3:39 pm , September 21, 2024
মিথ্যা অভিযোগ তুলে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত একটি পরিবারটিকে আওয়ামীলীগ বানাতে মরিয়া প্রতিপক্ষ
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ব্যাপক জনপ্রিয়তা কাল হয়ে দাড়িয়েছে বরিশাল নগরীর কাটপট্টি এলাকার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির লিংকুসহ তার পরিবারের সদস্যদের জন্য। একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ তুলে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত এ পরিবারটিকে স্বৈরশাসক আওয়ামীলীগ বানাতে মরিয়া প্রতিপক্ষ। একই সাথে তাদের বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে চাঁদাবাজির মামলাও। বর্তমানে লিংকু ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি। নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। লিংকু ওই এলাকার ব্যবসায়ী মৃত সৈয়দ চুন্নু মিয়ার ছেলে। এছাড়া ৯নং ওয়ার্ডের দুইবারের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সৈয়দ জামাল হোসেন নোমান ও বর্তমান জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি সৈয়দ কামাল হোসেন রুবেলের ছোট ভাই। পুরো পরিবারটি জড়িয়ে আছে বিএনপির রাজনীতির সাথে। বিষয়টি স্বিকার করেছেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি ও মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার এবং মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুকসহ একাধিক নেতৃবৃন্দ। ২০২৩ সালের ১২ জুন ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের চাপের মুখে পড়ে নির্বাচনে অংশ নেন লিংকু। ওই সময় তিনি মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি পদে ছিলেন। বিশেষ করে রসুলপুর কলোনীবাসীদের আগ্রহে তাকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করে। নির্বাচনে তৎকালীন কাউন্সিলর হারুন অর রশিদ ও মাসুম ভূইয়াকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে লিংকু কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এরপর লিংকু ওই এলাকায় সার্বক্ষনিক পানির ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ছয়শ’ঘরে প্রিপেইড মিটারের ব্যবস্থা করে দেন। এর পূর্বে একটি মাস্টার মিটার দিয়ে বিদ্যুত পরিচালিত হওয়ায় ইউনিট প্রতি ১৭ থেকে ১৮ টাকা গুনতে হতো কলোনীবাসীকে। এখন ঘরে মিটার দেয়ায় তাদেরকে ইউনিট প্রতি দিতে হচ্ছে ৭টাকা করে। তাছাড়া বস্তির ভিতরের অলিগলির সড়ক পাকাকরন এবং হতদরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় উদ্যোগ গ্রহন লিংকুর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।
কাটপট্টি স্বর্ণ ব্যবসায়ী বেশী হওয়ায় ৫ আগস্ট থেকে সেখানে পাহারা বসানো হয়। প্রাইভেট সিকিউরিটি থেকে লোক এনে এবং স্থানীয় পর্যায়ের তরুন ও যুবকদের নিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়। এতে করে হিন্দু অধ্যুষিত ওই এলাকায় ৫ আগস্টের পর সামান্যতম ক্ষতির সম্মুখীণ হতে হয়নি। ১৫দিনব্যাপী ওই পাহারার ব্যবস্থা করা হয়। এতে করে দারুন খুশী অত্র এলাকার ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। এর নেতৃত্ব দেন কাউন্সিলর লিংকু।
তাছাড়া যে কোন সময় অভাব-অভিযোগ নিয়ে গেলে কাউন্সিলর লিংকুর সাথে দেখা করতে পারেন হতদরিদ্র মানুষগুলো। তাদের সমস্যা সমাধানে দ্রুত গতিতে পদপেক্ষ নেয়ায় লিংকুর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। এ বিষয়টি ভালোভাবে মানতে পারছেন না আগামীতে লিংকুর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরা। বর্তমান মেয়রকে সরিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দেয়ার পর থেকেই লিংকু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে ওই গোষ্ঠি। বিশেষ করে লিংকু ও তার পরিবারকে আওয়ামীলীগ সাজাতে মরিয়া তারা। এ জন্য কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত এবং প্যানেল মেয়র জিয়াউর রহমান বিপ্লবসহ একাধিক আওয়ামীলীগের কাউন্সিলরের সাথে তাকে বিভিন্ন সময় সভা-সেমিনার এবং উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে অবস্থান করতে হয়েছে। ওই সময়ের কিছু স্থিরচিত্র দিয়ে তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানির পায়তারা করা হচ্ছে। এখানেই শেষ নয়, নগরীর চকবাজার এলাকায় একটি জমি নিয়ে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে মামলা চলছে লিংকুর পরিবারের সাথে। ওই জমি ক্রয়সূত্রে তারা মালিক হলেও একটি পক্ষ জাল দলিলের মাধ্যমে তা ভোগদখলের চেষ্টা করছে। এ কারনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। এরপর তারা ভাড়াটিয়া হিসেবে সেখানে অবস্থান করে ভাড়াও পরিশোধ করে আসছিল। প্রতিপক্ষ সেখানে গিয়েও হানা দিয়েছে। সম্প্রতি তাদের কাছে ভাড়া চাইতে গেলে ভাড়াটিয়া এবং জবরদখলকারী দেবাশীষ দেবনাথ ভাড়া না দিয়ে উল্টো খারাপ ব্যবহার করেন। এ নিয়ে লিংকুর পরিবারের সদস্যদের সাথে বাগবিতন্ডা হয়। এরজের ধরে লিংকুসহ তার বড় ভাই সাবেক বিএনপি নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর নোমান এবং যুবদল নেতা রুবেলসহ ৯ জনকে আসামী করে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। এ ব্যাপারে বাদীর দোকান ঘরের পাশের স্থানীয় বাসিন্দা মন্টু সাহা বলেন, ওই জমি লিংকুর পরিবার ক্রয় করেন। তার জানা মতে প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ জমি তারা ক্রয় করেছেন। কিন্ত দেড় শতাংশ জমি দেবাশীষ ও তার পরিবার দখল করেছেন। পূর্বে তারা ভাড়াটিয়া হিসেবে টাকা পরিশোধ করলেও সম্প্রতি তাদের আচরনের পরিবর্তন এসেছে। ঘটনার দিন লিংকুর পরিবার থেকে তাদের কাছে ভাড়ার জন্য যান। কিন্তু মামলার বাদী দেবাশীষ ভাড়া না দিয়ে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে পরবর্তীতে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন তিনি। রসুলপুর কলোনীর বাসিন্দা মো. দেলোয়ার ও মো. রবিউলসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, লিংকুর ভাই নোমান কাউন্সিলর থাকাকালীন তাদের এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়। তার অনুপস্থিতিতে এলাকার উন্নয়ন থেমে গেলে ওই পরিবার থেকে একজনকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। নোমান না দাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়ায় সেখানে লিংকুর নির্বাচনে অংশ নিয়ে ব্যাপক ভোটে নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পূর্ব থেকে পরবর্তী সময় পর্যন্ত রসুলপুর কলোনীর উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছেন লিংকু। যা তাদের জীবনযাত্রার মান পাল্টে দিয়েছে। এতে করে আগামীতেও লিংকু নির্বাচনে অংশ নিলে তাকেই কলোনিবাসী ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। এ বিষয়টি প্রতিপক্ষরা মানতে পারছে না। এ কারনে তার বিরুদ্ধাচারন করছে বলে দাবি করেন তারা। তারা আরো বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বন্যায় কলোনীতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। ওই সময় সেখানাকার বাসিন্দাদের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে তিনবেলা খাবার মুখে দেয়ার অবস্থায় ছিল না। কাউন্সিলর লিংকু কলোনীতে গিয়ে বাসাবাড়ির সমস্যা এবং আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। সাবেক যুবদল নেতা ও কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির লিংকু বলেন, এলাকাবাসীর চাপের মুখে আমি কাউন্সিলর নির্বাচন করে নির্বাচিত হই। নির্বাচনের পূর্ব থেকে পরবর্তী সময় পর্যন্ত এলাকারবাসীর উন্নয়ন এবং নিরাপত্তায় কাজ করেছি। কিন্তু একটি পক্ষ আমাকে আওয়ামীলীগ বানাতে মরিয়া। অথচ আমার পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। আমার বড় দুই ভাই বিএনপি ও যুবদলের রাজনীতির সাথে জড়িত। আমি যুবদলের রাজনীতির সাথে জড়িত আছি। ছাত্রদলের রাজনীতি থেকেই আমি এ দলের সাথে জড়িয়ে আছি। কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামীলীগের মেয়র, প্যানেল মেয়র এবং কাউন্সিলরদের সাথে বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে আমাকে যেতে হয়েছে। অথচ আমার প্রতিপক্ষ ওই সময়ের ছবি ব্যবহার করে আমাকে আওয়ামীলীগ বানাতে মরিয়া। আমি বলতে চাই দীর্ঘ ১৬ বছর শারীরিক মানসিক নির্যাতন সহ্য করে দলটির সাথে সম্পৃক্ত আছি। আমি বিশ্বাস করি দ্রুত সময়ের মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের ক্ষমা করে দলে ফিরিয়ে নেবেন। এ বিষয়টি জানতে পেরে প্রতিপক্ষরা নানা ষড়যন্ত্রে মেতেছে। বাস্তবতা আর ষড়যন্ত্র এক নয়। বাস্তবতা বলে দেবে বিগত দিনে কাটপট্টির সৈয়দ পরিবার কোন দলের সাথে জড়িত ছিল। তা বরিশালের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ভালো জানেন বলে জানান লিংকু। লিংকু বলেন, সর্বশেষ ৫ আগস্টের পূর্বে আওয়ামীলীগের হামলায় তার বড় ভাই রুবেল আহত হন। ওই সময় তিনি মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের সাথে বিক্ষোভে যোগদেন। ওই সময় আহ্বায়ক মনিরুজ্জান খান ফারুক ও সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার জিয়াকে কুপিয়ে জখম করা হয়। এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামন খান ফারুক বলেন, নিষেধ সত্ত্বেও লিংকু সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তাকে মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। যে কোন মুহুর্তে দল তাদের আবার ফিরিয়ে নিতে পারে। আর লিংকুর বড় ভাই রুবেল যুবদল নেতা এবং আরেক ভাই নোমান সেও মহানগর বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তারা পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি ও সিটি কর্পোরেশনের প্রথম সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, যার কোন শত্রু নেই সে কেমন সামাজিক জীব। কাজ করলে শত্রু সৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে লিংকুর বড় ভাই নোমান তার সাথে রাজনীতি করতেন। এমনকি লিংকুসহ তাদের পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িয়ে আছে। এখানে কে কি বললো তাতে কান না দেয়ার জন্য বলেন সরোয়ার।