লালমোহনে অনাবাদি জমিতে বস্তায় আদা চাষে কৃষকদের চমক লালমোহনে অনাবাদি জমিতে বস্তায় আদা চাষে কৃষকদের চমক - ajkerparibartan.com
লালমোহনে অনাবাদি জমিতে বস্তায় আদা চাষে কৃষকদের চমক

4:10 pm , September 10, 2024

লালমোহন প্রতিবেদক ॥ ভোলার লালমোহন উপজেলায় কয়েক মাস আগেও যেসব জমি অনাবাদি ছিল, এখন সেসব জমিতে শোভা পাচ্ছে বস্তাভর্তি আদা গাছে। বস্তার মধ্যে দিন দিন পরিপূর্ণ হচ্ছে আদা। আর মাত্র চারমাস পরেই এসব আদা বস্তা থেকে তুলে বিক্রি করবেন চাষিরা। বর্তমানে প্রতিদিন কাজের ফাঁকে আদা গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
লালমোহন উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কৃষি অফিসের পরামর্শে উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ৮জন কৃষক প্রায় ১২শ বস্তায় এ বছর নিজেদের অনাবাদি জমিতে আদা চাষ করেছেন। আদা তোলা পর্যন্ত প্রতি বস্তায় চাষিদের খরচ হবে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। বস্তা প্রতি সর্বনি¤œ ১ কেজি আদা পাবে চাষিরা। তারা বাজারে এসব আদা প্রতি কেজি দুই থেকে আড়াইশ টাকা করে বিক্রি করতে পারবেন। লালমোহনের চাষিদের অনাবাদি জমিতে বস্তায় চাষ করা আদার জাতগুলো হচ্ছে: বারি আদা-২ এবং পাহাড়ি আদা।
উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পাঙাশিয়া এলাকায় নিজের বসতবাড়ি সংলগ্ন অনাবাদি জমিতে ২৪৫টি বস্তায় আদা চাষ করছেন মো. শাহে আলম। গত এপ্রিল মাসে কৃষি অফিসের পরামর্শে কুড়িগ্রাম থেকে বারি আদা-২ জাতের বীজ এনে চাষ শুরু করেন তিনি। চাষি শাহে আলম বলেন, আগে এসব জমিতে কিছুই চাষ হতো না। তবে কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে প্রথমবারের মতো বস্তায় আদা চাষ করেছি। বর্তমানে আদার অবস্থা খুবই ভালো। আগামী মাস চারেকের মধ্যে বস্তার ভেতর থেকে আদা তুলতে পারবো। আদা তোলা পর্যন্ত আমার খরচ হবে ১২-১৩ হাজার টাকা। আশা করছি এই ২৪৫ বস্তা থেকে অন্তত ৬০ হাজার টাকার আদা বিক্রি করতে পারবো।
তিনি আরো বলেন, এই আদা চাষ খুবই সহজ। কোনো শ্রমিকেরও প্রয়োজন হয় না। নিজের অন্যান্য কাজের ফাঁকে নিজেই এসব আদা গাছের পরিচর্যা করতে পারি। আর এই আদা চাষে খরচও অনেক কম। এবার যেহেতু ভালো ফলন  পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই সামনের বছরও আরো অধিক জায়গায় আদা চাষ করবো।
পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মহেষখালি সিকদারহাট এলাকার আবুল কালাম নামে আরেক আদা চাষি জানান, গত বছর সীমিত পরিসরে বস্তায় আদা চাষ করেছি। ওই বছর আদা ভালো হয়েছিল। তাই এ বছর ১৫০ বস্তায় নতুন করে আবারো আদা চাষ করেছি। এবারও মনে হচ্ছে ফলন ভালো হবে। আশা করছি এখান থেকে এ বছর অন্তত ৩০ হাজার টাকার আদা পাবো। বস্তা পদ্ধতির এই আদা চাষে অতিরিক্ত জমির প্রয়োজন হয় না। নিজের বাড়ি বা বাগানের যেকোনো স্থানেই এই আদা চাষ করা যায়। তাই সামনের বছর ১ হাজার বস্তায় আদা চাষের পরিকল্পনা রয়েছে।
অন্যদিকে এসব আদা চাষিদের দেখাদেখি ইতোমধ্যে স্থানীয় অনেক যুবকরাও আদা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। তাদের মধ্যে গজারিয়া এলাকার এমনই একজন মো. মনজুর রহমান। তিনি বলেন, এ বছর যারা আদা চাষ করছে তাদের ফলন অনেক ভালো হবে। আমি এসব চাষিদের আদা নিজে গিয়ে দেখেছি। এতে যতটুকু বুঝতে পেরেছি; এই আদা চাষে অতিরিক্ত কোনো জমির দরকার নেই, খরচ এবং পরিশ্রমও অনেক কম। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী বছর নিজের বসতবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় অন্তত ৫ হাজার বস্তায় আদা চাষ করবো।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা টুটুল চন্দ্র সাহা জানান, অনাবাদি জমিতেই কৃষকরা বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ করতে পারেন। এতে কৃষকদের খরচ অনেক কম। বস্তা পদ্ধতির এই আদা রোপণের ৮ মাসের মধ্যে পুরোপুরি ফলন চলে আসে। এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে এই উপজেলায় ১২শ বস্তায় কৃষকরা আদা চাষ করেছেন। আশা করছি আগামীতে অন্তত ২০ হাজার বস্তায় কৃষকরা আদা চাষ করবেন। কারণ এরই মধ্যে অনেকে এই বস্তা পদ্ধতির আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
তিনি আরো জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে এসব আদা চাষিদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরমার্শও দেওয়া হচ্ছে। আগামীতে যারা এই বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ করবেন, আমরা তাদের পাশে থাকবো এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবো। যেন কৃষকরা এই আদা চাষ করে লাভবান হতে পারেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT