4:00 pm , September 10, 2024
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ সেনাবাহিনী ও র্যাব আসামি ধরে পুলিশের কাছে দিচ্ছে। আর পুলিশ সেই আসামীদের কৌশলে ছেড়ে দিচ্ছে বা জামিন পেতে সাহায্য করছে। যে কারণে সেনাবাহিনীর হাতে আটকৃত সন্ত্রাসী আলামিনের সহযোগী ফয়সাল, রুমা, সুমিসহ কয়েকজন জামিন পেয়ে পুনরায় এলাকায় তান্ডব শুরু করেছে। তাদের ভয়ে এলাকাবাসী এখন আতঙ্কিত বলে জানালেন স্টেডিয়াম এলাকার বাসিন্দারা।
১০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে বরিশাল প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্টেডিয়াম এলাকার বাসিন্দারা লিখিত অভিযোগ তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনের ব্যানারে লেখা ‘আল আমিন, বাপ্পি, রাকিব, অজিজুল, পলাশ, রুবেল, দেলোয়ার, বেল্লাল, লিটু, রনি, সাব্বির, রাবি, খাটো রাসেল, রুমা, লিলি, সুমি, ফরিদাসহ এই সন্ত্রাসীদের গডফাদার মজিবুর ও সিদ্দিক সহ স্বৈরাচার আওয়ামীগের সন্ত্রাসীদের হাতে স্টেডিয়াম কলোনীতে হামলাকারীদের বিচারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন।
লিখিত বক্তব্যে স্টেডিয়াম কলোনীর বাসিন্দারা তাদের অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, বিগত ১৫ বছর ধরে সন্ত্রাসী আল আমিন বাহিনীর ভয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন তারা। এই সন্ত্রাসী আল আমিন আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় স্টেডিয়াম বা বঙ্গবন্ধু কলোনীসহ আশেপাশের এলাকায় মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, নারীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা, অসহায়, গরিব মানুষের বাড়ি-ঘর দখল এবং বিদ্যুৎ চুরি করে অবৈধ ইজিবাইক ও ব্যাটারি রিকশা চার্জ দেয়াসহ সব ধরনের অনৈতিক কাজই চালিয়ে এসেছে এবং এখনো তা চলমান রয়েছে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১০ ও ১১ নং ওয়ার্ডের নদী তীরবর্তী এলাকায় মাদকের বিস্তার ঘটিয়ে কিশোর এবং যুব সমাজকে মাদকের নেশায় আসক্ত করে তাদের দিয়ে বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে নিজের সাম্রাজ্য গড়াই ছিল আল আমিনের মূল লক্ষ্য। সে এলাকার এতটাই দুর্ধর্ষ এবং হিংস্র যে তার ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি। এমনকি আল আমিনের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা থাকা সত্যেও তাকে পুলিশ কখনো গ্রেফতার করেনি।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী সরকার পতনের পরেও এদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড থেমে থাকেনি। গত ২ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু কলোনীর বাসিন্দা শ্রমিকদল নেতার পিতা রিকশাচালক আব্দুর রহিম হাওলাদারকে কুপিয়ে জখম করে আল আমিন ও তার বাহিনী। এসময় তারা মসজিদে মাইকিং করে ঘোষণা দেয় এলাকায় কোনো বিএনপি প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এরপর ৪ সেপ্টেম্বর রাতে একটি স্ব-মিলের শ্রমিক সুমনকে আটকে রেখে মারধর করে আল আমিন বাহিনী। খবর পেয়ে পুলিশসহ এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করতে গেলে আল আমিন তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে পুলিশ এবং এলাকাবাসীর ওপর স্বশস্ত্র হামলা চালায়। এসময় দুই পুলিশসহ মহানগর মৎস্যজীবী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফেরদাউস, শ্রমিকদল নেতা আসলাম, বাহাদুর, সুমন, সোনিয়া, মামুন ও তানজিলকে নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করে সন্ত্রাসী আল আমিন ও তার বাহিনী। গত ৪ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলায় বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের যারা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়েছেন তাদেরকেও শান্তিতে থাকতে দেয়া হয়নি। ঘটনার দিন থেকে টানা পাঁচদিন তাদের এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। বেলস পার্ক মাঠে রাত্রিযাপন করতে হয়েছে তাদের। এরপরও সন্ত্রাসী আল আামিন বাহিনীকে গ্রেফতারে এগিয়ে আসেনি পুলিশ।
বক্তারা বলেন, এলাকাবাসীর দাবীর মুখে বিষয়টিতে নজর দেয় বরিশালের সেনাবাহিনী। ৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে ১০ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডবাসির সহযোগিতায় সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসী আল আমিন বাহিনীর প্রধান আল আমিন এবং তার অন্যতম সহযোগী ফয়সালকে গ্রেফতার করে। ওইদিন রাতেই আওয়ামী শাসনামলে নির্যাতিত এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্টেডিয়াম বা বঙ্গবন্ধু কলোনী থেকে আল আমিনের সহযোগী আজিজুল, রুমা, সুমি এবং লিলিকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো আটককৃতরা সন্ত্রাসী কর্মকা-সহ একাধিক মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হওয়া সত্যেও পুলিশ থানা থেকেই মাদক ব্যবসায়ী রুমাকে ছেড়ে দেয়। এছাড়া পুলিশের দুর্বল ভূমিকার কারণে ১০ সেপ্টেম্বর সুমি এবং এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর লিলি আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় আবারও সন্ত্রাসী কর্মকা- এবং মাদক কারবার শুরু করে দিয়েছে। এমনকি মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশি ভূমিকা বা অভিযান না থাকায় তারা এখনো বীরদর্পে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং সাধারণ মানুষকে নানাভাবে হুমকি-ধামকী দিচ্ছে। যার ফলে এলাকার মানুষ এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। চাঁদমারী বঙ্গবন্ধু কলোনীর বাসিন্দারা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জীবনের নিরাপত্তা চেয়েছেন। এই আল আমিন বাহিনীর অন্য সদস্য এবং সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার করা না হলে তাদের জীবন হুমকির মুখে পড়বে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান বলে সাইদুল ইসলাম, তোতা, কামরুলসহ কয়েকজন।
সংবাদ সম্মেলনে মহিলাদলের নেত্রী ফরিদা বেগম বলেন, এই সন্ত্রাসী আল আমিন এখন বিএনপির ছত্রছায়ায় আসার তদবির চালাচ্ছে।