3:46 pm , September 25, 2024
কাউখালী প্রতিবেদক ॥ কাউখালীতে সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত জেলেরা। তাদেরকে বাদ দিয়ে জেলে কার্ড দেওয়া হয়েছে মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীদের নামে। উপজেলার নিবন্ধিত জেলেদের তালিকায় রয়েছে অর্ধ শতাধিক মৃত ব্যক্তি ও প্রবাসীদের নাম।
জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, নিবন্ধন না থাকায় কোনো খাদ্য সহায়তাও তারা পাননি। আবার কার্ডধারী হলেও টাকা না দিতে পারলে তাদের নাম তালিকায় থাকে না। ফলে পেটের দায়ে মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময়ে নদীতে নেমে আটক কিংবা নির্যাতনের শিকার হন। হারিয়ে ফেলেন জাল ও নৌকা। গত ১২ বছর ধরে এমনটাই চলছে। উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার বিভিন্ন জেলে পাড়ায় ঘুরে স্থানীয় জেলেদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানাগেছে। জেলেরা জানান, আওয়ামী সরকার সমর্থিত ব্যবসায়ী ও স্বচ্ছল ব্যক্তিরা জেলে কার্ডধারী। মৃত কিংবা পেশা পরিবর্তনকারীরাও জেলে। কিন্তু প্রকৃত ও নতুন জেলেরা তালিকায় নেই। জেলেদের তথ্য মতে তালিকায় প্রায় শতাধিক ভুয়া জেলে রয়েছে। আবার প্রকৃত জেলেও বাদ পড়েছেন। কাউখালী মৎস্য অফিস দাবি করছে, ২০১২ সালের তালিকা তৈরির পর ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর হালনাগাদ করে কিছু ভুয়া ও অন্যপেশার লোককে জেলে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে নতুন জেলেদের নাম যুক্ত করা হয়।
উপজেলায় সর্বমোট ২ হাজার ২৭৫ জন নিবন্ধিত জেলেদের কার্ড রয়েছে। এর মধ্যে সয়না রঘুনাথপুর ইউনিয়নে ৫১১ জন, আমড়াজুড়ি ইউনিয়নে ৪২৮জন, সদর ইউনিয়নে ২১১জন, চিড়াপাড়া পারসাতুরিয়ায় ৬৪৫ জন ও শিয়ালকাঠি ইউনিয়নে ৪৮০ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে, চিড়াপাড়া-পারসাতুরিয়া ইউনিয়নের কেশরতা বিজয়নগর ৯ নং ওয়ার্ডের ৮৫ জন নিবন্ধিত জেলেদের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায় এই তালিকায় পাঁচজন রয়েছে মৃত ব্যক্তির নাম। মৃত ব্যক্তিরা হলেন : মোঃ জাকির হোসেন (ক্রমিক নং ১৩০), আব্দুল আউয়াল হাওলাদার (ক্রমিক নং ১৩৭), আলমগীর হোসেন হাওলাদার (ক্রমিক নং ১৪১), মোঃ আবুল কালাম (ক্রমিক নং ৩৫৯), মোঃ খালেক মোল্লা (ক্রমিক নং ৩৯২)।
মৃত আব্দুল আউয়াল হাওলাদার এর ছেলে মিজান হাওলাদার জানান, তার বাবার নামে যে জেলে কার্ড রয়েছে তা তিনি জানতেন না। কিন্তু তার নামে বরাদ্দকৃত খাদ্য সহায়তা এতদিন আত্মসাৎ করে আসছে একটি পক্ষ।
এছাড়া যারা বিদেশে রয়েছেন এরকম রয়েছেন জন। এরা হলেন : রনজিৎ মৃধা (ক্রমিক নং ১৪২) বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। মোঃ মনির হাওলাদার বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। এছাড়া একই ব্যক্তির একাধিক স্থানে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে বরাদ্দকৃত সরকারি সহায়তা দীর্ঘদিন ধরে আত্মসাৎ করে আসছেন।
মোঃ চুন্নু জোমাদ্দার যার এক জায়গায় ক্রমিক নং-৩৫৭ অন্য জায়গায় ক্রমিক নং-৪১২, মোঃ বেলায়েত হোসেন এক স্থানে ক্রমিক নং-৩৫৮ অন্যস্থানে ক্রমিক নং-৩৯৭।
বিজয়নগর গ্রামের জেলে খলিলুর রহমান জানান, কেশরতা বিজয়নগর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আজিজুল হক এসব জেলেদের নামে বরাদ্দকৃত খাদ্য সহায়তা মাস্টাররোল দেখিয়ে আত্মসাৎ করে আসছে।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য মোঃ আজিজুল হক বলেন, একই পরিবারের পাঁচজনের নামে জেলে কার্ড থাকায় ও অন্য পেশার থাকায় সবাইকে চাল দেয়া সম্ভব হয়নি। এবং মৃত ব্যক্তির নামে চাল তুলে নেয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় একজন জেলে ৬০ দিনের জন্য ৫৬ কেজি এবং ৩০ দিনের জন্য ৪০ কেজি চাল পেয়ে থাকেন।
চিরাপাড়া-পারসাতুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান লাইকুজ্জামান মিন্টু বলেন, মৎস্যজীবীদের এই তালিকা প্রায় ১২ বছর আগের করা তাই অনেকে আছে যাদের জেলে কার্ড রয়েছে কিন্তু তারা স্থানে থাকে না । যখন চাল দেয়া হয় তখন তাদের পরিবারের লোকজন জেলে কার্ড নিয়ে আসলে আমরা কার্ড দেখে খাদ্য সহায়তা প্রদান করে থাকি। বর্তমানে তালিকা হালনাগাদ এর কাজ চলছে।
কাউখালী উপজেলার জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক জিয়া বলেন, প্রতিবছর সঠিকভাবে যাছাই-বাছাই করা হয় না। মোঃ নান্না মোল্লা নামের এক জেলে বলেন, খাদ্য সহায়তা বিতরণে অনিয়ম করছেন অনেক জনপ্রতিনিধি।
কাউখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, তালিকাটি অনেক আগের। এ কারণে প্রকৃত জেলেদের বাছাই করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখে দিয়েছে। বর্তমানে জেলেদের তালিকা একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রতিটি ইউনিয়নে হালনাগাদের কাজ চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল মোল্লা বলেন, মৃত ব্যক্তি ও অন্যান্য পেশায় থাকা ব্যক্তিদের নামে জেলে কার্ড থাকার অভিযোগ পেয়েছি। এ কারণে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করেছি।