3:44 pm , September 21, 2024
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ শ্যামল বল্লভ নামের এক অসাধু গার্মেন্টস ব্যাবসায়ীর খপ্পরে পরে নি:স্ব হওয়ার পথে সুব্রত পান্ডে নামের এক মহুরী। ব্যবসার কাজে স্টাম্পে লিখিত দিয়ে প্রায় কোটি টাকা ধার নিয়ে পরিশোধ না করে উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানী করারও অভিযোগ শ্যামলের বিরুদ্ধে। তবে মামলায় হাজির হয়ে বর্ননা দাখিল করার পর গার্মেন্টস ব্যাবসায়ীর দায়ের করা মামলাটি খারিজ করে দেয় আদালত। এর পর অভিযুক্ত শ্যামল বল্লভের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাত ও প্রতারনা মামলা দায়ের করা হলে ওই মামলায় শ্যামল বল্লভ নামের ওই গার্মেন্টস ব্যাবসায়ীকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজিরপুর আমলী আদালতের হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালতের বিচারক মাহুফুজুর রহমান তার জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। শ্যামল বল্লভ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের পটিবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় বাসিন্দা ও মামলার বাদীর দেওয়া তথ্য মতে, শ্যামল বল্লভ এক সময় নিন্ম মধ্যবৃত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। অভাব অনটনের সংসারে নবম শ্রেনী পর্যন্ত লেখা পড়া করেই কর্মজীবনে প্রবেশ করতে বাধ্য হয় শ্যামল বল্লভ। কর্মজীবনের শুরুতেই ১৯৯৮ সালের দিকে ঢাকায় ৬ হাজার টাকা বেতনে এম্বোটারী কাজ শুরু করে। কিছুদিন পর ঢাকায় গার্মেন্টর্সের দোকানে কমচারী হিসেবে কাজ করে। লেখাপড়া কম জানলেও বিভিন্ন ব্যাক্তির কাছ থেকে মুলধন সংগ্রহ করে সুকেীশলে কিছু টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজেই পাঞ্জাবী তৈরী করে তা বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করতে শুরু করে। এভাবে বেশ কিছু বছর কাজ করার পর বিভিন্ন দোকান থেকে বাকিতে কাপড় ক্রয় করে স্বর্নালী ফ্যাশন নামের একটি কো¤পানী তৈরী করে বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে পাইকারী মূল্যে পাঞ্জাবী বিক্রি করতে শুরু করে। ব্যাবসার পরিধি বাড়ানোর জন্য নিজ এলাকা সাতলা ও পাশের জল্লা ইউনিয়নসহ ঢাকার একাধিক ব্যাক্তির কাছ থেকে স্টাম্পে চুক্তিপত্র করে ও চেকের বিনিময়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ৬৪ জেলায় পাইকারী সেলার হিসেবে পাঞ্জাবী বিক্রি করতে শুরু করেন। প্রথমে ৪ থেকে ৫ বছর দেনাদারদের মুনাফা সহ মুলধন ফেরত দেন শ্যামল। এভাবে বিশ^াস অর্জন করে বিভিন্ন ব্যাক্তির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে তার আর পরিশোধ করেনি সুচতুর শ্যামল। এ বিষয়ে কুড়লিয়া গ্রামের বাসিন্দা সুব্রত পান্ডে বলেন, শ্যামল একজন বড় গার্মেন্টস ব্যাবসায়ী এ কথা এলাকায় নিজেই প্রচার করে শ্যামল। ২০১৮ সালে শ্যামল ব্যাবসা বাড়ানোর কথা বলে আমার কাছে টাকা চায়। আমার কাছে টাকা নেই জানালে অন্য লোকের কাছ থেকে টাকা এনে তাকে টাকা দেওয়ার অনুরোধ করে শ্যামল। এসময় আমাকে আকর্ষনীয় মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেয় শ্যামল। পরে ২০১৮ সালে স্টাম্পে চুক্তি করে আমেরিকা প্রবাসী কাওসার হাওলাদারের কাছ থেকে ধার এনে বিভিন্ন সময় শ্যামলকে ৯৩ লক্ষ টাকা প্রদান করি। কিন্তু টাকা নিয়েই সে লাপাত্তা হয়ে যায়। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের পর ২০২৩ সালে সর্বমোট ২৯ লাখ ৬০ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করে। এর পর স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে শালিশ বঠৈক হয়। এসময় শ্যামল বাকি ৬৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫শ টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয় শ্যামল। কিন্তু সালিশ বৈঠকের সিন্ধান্ত না মেনে স্টাম্প ও চেক উদ্ধারের জন্য আমার বিরুদ্ধে বরিশাল আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। পওে আমি উপস্থিত হয়ে বর্ননা দিলে বিচারক মামলাটি খারিজ করে দেন। শুধু আমি একাই নই। দেশের বিভিন্ন স্থানের বিভিন্ন ব্যাক্তির কাছ থেকে ব্যাবসার কথা বলে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করে অবৈধ সম্পদের পাহার গড়ে তুলে। সুব্রত আরো জানান, শ্যামল বল্লভের ঢাকার সাভারে ২ কোটি টাকা মূল্যের ৫ কাঠার একটি প্লট রয়েছে। ঢাকায় একটি বিলাশবহুল ফ্লাট রয়েছে তার। বর্তমানে গ্রামের বাড়িতে ৩ তলা বিশিষ্ঠ একটি আধুনিক ভবন নির্মানাধীন রয়েছে। ইতিমধ্যেই এক তলার কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া ঢাকায় ৭ টি দোকান রয়েছে তার। এছাড়া বরিশালের কাশিপুরে রয়েছে ২ টি প্লট। সম্প্রতি ৪০ লক্ষ টাকা মুল্যের একটি প্রাইভেটকার কিনেছেন শ্যামল। তবে এতকিছুর পরও সে কোন আয়কর প্রদান করছেন না বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এলাকার একটি সূত্র জানায় ভারতের কলকাতার মুরাগাছা গ্রামে রয়েছে আধুনিক ডিজাইনের দুই তলা বিশিষ্ঠ ডুপ্লেক্স বাড়ি। বিষয়ে তদন্ত করলেই সত্যতার প্রমান মিলবে।