3:38 pm , September 26, 2024
এখনও ভর করে আছে আওয়ামী ঠিকাদার সিন্ডিকেট
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আওয়ামী সিন্ডিকেটের ইজারাদারকে কাজ বাগিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশাল কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অনৈতিকভাবে লাভবান হয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিহন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম এর প্রত্যক্ষ ইশারায় এমনটা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে অভিযোগকারিরা। সম্প্রতি একটি টেন্ডারে অসম্পূর্ন ও ভুলে ভরা দরপত্র জমা দেয়া আওয়ামী পন্থি ইজারাদারকে কাজ দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ ওঠার পর বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলছে, অতিতের কোন অনিয়ম আর বরদাস্ত করা হবেনা এবং অনিয়ম প্রমানিত হলে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে কঠোরহস্তে। তবে তা উপেক্ষা করে এখনও কিছু দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তারা তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানায় অভিযোগকারিরা। বিস্তারিত অভিযোগে জানা যায়, ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান সাইফুল্লাহ পনির তার লোকজন নিয়ে গত চার বছর কোনো প্রকার টেন্ডার ছাড়াই ঝালকাঠির গাবখান চ্যানেলের টোল আদায় করতেন। ওই সময়ের মধ্যে তিনি তার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এবং আইনী মারপ্যাচে ফেলে দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এই চ্যানেলটির টেন্ডার প্রক্রিয়া আটকে রাখেন। তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রায় ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নৌ-চ্যানেলটির দরপত্র আহ্বান করে বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র বন্দর ও পরিবহন বিভাগ। যেখানে বরিশালের বিভিন্ন জেলা উপজেলার মোট ৩৬ টি লঞ্চঘাট সহ ঝালকাঠির গাবখান খাল-টোল স্টেশনের ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে আগামি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ইজারার দরপত্র আহবান করা হয়। জেলা প্রসাশক কার্যালয়, বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশাল কার্যালয় সহ ঢাকার মোট ৪ টি অফিসে গত ২৪ সেপ্টেম্বর বেলা ১ টা পর্যন্ত ছিল দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময়। এই ইজারার জন্য একাধিক দরপত্র দাখিল হয়। এর মধ্যে ঝালকাঠির আওয়ামীলীগ নেতা মো. তৌহিদ আকনের মালিকানাধীন মেসার্স তাছবি বিল্ডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ দরদাতা হয়। ইজারার জন্য ৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা দর দেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে ঐদিন বিকেল ৩ টায় সকল অংশগ্রহনকারিদের সামনে দরপত্রগুলো উন্মুক্ত করা হলে তাছবি বিল্ডার্স এর দরপত্রের সঙ্গে জমাকৃত কাগজপত্রে গুরুত্বর কিছু ত্রুটি থাকায় সেটি নিয়ে বিতর্ক ওঠে। আহবানকৃত দরপত্রের নোটিশে বিআইডব্লিউটিএ’র শর্ত অনুযায়ী টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া কোনো পক্ষ নির্ধারিত শর্ত পূরণ না করলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে এমনটা স্পস্ট উল্লেখ করা রয়েছে।
কিন্তু তাছবি বিল্ডার্স কর্তৃক জমাকৃত দরপত্রে দেখা যায়, দরপত্রের ৫ নম্বর পৃষ্ঠা পূরণ অসম্পূর্ণ, ১০ নম্বর পৃষ্ঠায়ও চাহিদা অনুযায়ী তথ্য দেওয়া হয়নি, দরপত্রের শর্তে চারিত্রিক সনদপত্র দেওয়ার বিধান থাকলেও তা সরবরাহ করেননি, দরপত্রের সঙ্গে জমাকৃত সকল কাগজপত্র সত্যায়িত করার শর্ত থাকলেও কোনো কাগজপত্রই তারা সত্যায়িত করেনি এছাড়া তারা যে সংখ্যক ছবি জমা দেয়ার কথা ছিল তাও ঠিক রাখেনি। এর বাইরে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মতে পূর্বের কিছু জটিলতা থাকায় এক্সিম ব্যাংকের কোনো পে-অর্ডার গ্রহণ যোগ্য হবেনা বলে সকল অংশগ্রহনকারিদের জানানো হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও তাছবি বিল্ডার্স উক্ত ব্যাংকের ৫ লাখ টাকা করে দুটি পে-অর্ডার দাখিল করেছেন দরপত্রের সাথে। যা গ্রহন করা না হলে তাছবি বিল্ডার্স সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবেও গন্য হবে কিনা তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
ঐ সময় বিষয়গুলো বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশাল কার্যালয়ের পোর্ট অফিসার আব্দুর রাজ্জাকের সামনেই প্রমানিত হয়। তাছবি বিল্ডার্স এর এমন ত্রুটি গুলো তিনিও সকলের সামনেই মেনে নেন। তবে তখন তিনি ভুল থাকা সত্বেও ত্রুটিপূর্ন এই দরপত্র বাতিলে অপারগতা স্বিকার করেন। কেন তিনি প্রকাশ্যে ত্রুটিগুলো দেখে এবং বুঝেও কিছু করতে পারছেন নাহ এমন প্রশ্ন করা হলে, সকল অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে তা ঢাকা প্রেরন করা ছাড়া তার হাতে কিছুই করার নেই বলে জানান। তাৎক্ষনিক অংশ নেয়া অন্য ঠিকাদাররা পোর্ট কর্মকর্তার মাধ্যমে অসংগতিগুলো লিপিবদ্ধ করে ঢাকায় প্রেরন করে। তবে দুইদিন অতিবাহিত হলেও এখনও এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি বলে জানিয়েছে অভিযোগকারিরা। উল্টো নোটিশে উল্লেখিত শর্ত ভংগ করার মত গুরুত্বর ভুল প্রমানিত হলেও তা সামান্য ভুল বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিহন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম।
এই অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিহন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এগুলো খুবই সামান্য ভুল। এই ভুলে দরপত্র বাতিল হয় না। দরপত্র বাতিল হলে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হবে। সুতরাং এটা করা যাবে না।
অন্যদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশাল কার্যালয়ের পোর্ট অফিসার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কিছু সামান্য ভুল ছিল তাছবি বিল্ডার্স নামের ওই ঠিকাদারের দরপত্রে। ঢাকায় সকল অভিযোগের বিষয়টি দেখা হচ্ছে। তিনি কিছুই জানেন না। তার করার কিছুই নেই। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিউটিএ’র শর্ত ভঙ্গ করার পরেও কেনো তাছবি বিল্ডার্সকে এখনও নিয়মানুযায়ি অবৈধ ঘোষনা করা হচ্ছেনা এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
তবে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা জানান, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় সামান্য ভুলকেও এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা কাগজপত্র দেখবো। সেখানে ভুল থাকলে অবশ্যই সেটি বাতিল করা হবে। অতীতে অধিদপ্তর যেভাবে চলেছে সেভাবে সামনে আর চলবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সূত্র জানিয়েছে, তৌহিদ আকন মূলত আওয়ামী লীগ নেতা খান সাইফুল্লাহ পনিরের লোক। তাকে দিয়েই এই চ্যানেলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চাইছেন পনির। যে কারনে নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশাল ও ঢাকার কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে টেন্ডার বাগিয়ে নিতে চাইছেন তিনি।