বরিশাল অঞ্চলে বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই গ্রাহকদের বরিশাল অঞ্চলে বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই গ্রাহকদের - ajkerparibartan.com
বরিশাল অঞ্চলে বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই গ্রাহকদের

3:30 pm , September 15, 2024

সেবা না দিয়ে মূল্য বৃদ্ধির ক্রমাগত চাপ অব্যাহত রাখা হয়েছে

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ গত পনের বছরে দফায় দফায় মূল্য বৃদ্ধি ঘটলেও কর্তৃপক্ষের বিবেকহীন উদাসীনতা ও ভঙ্গুর বিতরণ ব্যবস্থায় বরিশাল অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ বিদ্যুত গ্রাহকের দুর্ভোগের শেষ নেই। গ্রাহক সেবা ক্রমাগত তলানীতে ঠেকেছে। সেবা না থাকলেও মূল্য বৃদ্ধির ক্রমাগত চাপ অব্যাহত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে, সাধারন গ্রাহকরা নিজেদের জিম্মি মনে করছেন বিতরণ কোম্পানীর কতিপয় দায়িত্বশীল মহলের কাছে। এমনকি বরিশাল অঞ্চলে প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও এক হাজার মেগাওয়াটের বিতরণ ব্যবস্থা টেকসই করতে না পারায় উদ্যোক্তারা এ অঞ্চলে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার ঝুঁকি নিতে উৎসাহ বোধ করছেন না।
পিডিবি’র কাছ থেকে পাইকারী মূল্যে কিনে বরিশাল মহানগরী সহ সন্নিহিত এলাকার ৭টি বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রী করছে ওজোপাডিকো। দুজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও ৭ জন নির্বাহী প্রকৌশলী সহ প্রতিটি বিতরণ বিভাগে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলী ছাড়াও প্রতিটি ফিডারের জন্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদ মর্যাদার ফিডার ইনচার্জরা বিতরণ ব্যবস্থার দায়িত্বে রয়েছেন। পিডিবি’র তত্ত্বাবধানে থাকাকালীন বরিশালে একজন প্রধান প্রকৌশলীও ছিলেন। কিন্তু ২০০৫ সালে পিডিবি থেকে বিক্রয় ও বিতরণ ব্যবস্থা কোম্পানীর হাতে ন্যস্ত হবার পরে এ অঞ্চলে গ্রাহক সেবার তেমন কোন উন্নতি ঘটেনি। এ অভিযোগ বরিশাল অঞ্চলে ওজোপাডিকো’র প্রায় সব গ্রাহকের। লো-টেনশন ও ১১ কেভি হাইটেনশন লাইন এবং সবগুলো ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইন সহ ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনগুলোতে গোলযোগ দুর্ঘটনায় বার বারই এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। এর সাথে রয়েছে ১১ কেভি ও .০৪ বিতরণ লাইনগুলোর  ত্রুটি। এমন কোন ফিডার নেই যেখানে প্রতিদিন ২-১০ বার পর্যন্ত লাইন বন্ধ হচ্ছে না।
ফলে ঘাটতি না থাকলেও বরিশাল অঞ্চলে ওজোপাডিকোর গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া এখনো সৌভাগ্যের ব্যাপার। গত শনিবার দুপুর থেকে পুরো বরিশাল অঞ্চলজুড়ে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। কিন্তু কোন ঝড়ো  হাওয়া বা বজ্রপাত না থাকলেও পুরো মহানগরী সহ বরিশাল অঞ্চলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। শনিবার রাতভর এ অঞ্চলের ৪ লক্ষাধিক গ্রাহক অন্ধকারে কাটিয়েছে।
গত ২০ বছরেও বরিশাল অঞ্চলে গ্রাহক সেবার জন্য ওজোপাডিকোর কথিত গ্রাহক সেবা কেন্দ্রগুলোতে কোন যানবাহনের ব্যবস্থা করতে পারেনি। খোদ বরিশাল মহানগরীর এলটি ও এইচটি বিতরণ ও সরবরাহ লাইনগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষন ব্যবস্থা বলতে এখন আর কিছু অবশিষ্ট নেই। এ অঞ্চলের কয়েক হাজার ১১/.০৪ ট্রান্সফর্মারগুলোতে আজ পর্যন্ত কোন টেকসই ও নির্ভরযোগ্য ড্রপ আউট নেই। ফলে যেকোন ট্রান্সফর্মারের ১টি ফিউজ পুড়ে গেলে পুরো ফিডার বন্ধ করে তা সংযোগ দিতে  হয়। বরিশাল মহানগরীতে ৪০-৫০টি ট্রান্সফর্মার নিয়েও একটি ফিডার রয়েছে। এসব ফিডারের ট্রান্সফর্মারগুলোতে সপ্তাহে ১টি ফিউজ পুড়লেও প্রতিদিন গড়ে ৭বার লাইন বন্ধ করতে হচ্ছে। ট্রান্সফর্মারগুলো রক্ষায় কোন এমসিপি পর্যন্ত নেই।
