পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে উল্টো কারাগারে অফিস সহায়ক ! পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে উল্টো কারাগারে অফিস সহায়ক ! - ajkerparibartan.com
পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে উল্টো কারাগারে অফিস সহায়ক !

4:20 pm , September 4, 2024

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ১২ বছরের চাকরিজীবনের বকেয়া পাওনা টাকা চাওয়ায় অফিস সহায়কের স্থান হয়েছে কারাগারে। মাদরাসা সুপার দেলোয়ার হোসেনের দায়ের করা মামলায় এখন কারাভোগ করছেন অফিস সহায়ক গোলাম মাসুদ। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশাল সদর উপজেলার বন্দর থানাধীন চাঁদপুরা ইউনিয়নের দুর্গাপুর হাজী মোবারক আলী মাদরাসায়। বন্দর থানা পুলিশ কোনো পূর্ব তদন্ত ও যাচাই-বাছাই ছাড়াই মধ্যরাতে দায়েরকৃত অভিযোগের ভিত্তিতে সকালে অভিযান চালিয়ে মাদরাসায় কর্মরত গোলাম মাসুদকে আটক করে। সরেজমিনে ২ সেপ্টেম্বর সোমবার বরিশালের আদালত প্রাঙ্গণে একজন মা ও তার দুই সন্তানের কান্নার সূত্র ধরে উঠে আসে প্রতারণা, জালিয়াতি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে একজন অফিস সহায়ক কে ফাঁসানোর ভয়ানক চিত্র। চাঁদপুরা ইউনিয়নের দুর্গাপুর হাজী মোবারক আলী দাখিল মাদরাসার সুপার প্রবাশ ফেরৎ আওয়ামী লীগ নেতা ও মাদরাসার সাবেক সভাপতি সহ আরো কয়েকজন মিলে একজন অফিস সহায়কের বিরুদ্ধে এক ধরণের নাটক সাজিয়েছেন। এর নেপথ্যে রয়েছে ১২ লাখ টাকা। অনুসন্ধানে চাঁদপুরা ইউনিয়নের বৈরাগী বাড়ী মসজিদ থেকে উত্তরে দুর্গাপুর  মসজিদ বাড়ির দিকে এগোতেই পথচারী, স্থানীয় বাসিন্দা সহ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে প্রতারণার ভয়াবহ কাহিনী।স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রতিবেশীদের সাথে আলোচনা এবং আদালতের নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, পুরো ঘটনাটি  পারিবারিক কলহের জের থেকে শুরু হয়েছে এবং পরবর্তীতে তা অর্থ আত্মসাৎ এর নাটক সাজিয়ে একটি পরিবারকে পথে বসানোর ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। স্থানীয়রা জানান,  মাদরাসার সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান লিটু আওয়ামী লীগের প্রভাব বিস্তার করে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে এসব ঘটিয়েছে। তাকে সহযোগিতা করেছে মাদরাসা সুপার দেলোয়ার এবং আনিছুর রহমান বাচ্চু মৃধা। বাচ্চু ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এবং একই বাড়ীর বাসীন্দা।পারিবারিক কলহের জের ধরে হাজী মোবারক আলী দাখিল মাদরাসার অফিস সহায়ক গোলাম মাসুদকে ২০১০ সালের ১ মে সম্পূর্ণ বে-আইনিভাবে চাকুরিচ্যুত করে। চাকরি ফিরে পেতে গোলাম মাসুদ আদালতের দ্বারস্থ হন। প্রায় একযুগ ধরে মামলা চলমান থাকার পর আদালত অফিস সহায়ক গোলাম মাসুদকে চাকুরিচ্যুত করাকে সম্পূর্ণ বে-আইনী বলে রায় দেন। এসময় আদালত পূর্বের বকেয়া বেতন সহ গোলাম মাসুদকে তার চাকরিতে পুনর্বহালের আদেশ দেন। ২০২২ সালের ২৮ জুন গোলাম মাসুদ পুনরায় চাকরিতে যোগদান করেন। কিন্তু যোগদানের পর করার পর ২ বছর অতিক্রান্ত হলেও তাকে তার বকেয়া বেতন বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে গোলাম মাসুদ ফের আদালতের দ্বারস্থ হন। এই মামলায় বিজ্ঞ আদালত বিবাদী সাবেক সভাপতি,  মাদরাসা সুপারসহ অন্যান্য বিবাদীকে স্ব-শরীরে হাজির হয়ে কারন দর্শানোর জন্য শো-কজ প্রদান করেন। তারা তখন আদালতে হাজির হয়ে গোলাম মাসুদের সই করা একটি জাল অঙ্গীকারনামা দেখান। এতে উল্লেখ আছে তাহার স্বপদে যোগদানের সময় এই অঙ্গীকার করেন যে, তার বকেয়া বেতনে তাহার কোন দাবী নাই’। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি এমন কোন সই স্বাক্ষর করেননি। ঘটনার তদন্তে আদালতের কাছে প্রাথমিকভাবে এটা প্রমানিত হয় যে, ঐ অঙ্গীকারনামায় গোলাম মাসুদের সই কম্পিউটার স্ক্যানের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এতে আদালত অবমাননা ও মামলার টাকা পরিশোধ না করায় সভাপতি ও মাদ্রাসা সুপারসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানান গোলাম মাসুদের পক্ষের  আইনজীবী জুবায়ের আলম। তিনি বলেন, আদালত বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে জানতে পেরে তারা আপোষ মীমাংসার প্রস্তাব নিয়ে ৩১ আগস্ট বৈঠক করেন। এরপর প্রায় একযুগের বকেয়া বেতন ১২ লক্ষ টাকা পরিশোধের অঙ্গীকার করে চলে যান। ২ আগস্ট সকালে পুলিশ এসে আমার মক্কেল গোলাম মাসুদকে আটক করে নিয়ে যায়। এসময় তিনি বন্দর থানার একটি এজাহারের কপি তুলে ধরেন। যা ১ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ৫মিনিটে দায়ের করা হয়েছে এবং বন্দর থানা পুলিশ পরদিন সকালে মাদরাসায় কর্মরত গোলাম মাসুদকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। এখানে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে ২০২৩ সালের ২৮ মে মাদরাসার সাতটি ল্যাপটপ চুরি হয়েছে, যার মূল্য দুই লক্ষ আশি হাজার টাকা। এ নিয়ে ঐ সময় বন্দর থানায় জিডিও করা হয়। এ বিষয়ে বন্দর থানা  পুলিশ ওই সময় কোনো তদন্ত করেননি। কিন্তু ১ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে এজাহারের উপর গুরুত্ব দিয়ে পরদিনই গোলাম মাসুদকে আটক করে নিয়ে যাওয়ায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই পুলিশের চরিত্র কখনো ঠিক হবে না।   তারা এখনো পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান লিটুর হয়ে কাজ করছে এবং মাদরাসা সুপার দেলোয়ার ও বাচ্চু মৃধাকে অফিস পিয়ন গোলাম মাসুদ এর প্রাপ্য টাকা থেকে বঞ্চিত করতে সহযোগিতা করছে। বন্দর থানার পুলিশ ঘটনার সবই জানেন। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন স্থানীয় চাঁদপুরা ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ড এর ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, পুলিশ সবকিছু জানে। তারা সঠিক তদন্ত করলে গোলাম মাসুদ অনেক আগেই ন্যায় বিচার পেতেন। এ বিষয়ে জানতে হাজী মোবারক আলী দাখিল মাদরাসার সুপার দেলোয়ার এর মোবাইলে একাধিক কল  দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT