছে।
এবার মূলত বৈরী আবহাওয়া আউশের পরে আমনের আবাদকেও অনেকটা অনিশ্চত করে তুলছিল। সদ্যসমাপ্ত খরিফ-১ মৌমুমে দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ আউশ উৎপাদন এলাকা বরিশালে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার ৫০ ভাগও অর্জিত হয়নি বৃষ্টির অভাবের সাথে গত ২২মে’র ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’এর কারনে।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, চলতি বছরের শুরু থেকে অব্যাহত অনাবৃষ্টির পরে ঘূর্ণিঝড় রিমাল’এ ভর করে বরিশালে স্বাভাবিকের প্রায় ৫০ ভাগ বেশী বৃষ্টি হলেও জুন ও জুলাই মাসে ব্যাপক ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে।  অপরদিকে ভাদ্রের পূর্ণিমায় ভর করে প্রবল বর্ষণে আগষ্ট মাসে বৃষ্টিúাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের ৬২% বেশী। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বরে আবহাওয়া বিভাগ থেকে ২৮৫ থেকে সাড়ে ৩শ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হলেও মাসের প্রথম ২০ দিনেই প্রায় ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হবার পরে মাস শেষের যোগফলে বরিশালে স্বাভাবিকের প্রায় ৫৩% বেশী বৃষ্টি হয়েছে বলে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে। চলতি অক্টোবরে ১৭০-২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হলেও মাসের প্রথম ৩ দিনেই ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে । অপরদিকে বৃষ্টিপাতের স্বাভাবিক স্তর অতিক্রম করলেও ইতোমধ্যে তাপমাত্রার পারদও স্বাভাবিকের ৩-৫ ডিগ্রী পর্যন্ত ওপরে।
শনিবারের মধ্যেই বরিশাল অঞ্চল সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরে আরো একটি লঘুচাপ সৃষ্টির কথা জানিয়ে রোববারের পরবর্তি ৫দিন বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। কৃষিবীদদের মতে বর্তমান শরতের শেষ সময়ে স্বাভাবিক বর্ষণ রোপা ও বোনা আমনের জন্য কোন বিরুপ পরিস্থিতি তৈরী করার কথা নয়। কিন্তু দীর্ঘ অনাবৃষ্টির পরে গত দুই মাস অতি বর্ষণ আউশের মত আমনের ভাগ্যে কোন বিপর্যয় তৈরী করে তা নিয়ে দু:শ্চিন্তা তাড়া করছে কৃষি যোদ্ধাদের।
এধরনের যেকোন বিপর্যয় কৃষি নির্ভর বরিশাল অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে চরম সংকট তৈরী করতে পারে বলে শংকিত মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদরা। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পার্যন্ত ঘনকালো মেঘে ঢাকা বরিশাল অঞ্চলে প্রায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ব্যাপক গর্জনের সাথে বৃষ্টিপাতে জনজীবন ছিল বিপর্যস্ত।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT