3:52 pm , September 20, 2024
পাথরঘাটা প্রতিবেদক ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের গণপিটুনিতে নিহত মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলের মরদেহ জানাজা শেষে মা-বাবা ভাইয়ের পাশে দাফন করা হয়েছে।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টায় বরগুনার পাথরঘাটার তালুকের চরদুয়ানীতে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা, মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি।
এর আগে, সকাল ৯টার দিকে চরদুয়ানী মাদরাসা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর তোফাজ্জলের হত্যাকান্ডে জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে পাথরঘাটা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন স্থানীয়রা।
নিহত তোফাজ্জল হোসেন পাথরঘাটার তালুকের চরদুয়ানী গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে। ৪ বছর আগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মেয়ের সাথে প্রেম সংঘটিত কারণে চেয়ারম্যান ও তার ছেলে বেধরক মারপিটের কারণে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। পরে তার বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় এবং মা ও ভাই পুলিশ সদস্য ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার পরিবারের কোনো সদস্য জীবিত নেই। এক ধরনের ভবঘুরে জীবন ছিল মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জেলের।
মানসিক ভারসাম্যের আগে কাঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তোফাজ্জল হোসেন।
জানা যায়, বুধবার রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে ঢাবির ফজলুল হক মুসলিম হলে প্রবেশ করেন। ঐ সময় চোর সন্দেহে তাকে আটক করে
শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ১০টার দিকে হলের গেস্ট রুমে কয়েক দফা মারধর করা হয়। একপর্যায়ে ক্যান্টিনে বসিয়ে ভাতও খাওয়ানো হয়। তারপর পুনরায় মারধর করা হয়। দীর্ঘ সময় মারধরের ফলে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন ।
মানববন্ধনে পাথরঘাটা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এনামুল হোসাইন বলেন, তোফাজ্জল অত্যন্ত ভালো একটি ছেলে, সে দীর্ঘদিন যাবত মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় জীবন যাপন করছে, সে কখনো চুরির কোন ঘটনার সাথে জড়িত ছিল না।
কিন্ত কেন তাকে ঢাকা ভার্সিটির মত দেশের সর্বোচ্চবিদ্যাপীঠে শিক্ষার্থীরা বর্বরতা ও পাশবিক নির্যাতন করে জীবন্ত মানুষটাকে মেরে ফেলেছে। এরা শিক্ষা জাতির কলঙ্ক। কলঙ্কিত করেছে ঢাকা ভার্সিটিকে। আমরা পাথরঘাটা বাসীর পক্ষ থেকে তাকে হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড কামনা করছি।তোফাজ্জেলের ভাবী শরিফা বলেন গত বুধবার (১৮,০৯,২৪) রাতে অপরিচিত একটি মোবাইল ফোন নম্বর (০১৭৪৩৭৪৫৪২৬) থেকে আমার ফোনে কল আসে। কলটি ধরার পরেই অপর প্রান্ত থেকে এক লোক তোফাজ্জল কী হয় তা জানতে চান। পরিচয় দিলে তিনি বলেন, ‘সে চুরি করে ধরা পড়েছে, তাকে বাঁচাতে হলে ২ লাখ টাকা দিতে হবে।’
এরপর তারা ফোনে ধমক দিতে থাকেন এবং বলেন কোনো মিথ্যা কথা বলবেন না, তাহলে সমস্যা হবে। তাদের সঙ্গে কথা বলার কয়েক ঘণ্টা পরে বিভিন্ন লোকজন জানান তোফাজ্জেল মারা গেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামীর বংশ-পরিচয় দেওয়ার মতো আর কিছুই রইল না। আমার দুই সন্তান বাবাহারা, তাদের একজন চাচা ছিল, তাও শেষ করে দিল। আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম, সরকারের কাছে দাবি যাতে করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দেওয়া হয়।
তোফাজ্জলের চাচা ফজলুর রহমান বলেন,‘তোফাজ্জলের বাবা আব্দুর রহমান প্রায় ১০ বছর আগে মারা যান। এর তিন বছর পর তার মা মারা যান। এর পর থেকেই মানসিকভাবে তোফাজ্জেল ভেঙে পড়ে এবং ওর বড় ভাই বাংলাদেশ পুলিশের এ এস আই নাসিরের আশ্রয়ে থাকতে শুরু করে। ওর ভাই নাসির দুই বছর আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে তোফাজ্জল। এর কিছুদিন পর একটি প্রেম গঠিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাজারের ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুর রহমান ও তার লোকজন তাকে মারধর করে। এর পর থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পরে তোফাজ্জেল। ওর প্রতিবেশী সাদেক মিয়া বলেন তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও কাউকে কিছুই করতেন না। শুধু পরিচিত লোকজনের সঙ্গে দেখা হলে ২০ টাকা বা ৫০ টাকা চেয়ে নিতেন। আমি কখনোই তাকে চুরি করতে দেখিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে যে চুরি অপবাদ দেওয়া হয়েছে, এর কোনো সত্যতা পাইনি। আমরা অভিযুক্তদের দৃষ্টামূলক শাস্তি দাবি করছি।’
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন বলেন, ‘তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল, এটা আমি জানি। তার সঙ্গে যেটা হয়েছে এটা অমানবিক। যে নম্বর থেকে পরিবারের কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে, সে নম্বর বর্তমানে বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।’