3:43 pm , September 24, 2024
নবনিযুক্ত ববি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন বিবৃতি দিয়েছিলেন
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের আমলে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধীদলের আন্দোলনকে ‘নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছিলেন ৩৫০ বিশিষ্ট নাগরিক, শিক্ষক ও পেশাজীবী। গত বছরের ২৩ নভেম্বর গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে আওয়ামী পন্থী অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে স্বাক্ষর করেছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন। সেই বিবৃতিটি সেই সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন এর নামসহ গুরুত্বসহকারে প্রকাশ পায়। এছাড়াও রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ’র অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার শ্বেতপত্রেও নাম রয়েছে এই নব নিযুক্ত ববি উপাচার্যের।
‘নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র’ শিরোনামে প্রকাশিত বিবৃতিতে অধ্যাপক শরমিনসহ অন্যান্যরা উল্লেখ করেন, সংবিধানের বাইরে গিয়ে সংকট সমাধানের যে কথা বলা হচ্ছে তা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই শক্তি সংবিধানকে পদদলিত করে গণতন্ত্র হত্যার মাধ্যমে ওয়ান ইলেভেনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় বলেও মন্তব্য করেন তারা। এছাড়াও বিবৃতিতে বলা হয় “বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। সার্বিকভাবে দেশ যখন নির্বাচনমুখী অবস্থায় চলে গেছে এমন সময়ে অগণতান্ত্রিক শক্তির দোসর এবং দেশকে বিরাজনীতিকরণের তৃতীয় ধারা আবার নতুন খেলায় মেতে উঠেছে। তারা নির্বাচন বানচালের নতুন কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিভিন্ন অপকৌশল এবং একটি রাজনৈতিক দলের আন্দোলনে তেমন সাফল্য না পেয়ে এবার তারা সাবেক আমলা এবং একটি স্বার্থান্বেষী মহলকে মাঠে নামানোর চেষ্টা করছে”।
ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “বিরাজনীতিকীকরণের কৌশল হিসেবে এবার তারা পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য মায়াকান্না শুরু করেছে। ডক্ট্রিন অব নেসেসিটির কথা বলে সংবিধানের বাইরে গিয়ে ‘সংকট সমাধানের যে কথা তারা বলছেন, তা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে আমরা মনে করি। এরা সংবিধানকে পদদলিত করে গণতন্ত্র হত্যার মাধ্যমে ওয়ান ইলেভেনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। কার্যত, বিবৃতিতে সংবিধান লংঘন করে সেটিকে মার্জনা দেওয়ার যে কথা বলা হয়েছে, তা শুধু অগণতান্ত্রিকই নয়- রাষ্ট্রদ্রোহিতারও শামিল। এ ধরনের অপচেষ্টা তারা অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালেও করেছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা ও অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর তথাকথিত ‘মার্জনা প্রদান করার মাধ্যমে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র, রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং সংবিধান লংঘনের মত ঘটনাগুলোকে যারা বৈধতা দিয়ে দেশকে খুনীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল, তাদেরই মিত্ররা বিভিন্ন সময়ে ঘোলাজলে মাছ শিকারে আবির্ভূত হয়। আলোচনার নামে সময় ক্ষেপণ করে দেশে সাংবিধানিক সংকট তৈরি করাই তাদের আসল উদ্দেশ্য”।
বিবৃতিতে অধ্যাপক ড. শরমিনসহ অন্যান্যরা আরো বলেন, “আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই যে, লক্ষপ্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পাকিস্তানি অগণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা ফিরিয়ে আনা আর কোনোভাবে সম্ভবপর নয়। পৃথিবীর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহে যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশেও সেভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গণতান্ত্রিক রীতিনীতিতে ক্ষমতায় যাওয়ার একমাত্র পথ নির্বাচন। আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টির পথ পরিহার করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এ প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক ধারায় জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক, সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।
পাকিস্তানি অপশক্তির উত্তরপুরুষ, অসাংবিধানিক ধারার পৃষ্ঠপোষক, খুনীচক্রের প্রেতাত্মাদের নতুন কৌশলে পুরাতন ষড়যন্ত্রের অপচেষ্টাকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। একই সাথে দেশের বিবেকবান মানুষকে সংবিধান, রাষ্ট্র ও উন্নয়ন-বিরোধী যে কোনো অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানান বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী ঢাবি শিক্ষকরা”।
বিবৃতিতে আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের সাথে মাঝের অংশে স্বাক্ষর করেন ববি’র নবনিযুক্ত উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিন।
জানা যায়, ২০২১ সালের ১৩ মার্চ বিভিন্ন গণমাধ্যমে “বেরোবি ভিসি কলিমউল্লাহ’র অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার শ্বেতপত্র প্রকাশ” শিরোনামে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়, সেখানেও উল্লেখ করা হয়, বেরোবি’র নাজমুল হাসান কলিমউল্লাহ’র যোগসাজসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ড. শুচিতা শরমিন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের উপ-উপাচার্য ড. আবুল কাশেম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং জানিপপের সদস্য ড. সাবের হোসেন চৌধুরী এবং উপাচার্যের ঘনিষ্টজন তানভীর আবির প্রশিক্ষণ ও মিটিংয়ের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও তৎকালীন উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ’র নিয়োগ দূর্নীতির সাথে তার সম্পৃক্ততা নিয়েও সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, তৎকালীন উপাচার্যের নিয়োগ কমিটির ২০১৯ সালে প্রভাষক (অস্থায়ী) নিয়োগের জন্যও প্লানিং কমিটির রেজ্যুলেশনে ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ’র বিতর্কিত বাছাইয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দেন। যা নিয়ে পরবর্তীতে বেরোবিতে ব্যাপক সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এরকম চার বিভাগের নিযোগ বোর্ডের সদস্য করা হয়েছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. শুচিতা শরমিনকে।
গতকাল তার উপাচার্যের পদে নিয়োগ নিশ্চিত হওয়ার পর এ প্রতিবেদক কথা বলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকদের সাথে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষকরা বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর যে ফ্যাসিবাদী রাজত্ব কায়েম করেছিলো সমাজের সকল ক্ষেত্রে সেই ফ্যাসিবাদকেই জায়েজ করতে দেয়া বিবৃতিতে তার নাম থাকায় আমার কিছুটা অবাক হয়েছি। তাদের মতো কিছু শিক্ষকদের কারণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার এতটা ন্যাক্কারজনকভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পেরেছে। উক্ত বিবৃতিতে তিনিসহ অন্যরা যেভাবে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন সেটা আসলে গনতন্ত্রের জন্য বাধা হিসেবে প্রতিয়মান হয়েছে। বিগত শাসনের পরোক্ষ কিংবা প্রত্যক্ষ বন্ধুকে এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদে প্রতিষ্ঠিত করা ন্যায় সঙ্গত সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা সেটা ভেবে দেখা উচিত।
এবিষয়ে গতকাল রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন এর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।