3:41 pm , August 29, 2024

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সরকারি খাস জমি দখল করে অবৈধভাবে সরকারের তথা খাদ্য অধিদপ্তরের সাথে ব্যবসা করছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। তার এই কাজে প্রশ্রয়দাতা ও ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে রয়েছে বরগুনা-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, তার ছেলে সুনাম দেবনাথের শ্যালক রানা তালুকদার, এপিএস পরিমল চন্দ্র ও শুভাস চন্দ্র। তারা সকলেই বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এবং সাবেক সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর আস্থাভাজন ও বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরগুনা জেলার সদর উপজেলার দক্ষিণ মনসাতলী নামক স্থানে ২০২১ সালে মেসার্স বরগুনা অটো ফ্লাওয়ার মিলটি স্থাপন করা হয়। এর মালিক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মিলন চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি বরগুনা-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন এর আস্থাভাজন ও বিশ্বস্ত। ২০১৬ সালে বরগুনা জেলার ০২ নং গৌরিচন্না ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কা প্রতীকে অংশগ্রহণ করেন।
সাবেক জেলা বাকেরগঞ্জ বর্তমানে বরগুনা জেলার অন্তর্গত জে,এল নংঃ ৯, বড় গৌরিচন্না মৌজার বি,এস ১৭৪২ খতিয়ানের হাল ৫৬৯৩ নং দাগ, বি,এস ১২৮৯/১৫৯৬ নং খতিয়ানের হাল ৫৬৯০ নং দাগ, বি,এস ১৫৯৯/২২৯৮ নং খতিয়ানের ৫৬৯২ নং দাগের জমি নিয়ে বিরোধের সূত্রে আলহাজ্ব আজিজ উদ্দিন মোল্লাসহ ৩৫ জন বাদী হয়ে মিলন চন্দ্র বিশ্বাসসহ ১১ জনকে বিবাদী করে সিনিয়র সহকারি জজ আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। ২০২২ সালের ২১ আগস্ট আদালত শুনানী শেষে উক্ত মামলায় স্থিতিবস্থা বজায় রাখার আদেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারী আদালতের অপর এক আদেশে স্থিতিবস্থা বহাল রাখার আদেশের মেয়াদ বর্ধিত করা হয়। কিন্তু আদালতের উক্ত নিষেধাজ্ঞার আদেশ অমান্য করে বিরোধীয় জমিতে মিলন চন্দ্র বিশ্বাস আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে বরগুনা অটো ফ্লাওয়ার মিলটি স্থাপন করে খাদ্য বিভাগের আওতাধীন বরগুনা জেলায় পুষ্টি চালের মিশ্রণ মিলের কার্যক্রম, ওএমএস কার্যক্রমে সরকারি গুদাম হতে গম উত্তোলন করে বরগুনা জেলার ওএমএস ডিলারদের নিকট আটা সরবরাহ এবং বেসরকারি বাজারে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
আদালতে দায়েরকৃত মামলার আর্জিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বরগুনা সদর থানার অন্তর্গত ০২নং গৌরিচন্না ইউনিয়নের ০৭ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ মনসাতলী গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচলের একমাত্র পথ। উক্ত পথ দিয়ে দৈনিক শত শত মানুষসহ বাদীগগন চলাচল করে থাকেন। মহাসড়কের পূর্ব পাশের ভূমি আবাদের জন্য উক্ত জায়গাটিই একমাত্র পথ এবং কৃষি যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি নিয়ে যেতে হয়। উৎপাদিত ফসল সংগ্রহ করার জন্য মানুষজন ও ফসল সংগ্রহেন যান যথা: মাহিন্দ্রা, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান উক্ত পথ দিয়েই চলাচল করে এবং ফসল সংগ্রহ করে এবং বাদীগণের একমাত্র যাতায়াতের পথ। কিন্তু বি,এস জরিপে আর,এস ও এস,এ ৩৬১৯ নং দাগের ০৯ শতাংশ বি,এস ১৭৪২ নং খতিয়ানের হাল ৫৬৯৩ নং দাগে ০.০৯ একর ভূমি ১ হতে ৩ নং বিবাদীগণের নামে এবং ৩৬২৩ নং দাগের ০৪ শতাংশ ভূমি সিকস্তি ভূমি বি,এস ১২৮৯/১৫৯৬ নং খতিয়ানের হাল ৫৬৯০ নং দাগে ০.০১ একর ৪ নং বিবাদী ও ১ হতে ৩ নং পূর্ববর্তীর নামে ও বি,এস ১৫৯৯/২২৯৮ নং খতিয়ানের হাল ৫৬৯২ নং দাগে ০.০৩ একর ভূমি ৫/৬ ও ১ হতে ৩ নং বিবাদীর পূর্ববর্তীর রেকর্ডীয় ভূমির সাথে শামিল হয়ে রেকর্ড হলেও বাদীগণের ও এলাকাবাসীর চলাচলে সুখাধিকারে কোন বিঘœ ঘটে নাই। উক্ত ভূমি অত্র মোকদ্দমার বিরোধীয় ভূমি’।
মেসার্স বরগুনা অটো ফ্লাওয়ার মিলের মালিক মিলন চন্দ্র বিশ্বাসের সাথে স্থানীয় জনসাধারণের আদালতে বিচারাধীন মামলায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ বলবৎ থাকা সত্ত্বেও উক্ত নিষেধাজ্ঞার আদেশ অমান্য করে ফ্লাওয়ার মিল স্থাপন করা এবং সরকারের তথা খাদ্য বিভাগের সাথে ও বেসরকারিভাবে বাজারে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতারনামূলকভাবে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর যথা সিভিল সার্জন, বরগুনা অফিসের লাইসেন্স, ০২ নং গৌরিচন্না ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় হতে ট্রেড লাইসেন্স, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, বরগুনা কার্যালয় হতে খাদ্যশস্য/খাদ্য সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয় ও গুদামজাতকরণের লাইসেন্স, ফুড গ্রেইন লাইসেন্স, সহকারি পরিচালকের দপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিস, পটুয়াখালী হতে ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তর, বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় হতে পরিবেশগত ছাড়পত্রসহ অন্যান্য লাইসেন্স গ্রহণ করা হয়েছে।