3:36 pm , September 29, 2024
গৌরনদী প্রতিবেদক ॥ বরিশালের গৌরনদীতে ভুল চিকিৎসায় এক সদ্যজাত শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আর এ জন্য দায়ী করা হচ্ছে পিজিটি গাইনী ডা. মো. এনামুল হকের বিরুদ্ধে। গৌরনদী আখি ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্বজনরা গত বৃহস্পতিবার সকালে ক্লিনিক কর্মচারী ও নার্সদের ওপর চড়াও হয়। খবর পেয়ে একদল সেনাসদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ওইদিন বিকালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় প্রসূতি শিমু বেগমকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সিমু বেগমের স্বামী আগৈলঝাড়া উপজেলার বেলুহার গ্রামের আব্দুর রহিম ভূঁইয়া অভিযোগ করে বলেন, আমার স্ত্রী সিমু (২৮) এর প্রসব বেদনা শুরু হলে গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে গৌরনদী আখি ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাই। সেখানের ডিউটি ডাক্তার আমার স্ত্রীর ব্লাডসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করায় ও পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে রাত ১০টার দিকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করেন। রাত সাড়ে ১০টার দিাকে আমার স্ত্রীকে ওটিতে নিয়ে জোরপূর্বক স্বাভাবিক ডেলিভারী করানোর চেষ্টা করে। কিন্তুু রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাতে ব্যর্থ হয়ে আমাকে ক্লিনিকের মালিক জাকির হোসেন জানান ‘ রোগীর সিজার করা লাগবে’। এতে যাবতীয় খরচসহ ২০ হাজার টাকা দরকার। আমি রাজি হয়ে প্রথম ৭ হাজার টাকা দিলে রাত ১টার দিকে এ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক মাসুদকে সাথে নিয়ে গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. মো. এনামুল হক আমার স্ত্রীর সিজার করেন। এ সময় ক্লিনিকের মালিক জাকির হোসেন আমাকে জানায়, ‘নবজাতক ছেলে সন্তান অসুস্থ, নড়েচড়ে না। তাই নবজাতককে বরিশাল শেচাচিম হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করতে হবে। তাৎক্ষনিক মোবাইল ফোনে জাকির হোসেন ২৫’শ টাকায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ক্লিনিকের সামনে আনেন। তখন নবজাতক ছেলে সন্তানকে কাঁথা দিয়ে প্যাচানো অবস্থায় রাত ২টার দিকে মালিকের বোন হালিমা বেগম কোলে করে বের হয়ে অ্যাম্বুলেন্সে উঠেন। এ সময় আমি অ্যাম্বুলেন্সে উঠে বসলে প্যাচানো অচেতন নবজাতককে আমার কোলে দিয়ে হালিমা অ্যাম্বুলেন্স থেকে নেমে যায়। নবজাতক সন্তান জীবিত আছে কিনা আমি জানতে চাইলে তখন ক্লিনিক মালিক জাকির হোসেন আমাকে জানায়, নবজাতক ছেলে সন্তান জীবিত আছে, বরিশাল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিলে সুস্থ হয়ে যাবে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে শেবাচিম হাসপাতালে নবজাতককে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন ‘নবজাতক আগেই মারা গেছে। ভুল চিকিৎসার কারণে নবজাতক ছেলে সন্তান মারা যাওয়ার ও আমার অসুস্থ হয়ে পড়ার খবরে স্বজনরা ক্লিনিক কর্মচারী ও নার্র্সের ওপর চড়াও হয়। খবর পেয়ে একদল সেনাসদস্য ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি শান্ত করে। পিজিটি গাইনী চিকিৎসক মো. এনামুল হক বলেন, সিজারের পর নবজাতক ছেলে সন্তানের হাটবিট ছিল, কিন্তু কান্না করেনি। তাই তাৎক্ষনিক নবজাতককে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছিল। প্রসূতি মায়ের প্রসাবে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। এটা কিন্তু সিজারিয়ান অপারেশনের কারণে রোগীর এ সমস্যা হয়নি। আখি ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সিরাজুল ইসলাম ও ম্যানেজার জাকির হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রসূতি মা সিমু বেগমকে তার স্বজনরা প্রথমে খ্রীষ্টান মিশনে নিয়ে ধাত্রি দিয়ে নরমাল ডেলিভারী করাতে ব্যর্থ হয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমাদের ক্লিনিকে নিয়ে আসেন। আমরা ওই প্রসূতি মায়ের অবস্থা খারাপ অবস্থা দেখে ক্লিনিকে ভর্তি করতে চাইনি। প্রসূতি মায়ের স্বামী কান্না ও অসহায়ত্ব প্রকাশ করে সিজার করার জন্য পায়ে ধরে অনুরোধ করেন। রোগীর স্বামীর অনুরোধের পর লিখিত নিয়ে রোগীকে ভর্তি করে সার্জারি ডাক্তার ডেকে সিজার করাই। ওই রোগীকে আমরা যথাসাধ্য চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছি। গৌরনদী থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।