4:21 pm , September 30, 2024
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ভূমি অধিগ্রহণে দীর্ঘ কালক্ষেপন সহ ব্যায় বৃদ্ধির কারণে রাজধানী সহ সারা দেশের সাথে বরিশাল অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের মূল সেতুবন্ধন ৮ নম্বর জাতীয় মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরন প্রকল্পটি নতুন করে অনিশ্চয়তার কবলে। অর্থ বরাদ্দ থাকার পরেও নানা জটিলতায় নির্ধারিত সময়ের ৩ বছর পরেও ভূমি অধিগ্রহণ সম্ভব হয়নি। ৩গুন ব্যায় বৃদ্ধির প্রস্তাব পরিকল্পনা কবমিশনে আটকে যাবার পরে রোববার এ সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রাথমিকভাবে বরিশাল সীমান্ত পর্যন্ত ৬ লেন প্রকল্পের জন্য ভূমি হুকুম দখলের প্রস্তাবনা পেশ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বরে জানা গেছে। ভূমি অধিগ্রহণে ব্যায় বরাদ্দ বৃদ্ধির একটি প্রস্তাবনা সম্প্রতি একনেক-এর সভায় উপস্থাপনের কথা থাকলেও তা ফেরত পাঠানোর পরে রোববার বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে ভূমি অধিগ্রহণে নতুন সিদ্ধান্তের ফলে বরিশাল মহানগরী পেরিয়ে লেবুখালীতে পায়রা সেতু পর্যন্ত লেন মহাসড়ক প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের ডিপিপি দাখিল করা হবে। পরবর্তিতে মহাসড়কটির পটুয়াখালী-পায়রা বন্দর হয়ে কুয়াকাটা অংশের ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
বরিশাল-ফরিদপুর ও বরিশাল-পটুয়াখালী-পায়রা বন্দর-কুয়াকাটা মহাসড়কটির উপরই সারা দেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলার সড়ক পরিবহন নির্ভরশীল। এমনকি প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ‘পদ্মা সেতু ও সংযুক্ত এক্সপ্রেসওয়ে’র সুফলও নির্ভর করছে এ মহাসড়কটির উন্নয়নের উপর। ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু হবার পরে বরিশাল অঞ্চলের জাতীয় এ মহাসড়কটি ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের বাড়তি চাপ ইতোমধ্যে দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি সহ নানা বিড়ম্বনার সৃষ্টি করেছে। এমনকি বাড়তি যানবাহনের কারণে এ মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ৯১ কিলোমিটার মহাসড়কে যানবাহনের গতি এখন অনেক ধীর। ফলে আগের চেয়ে বাড়তি সময় লাগছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২১১ কিলোমিটার দীর্ঘ বরিশাল-ফরিদপুর ও বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা জাতীয় মহাড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সহ পথনকশা তৈরী করা হয়।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ ও সমীক্ষার পথনকশা অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণে ১ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে ২০১৮ সালে একটি আলাদা প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও ২০২৪ সালের জুনে চাহিদার অর্ধেক ভূমিও অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়নি। ইতোমধ্যে ভূমির দামও প্রায় ৩গুন বেড়েছে। ফলে অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য পরিশোধে বাড়তি টাকার প্রয়োজন হচ্ছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে বাস্তবতার আলোকে বরিশাল মহানগরীর পরিবর্তে প্রায় ১৬ কিলোমিটার বাইপাস নির্মানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ায় বাড়তি জমি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে। পটুয়াখালীতেও পথনকশায় কিছু পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এছাড়া বরিশাল বিমানবন্দর ডাইভার্শন ও ফরিদপুরে একটি প্রতিবন্ধী স্কুলের পুনর্বাসনেও অতরিক্ত অর্থ ব্যায় হবে। সব মিলিয়ে আরো অন্তত ২শ হেক্টর বাড়তি ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকার প্রকল্পব্যায় ৫ হাজার ৮০০ কোটিতে উন্নীতকরনের লক্ষ্যে ‘সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা-ডিপিপি’ সড়ক অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয় হয়ে পরিকল্পনা কমিশনে উপস্থাপনের পরে তা অনুমোদন না দিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রোববার বৈঠকে বসেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা।
জমির বর্তমান বাজার মূল্য বৃদ্ধি সহ নতুন পথনকশা অনুযায়ী বাড়তি প্রায় ২শ হেক্টর সহ ৩ হাজার ৭শ হেক্টর জমির মূল্য পরিশোধেই বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হবে বলে সড়ক অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
তবে এপর্যন্ত বরিশাল সড়ক বিভাগের ৩৩ কিলোমিটার ও মাদারীপুর অংশে মাত্র ৭ কিলোমিটার অংশে ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে অধিগ্রহণকৃত ভূমির অর্থ পরিশোধ হলেও সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরে অধিগ্রহণ বাবদ বরাদ্দকৃত ৮৯০ কোটি টাকার পুরোটাই ফেরত গেছে বলে জানা গেছে। ফলে গত প্র্রায় ৭ বছরে বরিশাল-ফরিদপুর ও বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কটির ভূমি অধিগ্রহণের অগ্রগতিও তলানীতে।
তবে কি করণে নির্ধারিত সময়ের ৩ বছর পরেও ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলোনা এর জবার নেই কারো কাছে। সড়ক অধিদপ্তরের বরিশাল জোনের এক কর্মকর্তা বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ একটি জটিল বিষয় হলেও এত দীর্ঘ সময় ব্যায় হওয়া উচিত ছিল না। তাদের মতে ৬টি জেলার জেলা প্রশাসন এ ভূমি অধিগ্রহণের সাথে জড়িত। বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের ল্যান্ড এক্যুইজিশন দপ্তর সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে অনেক কিছু পিছিয়ে গেছে।
অপরদিকে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও পথনকশা অনুযায়ী ২১১ কিলোমিটার মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণে ২১ হাজার কোটি টাকার সম্ভাব্য ব্যায় ধরা হলেও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক নতুন করে সব কিছু করতে বলেছে। এডিবি’র অর্থে ইতোপূর্বে সমীক্ষা ও পথনকশা প্রস্তুত হলেও দাতা সংস্থাটি আগের সবকিছু সংশোধন করে নতুন করে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সহ নকশা প্রনয়নের করতে বলেছে। দাতা সংস্থাটি এ প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে বলেও জানা গেছে। তবে ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা সহ সড়ক অধিদপ্তরের তরফ থেকে প্রয়োজনীয় কাজের অগ্রগতি যথেষ্ট পিছিয়ে পড়ায় অতি জনগুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি এখনো অনেকটা অনিশ্চয়তার কবলে ।
সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে ভূমি অধিগ্রহণ চূড়ান্ত অনুমোদন না করায় এডিবি’র পক্ষ থেকেও বাড়তি কোন আগ্রহ দেখানো হচ্ছে না। নতুন পথনকশা ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষার লক্ষে গত ছয় মাসেরও বেশী সময় ধরে ধীরালয়ে কাজ চলছে। কবে নাগাদ এসব বিষয়ে চূড়ান্ত হবে তা বলতে পারেননি সংশ্লিষ্ট মহল।
পরিকল্পনা কমিশনের উচ্চ পর্যায় থেকে ইতোপূর্বে সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী-এডিপি’র সবুজ পাতায় ‘ফরিদপুর-বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প’টি অন্তর্ভূক্তির ব্যাপারে সড়ক অধিদপ্তর সহ সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল মহল আশাবাদী।