3:40 pm , September 29, 2024
আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ সড়কে পা রাখা মাত্রই পিছলে পড়ে হাত-পা ভেঙেছেন এই গ্রামের অনেকে। একটু বৃষ্টি হলেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। প্রায় ছয়-সাত কিলোমিটার এরকম মাটির সড়ক আর হেরিংবন বা ইটা বিছানো পথ আছে চার-পাঁচ কিলোমিটার। সে পথের অবস্থা আরো ভয়াবহ। শীতকালে কুয়াশায়ও পা পিছলে যায় বলে জানালেন গ্রামবাসী। বলছিলাম পূর্ব সুন্দরকাঠী গ্রামের কথা। বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল ইউনিয়নের একটি গ্রাম। গত পনের বছরে এই গ্রামের সড়কের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা উজ্জ্বল। আর সংসদ সদস্য ছিলেন জাতীয় পার্টির নাসরিন জাহান রতœা। যদিও এলাকায় রতœা আমিন কখনোই কোনো ভূমিকা রাখেননি বলে ঐ সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাই তার বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছিলেন এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিককে জয়ী করেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি জয়ী হলেও দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ৫ মাস।
বরিশালের বাকেরগঞ্জের গোমা বাজারের চা দোকানে চলছিল এ নিয়েই বাগবিতন্ডা। দুধল ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য কামরুল, শাহিন ও সিদ্দিক একত্রিত হয়ে রাঙামাটি নদীর পারের এই গোমা বাজারে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। বাইরে তখন তুমুল বৃষ্টি। দুধল ইউনিয়নে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে লং মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনজন শহীদ হয়েছেন। যাদের দু’জনের বাড়ি ইউপি সদস্য শাহিনের গ্রাম সুন্দরকাঠীতে। একজনের বাড়ি কবিরাজ গ্রামে। ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুরের পর বৃষ্টিভেজা পথে গোমা ফেরীঘাটে দেখে গেলো মাথার উপর ঝুলে আছে অসমাপ্ত সেতুটি। ইউপি সদস্য ও গ্রামবাসীর আলোচনার বিষয় ছিলো এই গোমা সেতুর বাকীটা কাজ কতদিনে শেষ হবে? তাদের আলোচনা সেতুর নির্মাণ দিয়ে শুরু হয়ে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া ও সড়কের বেহাল দশায় এসে থমকে যায়। পুর্ব সুন্দরকাঠী গ্রামের গরুর হাট ও স্কুলের মাঠের অবস্থা এবং খালের ওপারে কবাই ইউনিয়ন পর্যন্ত পিচ্ছিল পথ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাসিন্দারা। ইউপি সদস্য শাহিন স্বীকার করেন, তিনি বারবার এই সড়কের কাজ নিয়ে চাপাচাপি করলেও চেয়ারম্যান উজ্জ্বল এ নিয়ে কোনো ভূমিকা আগে রাখতে পারেননি। কারণ রতœা আমিন তো কখনো আমাদের সাথে দেখাই করতেন না। হাফিজ মল্লিক অবশ্য বলেছিলেন, দুধল ও দাঁড়িয়াল ইউনিয়নের সড়কগুলো খুবই জরুরীভাবে দেখবেন। তিনিতো পাঁচ মাস ছিলেন। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি গ্রামের দিকে দৃষ্টি দেয়।
গ্রামের মানুষ কতটা সচেতন তা আরো স্পষ্ট হয় ইউপি সদস্য শাহিন এর দেখানো পথে পূর্ব সুন্দরকাঠী গ্রামের ভিতরে হাওলাদার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে। এঁটো কাদা পিচ্ছিল পথ পেরিয়ে প্রায় ৩-৪ কিলোমিটার ভিতরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ঢাকার বাড্ডায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ সাজিদ হাওলাদার এর সমাধি এই গ্রামে। গ্রামে আসার পথেই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাইস্কুল। যে স্কুলের মাঠে গরুর হাট বসে সপ্তাহে একদিন। হাটু কাদা ভরা মাঠ পার হয়ে একটি ছোট্ট ব্রীজ। ব্রীজের ওপারে ইটা বিছানো পায়েচলা সরু পথ। ইটা বিছানো এই পথে পা রাখা মাত্রই পিছলে পরার উপক্রম হয়েছিল। সাজিদ হাওলাদার এর সম্পর্কে জানতে সরকারি লোকও এই ব্রীজ পর্যন্ত এসে ফিরে গেছেন। এদিকে আর ঢোকেননি। তারা যদি সত্যি দেশের মানুষকে ভালবাসতেন তাহলে সাজিদ হাওলাদার এর কবর পর্যন্ত অবশ্যই যেতেন।তাহলেই জানতে পারতেন আমাদের গ্রামের জীবন কতটা কষ্টকর।
ইটা বিছানো এই সড়ক ১ কিলোমিটারের মতো, তারপর আরো ভয়ঙ্কর সরু ও পিচ্ছিল মাটির সড়ক। শহীদ সাজিদ হাওলাদার এর বড়চাচা মোতালেব হাওলাদার থাকেন এখানে গ্রামের বাড়িতে। জানালেন, ৫/৬ কিলোমিটার এরকম মাটির সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল তাদের। যে কারণে সাজিদ হাওলাদার এর বাবা-মা ও স্ত্রী সহ তিন বছরের শিশু সন্তান নিয়ে তারা শহরে থাকেন। গ্রামে আসা-যাওয়া খুব কম। তিনি বলেন, বরিশালে চাকুরজীবি এই গ্রামের অনেক বাসিন্দাও এখন আর গ্রামে আসেন না বলে জানান তিনি।
গ্রামের সড়কের এই পরিস্থিতি তুলে ধরলে বাকেরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুর রহমান বলেন, এটা দেখার দায়িত্ব যদিও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের। তারপরও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে আমি এলজিইডির সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো।
সাইফুর রহমান আরো বলেন, বাকেরগঞ্জের দুধল, দাঁড়িয়ালসহ চড়াঞ্চলের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এজন্য ১০২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জমা দেয়া হয়েছে। সেটি অনুমোদন হলে হয়তো এসব কর্দমাক্ত সড়ক আর থাকবে না।