উপরন্তু দীর্ঘদিনের পুরনো এইচটি ও এলটি লাইনগুলো এবং তার ইনসুলেটর সহ প্রতিটি যন্ত্রাংশ নিয়মিত পর্যবেক্ষন এবং তার রক্ষণাবেক্ষনে কোন রুটিন ব্যবস্থাও গত দুই দশকে গড়ে তুলতে পারেনি ওজোপাডিকো। অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানীটির বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগগুলোর নির্বাহী প্রকৌশলী, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলীরা মাঠ পর্যায়ে বিতরণ ব্যবস্থা পর্যবেক্ষন সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চেয়ে দপ্তরে বসে ‘ডেস্ক ওয়ার্ক’ করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বেশী।
দীর্ঘদিন ধরে ওজোপাডিকোর বিভিন্ন প্রকল্পে সংগৃহীত  বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বেশীরভাগ ১১ কেভি ট্রান্সফর্মারের ড্রপ আউটগুলো অত্যন্ত নি¤œমানের। বরিশাল মহানগরীর ‘হাতেম আলী কলেজ ফিডার’এ যেসব আইসোলেটর লাগান হয়েছে, তা বন্ধ ও চালু করতে পুরো ফিডারটিই বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।
মহানগরীর ৩৩/১১ কেভি কন্ট্রোলরুমে যেসব স্পর্শকাতর বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে তাও অত্যন্ত নি¤œমানের। গত ১ এপ্রিল রূপাতলী সাব-স্টেশনের ‘কারেন্ট ট্রান্সফর্মারের বি¯েফারন থেকে অগ্নিকান্ডে এ নগরী সহ ঝালকাঠী জেলায় তিন থেকে ৭ ঘন্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। গত ১৭ আগষ্ট গভীর রাতে সাব-স্টেশনটির একটি ৩৩/১১ কেভি ট্রান্সফর্মারের ‘ট্রিপিং কয়েল’ পুড়ে গিয়ে বরিশাল মহানগরীর বিশাল এলাকা সহ ঝালকাঠীর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পুড়ে যাওয়া ট্রিপিং কয়েল খুলনা থেকে সংগ্রহ সহ তা সংযোজন করতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়েছে। এসময়ে বিকল্প ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখতে একটি ট্রান্সফর্মারে সব লোড চাপাতে গিয়ে লোডশেড করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কেন বিকল্প ছিলনা। অথচ প্রথম দুর্ঘটনার পরে তার কারণ উদঘাটন করে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিলে পরের দুর্ঘটনাটি নাও ঘটতে পারতো।
এভাবে জোড়াতালি দিয়েই চলছে বরিশাল অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থা। অথচ সদ্য বিদায়ী সরকার সারা দেশের মত বরিশালেও শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেয়ার ঘোষনা দিয়ে বাহবা নিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে এখনো বরিশাল বিভাগীয় সদর সহ সন্নিহিত এলাকায় সাধারন গ্রাহকের ঘরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ পৌছেনি।
এ ব্যাপারে ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বরিশাল মহানগরী সহ পুরো অঞ্চলেই গাছের কারণে বিদ্যুৎ বিতরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘœ ঘটার অন্যতম কারণ বলে দাবী করেন। পাশাপাশি পুরনো লাইন সহ অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরী বলে সেলক্ষ্যে কাজ চলছে বলে জানান।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT