3:51 pm , August 31, 2024
বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব রক্ষক মুন্নী
নিয়োগ, টেন্ডার এমন কিছু নেই যেখানে তার কর্তৃত্ব নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল স্বাস্থ্য সেক্টরের অঘোষিত রানী তিনি। নিয়োগ, টেন্ডার এমন কিছু নেই যেখানে তার কর্তৃত্ব নেই। মূল পদ হিসাব রক্ষক হলেও জেলার সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকও তার ক্ষমতার কাছে হার মানে। তিনি বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব রক্ষক জাহিদা আনোয়ার মুন্নী। একযুগগেও বেশী সময় ধরে এই পদ আগলে রেখেছেন তিনি। তবে শুধু এই এক পদই নয় বর্তমানে ক্যাশিয়ার,স্টোর,ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদও রয়েছে তার দখলে। মোট কথা নিজের পদ নিয়ে একাই দখলে রেখেছেন জেলা সিভিল সার্জন অফিসের ৪ পদ।
বরিশাল স্বাস্থ্য সেক্টরে একটা কথা কথিত আছে মুন্নীর বিরুদ্ধে যেও না। তাহলে বড় বা ছোট অফিসার হোক না কেন, তার আর বরিশালে থাকা সম্ভব না। সর্বশেষ এর বাস্তব উদাহরন বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। জেলা সিভিল সার্জন অফিসের জনবল নিয়োগ নিজের কব্জায় নিতে বাধা হওয়ায় মুন্নীর আক্রোসের স্বীকার হয়েছেন তিনি। বিভিন্ন মারপ্যাচে ফেলে বাধ্য করেছেন অন্যত্র বদলী হয়ে যেতে। যা নিজেই স্বীকার করেছেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন সম্প্রতি জেলা সিভিল সার্জন অফিসের অধীনে শতাধিক জনবল নিয়োগ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসাবে এই নিয়োগের ফাইল করাসহ প্রশাসনিক সকল দায়িত্ব আমার উপর বর্তায়। কিন্তু নিয়োগের শুরু থেকেই মুন্নী আমার এই কার্যক্রমে খবরদারী শুরু করেন। তিনি নিয়োগে তিনি বানিজ্য করতে বিভিন্ন ভাবে আমাকে হয়রানী শুরু করেন। এক পর্যায়ে আমাকে বাধ্য করেন বদলী হয়ে যেতে। তাদের চাপে আমি নিজেই অধিদপ্তরে বদলীর জন্য আবেদন করতে বাধ্য হই। তার এ কাজে সিভিল সার্জন মারিয়া হাসানও নিরব সমর্থন দিয়েছেন।
এদিকে বরিশাল জেলার সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টেন্ডারে একক আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন মুন্নী। তার মনোনীত ঠিকাদার ছাড়া কেউ কোন হাসপাতালের পথ্য,এমএস আর কিংবা যন্ত্রপাতি সরবারহের কাজ পায় না। স্বাস্থ্য সেক্টরের সবারই জানা আছে মুন্নীর কাছের ঠিকাদার হিসাবে পরিচিত সত্য রঞ্জন (মরন বাবু)। তার মালিকানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এই মুন্নীর হাত ধরে গত এক যুগেরও বেশী সময় ধরে বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল সহ বরিশাল জেলা ও বিভাগের অধিকাংশ হাসপাতালে ঔষধ সরবারহ ও মেডিকেলের বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি সরবারহ করে আসছে। মরন বাবুর সাথে তার সখ্যতা এমন যে তিনি ছাড়া অন্য কোন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দরপত্র কিনতে ও জমা দিতে দেন না মুন্নী। বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে সাবেক এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন জেনারেল হাসপাতাল সিভিল সার্জন অফিসের নিয়ন্ত্রনে না। সিভিল সার্জন এই হাসপাতালের তত্বাবোধায়ক হলেও হাসপাতালের অফিসিয়াল কার্যক্রম সিভিল সার্জন অফিসের অধীনে না। তারপরও মুন্নী দরপত্রের পত্রিকা বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে সকল টেন্ডার কার্যক্রম তিনি নিয়ন্ত্রন করতেন। তার প্রভাবে আমরা কাজ করতে পারতাম না। বর্তমানে জেলার বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়গনস্টিক সেন্টার রিনিউ করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মুন্নী।
এ বিষয়ে কথা বলতে তার মুঠো ফোনে একাধিকবার কল দিতেও পাওয়া যায়নি। এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে বরিশাল স্বাস্থ্য সেক্টরে একক আধিপত্য বিস্তার করে বিপুল ধন সম্পদের মালিক হয়েছেন মুন্নী। বরিশাল নগরীতে বহুতল ভবন,ঢাকায় ফ্লাট ও প্লটের মালিক হয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে বিস্তারিত থাকছে আগামী পর্বে।