3:58 pm , September 17, 2024
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ অশ্বিনী কুমার টাউনহলের সামনে নয় এবারের সমাবেশটি হয়েছে বেলস পার্ক সংলগ্ন শিশুপার্কের সামনের সড়কে। স্মরণকালের এই বৃহত্তম সমাবেশে নেতাকর্মীদের মাঝে ছিলো ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য। দীর্ঘদিন পরে প্রকাশ্যে সমাবেশ করতে পেরে অনেকেই আবেদ আপ্লুত হয়ে পড়েন।
শিশুপার্কের প্রবেশপথে স্টেজ বানিয়ে মাঝখানে সড়ক যানবাহন চলাচলের জন্য উম্মুক্ত রাখা হয়েছিলো। উদ্দেশ্য ছিলো কোনোরকম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে একটি প্রশংসনীয় সফল সমাবেশ উপহার দেয়া। এজন্য খুশিও হয়েছে নগরবাসী। কারণ এতোদিন অশ্বিনী কুমার টাউনহলের সামনে এসব সমাবেশের কারণে নগরীর ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কেই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। যা ছিলো অনেকটাই ভোগান্তির কারণ। এবারের সমাবেশ বেলস পার্ক এলাকায় হওয়ায় নগরবাসীর এই ভোগান্তি কিছুটা হলেও দূর হয়েছে। যা নিয়ে প্রশংসাও পেয়েছে মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ। যদিও তাদের এই মহতি উদ্দেশ্য শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয় জনসমুদ্রের কাছে। বরিশালের ছয় জেলার ৪২ উপজেলা থেকে আগত হাজারো নেতাকর্মীদের ভিড়ে বান্দরোড থেকে শুরু করে রায় বাহাদুর সড়ক, জিলাস্কুল মোড়, ক্লাব রোড, সদর রোড সহ আশেপাশের এলাকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ৪০ টি বাস ও পিক-আপের ভিড়ে আমতলা মোড়ে থেকে বাংলাবাজার পর্যন্ত এবং সাগরদি হয়ে রূপাতলী ও নথুল্লাবাদ এলাকায় যানজটে আটকে যায় সাধারণ মানুষ। ঘন্টা খানেক যানজটে আটকে থাকার পর অনেকেই পায়ে হেঁটে সমাবেশ স্থলে যোগ দিয়েছেন। মঞ্চে তখন বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। ১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটা থেকে শুরু হয় গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বিভাগীয় এই সমাবেশ। পাশাপাশি সমাবেশ শেষে শোভাযাত্রা বা র্যালির আয়োজন করে বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ। এসময় প্রধান অতিথি সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী সেলিমা রহমান ছাড়াও মঞ্চে ছিলেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। মঞ্চের সামনের সড়কে তখনও একের পর এক মিছিল এসে ঘুরে সরকারি মডেল কলেজের সামনের সড়কে অবস্থান নিচ্ছিল। মহানগর যুবদলের সহ সভাপতি আলমগীর হোসেন সহ কয়েকজনকে দেখা গেল বেলস পার্ক ও বিভাগীয় কমিশনার এর বাড়ির সামনের তিন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে দূরদূরান্ত থেকে আসা মিছিলগুলোকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। আলমগীর জানালেন, ২০২২ সালের ৫ নভেম্বরের পর নতুন স্বাধীন বরিশালে এটিই প্রথম বৃহৎ বিভাগীয় সমাবেশ ও শোভাযাত্রা। পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা সহ ৪২ উপজেলার কম হলেও ২০ হাজার নেতাকর্মী এই মুহূর্তে বরিশালের এই সমাবেশে অংশ নিয়েছেন বলে জানান তিনি। এখানেই কথা হয় পটুয়াখালী থেকে আগত স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকজন নেতার সাথে। তারা বলেন, এটি পরিকল্পিত হয়নি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের উচিৎ ছিল নগরীর যানজট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করা। যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সড়কের দুপাশে শিকলের মতো মানববন্ধন তৈরি করতে পারতেন। তাহলে সড়কের যানবাহন চলাচল ব্যাহত হতো না। গাড়ি পার্কিং এর জন্য বাস টার্মিনাল বা বেলস পার্ক নির্দেশনা থাকলে কেউ শহরে প্রবেশ করতেন না বলে জানান তারা।
জাতীয়তাবাদী যুবদলের বড় একটি মিছিল এসময় মঞ্চের দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। একইসময় মহানগর ছাত্রদলের একটি মিছিল বের হয়ে চলে যায় জিলা স্কুলের দিকে। পিছনে আরো মিছিল সমাবেশ থেকে বের হয়ে চলে যেতে দেখা যায়। মাইকে তখন গণতন্ত্র দিবসের শোভাযাত্রা বের করতে সবাইকে সমবেত হবার আহ্বান জানাচ্ছেন মহানগর ও জেলা নেতৃবৃন্দ। এদিকে পুলিশ লাইন সড়কে পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বানারীপাড়া, পটুয়াখালী থেকে আগত বাসগুলো দীর্ঘ যানজট তৈরি করেছে। যানজটে আটকে পড়া কয়েকজন যাত্রী বলেন, বাসগুলো আমতলা মোড়ে বা বেলস পার্কের ভিতরে রাখলে এই সমস্যা হতো না। জিলাস্কুলের সামনে দেখা গেল ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ভিড়। কথা বলে জানা গেলে, শোভাযাত্রাটি যখন সব সড়ক ঘুরে এই পথে আসবে তখন তারাও শোভাযাত্রার সাথে যুক্ত হবেন।
ঠিক সাড়ে বারোটায় শিশুপার্কের সামনের সড়ক থেকে জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে র্যালি বের হয়। তবে এখানেই প্রথম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় ব্যানার ধরার যুদ্ধে। সড়কের চেয়ে বড় ব্যানার হওয়ায় বাঁকা হয়ে যায় সামনের অংশ। পরে অবশ্য ঠিক করা হয় তা। কিন্তু সামনের সারির অনেকেই তখন পিছনে পড়ে গেলে তারাও তখন আরেকটা ব্যানার খুলে পৃথক র্যালি শুরু করেন। মাঝখানে অনেক ফাঁকা রেখে এরপর বিভিন্ন নেতাকর্মীদের শোডাউন নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ দেখা যায়। সবাই নিজেদের ব্যানার পোস্টার ফেস্টুন প্রদর্শনে ব্যস্ত একটি উৎসবমুখর র্যালি চকবাজার হয়ে সিটি করপোরেশনের সামনে দিয়ে যখন বরিশাল জিলাস্কুলের সামনে আসে তখন অর্ধেক নেতাকর্মী হারিয়ে গেছেন। শুধু মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক সহ কয়েকজন র্যালিটি আঁকড়ে আছে এবং তারা রায় বাহাদুর সড়ক হয়ে পুনরায় শিশুপার্কে এসে র্যালি ও সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। বানারীপাড়া থেকে আগত কয়েকজন যুবদল কর্মী বলেন, আসলে আমরা দূর থেকে যারা আসি তাদেরওতো একজন লিডার আছেন। সেই লিডারের ব্যানার পোস্টার প্রদর্শন করাও জরুরী হয়। বৃহৎ সমাবেশ মানেই নিজের অবস্থান তুলে ধরার একটা সুযোগ। যতই বলেন, এ সুযোগ কেউ সহজে হাতছাড়া করবেন বলে আমাদের মনে হয় না। ঐ যে পৃথক টুপি বা গেঞ্জি বিতরণ কিংবা নির্দিষ্ট কিছু ফেস্টুন এসবই নিজেকে জাহির করার একটা প্রক্রিয়া। এটা সব দলেই আছে, থাকবে। এটা কোনো অনৈক্য বা কোন্দল নয় বলে জানান তিনি।