প্রধান খাদ্য ফসল আমন নিয়ে দুশ্চিন্তায় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা প্রধান খাদ্য ফসল আমন নিয়ে দুশ্চিন্তায় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা - ajkerparibartan.com
প্রধান খাদ্য ফসল আমন নিয়ে দুশ্চিন্তায় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা

4:18 pm , August 24, 2024

বিশেষ প্রতিবেদক ॥  প্রায় ১৪ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত বরিশাল কৃষি অঞ্চলে এবার চলতি খরিফ-২ মৌসুমে প্রায় ৯ লাখ হেক্টরে আমন আবাদের মাধ্যমে উৎপাদিত ধান থেকে সাম্প্রতিককালের সর্বাধিক ২৪ লাখ টনের মত চাল পাবার লক্ষ্যে কৃষিযোদ্ধারা এখন মাঠে। তবে ভরা বর্ষার আষাঢ়-শ্রাবনে বৃষ্টির ঘাটতি পরে ভাদ্রের পূর্ণিমার ভরা ও মরা কাটালে ভর করে গত কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণের সাথে উজানের ঢল ও ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ারে বীজতলা, রোপা আমনের জমি প্লাবনের কবলে। ফলে এবারো আমন নিয়ে শঙ্কা ও দুঃশ্চিন্তায় বরিশালের কৃষিযোদ্ধারা। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে প্রায় ৫৩ হাজর হেক্টরে আমন বীজতলা তৈরী হলেও তার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর ইতোমধ্যে প্লাবনের শিকার। পাশাপাশি যে প্রায় আড়াই লাখ হেক্টরে রোপন সম্পন্ন হয়েছে তারও অন্তত ৩০ হাজার হেক্টরের মত অতিবর্ষন ও জোয়ারের প্লাবনের কবলে।
গত বছর খরিপ-২ মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রার সাড়ে ১১ হাজার হেক্টর অতিরিক্ত প্রায় ৮ লাখ ৮১ হাজার হেক্টরে রোপা ও বোনা আমন আবাদ করেন কৃষকরা। ফলে এ অঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রার ৭৩ হাজার টন অতিরিক্ত প্রায় ২২ লাখ ৮১ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছিল বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই সূত্রে জানা জানা গেছে।
বরিশালে আমন এখনো প্রধান ফসলের অবস্থানে রয়েছে। তবে এ অঞ্চলে এখনো আমনের হাইব্রীড ধানের আবাদ অতি নগন্য। চলতি মৌসুমেও এ অঞ্চলে প্রায় ৮ লাখ ৮৩ হাজার হেক্টরে অবাদ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে হাইব্রীড’এর লক্ষ্য রয়েছে মাত্র ২২ হাজার হেক্টরের মত। যার ফলন লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়েছে হেক্টর প্রতি ৩.৬৮ থেকে ৩.৮৮ টন চাল।  অপরদিকে এখনো বরিশাল অঞ্চলে স্থানীয় সনাতন জাতের আমনের আবাদ হচ্ছে প্রায় পৌনে ৩ লাখ হেক্টরে । যার গড় ফলন হেক্টর প্রতি মাত্র ১.৭৭ টন চাল। তবে গত দুই দশকে এ অঞ্চলে উচ্চ ফলনশীল-উফশী জাতের বেশ কিছু জাতের ধানের আবাদ পর্যায়ক্রমে বাড়ছে।
তবে খাদ্য উদ্বৃত্ত বরিশাল অঞ্চলের কৃষিযোদ্ধারা এখনো বিরুপ প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করেই আউশ,অমন ও বোরা ধান সহ সব ফসলের আবাদ ও উৎপাদন করছেন। এমনকি এ অঞ্চলের কৃষকরা অনাদিকাল থেকে  ঘূর্ণিঝড় ‘হেরিকেন’, ‘সিডর’, ‘মহাসেন, ‘আইলা’, ‘ইয়াশ’, ‘অশণি’, ‘সিত্রাং’ ও ‘রিমাল’এর মত ভয়াবহ প্রকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করেই ফসল ঘরে তুলছেন।
কৃষিবীদদের মতে, বরিশাল অঞ্চলে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের আবাদ ও উৎপাদন এখনো পুরোটা প্রকৃতি নির্ভর। ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তন এ অঞ্চলের ফসলের জন্য বড় হুমকি সৃষ্টি করছে। এরপরেও এ অঞ্চলের কৃষিযোদ্ধারা অনেকটা মরনপন লড়াই করেই ফসল ঘরে তুলছেন। গত বছর ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’এর মাঝারী বর্ষণে বড় কোন ক্ষতি না হলেও ১৭ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ প্রায় ৭৫ কিলোমিটার বেগে বরিশাল উপকূল হয়ে মূল ভূ-খন্ডে আছড়ে পড়ায় আমনের যথেষ্ট ক্ষতি হয়। ওই ঝড়ের প্রভাবে মাত্র ১২ ঘন্টায় বরিশালে ২শ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। এর ২২ দিনের মাথায় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আরেক ঘূর্ণিঝড় ‘মিগজাউম’ বরিশাল উপকূল থেকে সাড়ে ১২শ কিলোমিটার দূরে ভারতের অন্ধ্র উপকূলে আঘাত হানলেও তার প্রভাবে টানা ৫ দিনের মেঘলা আবহাওয়ার সাথে অগ্রহায়ণের হালকা থেকে মাঝারী বৃষ্টিপাত আমনের আগের ক্ষতিকে আরো তড়ান্বিত করে বলে মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদরা জানিয়েছেন।
এমনকি প্রকৃতির এ রুদ্ররোষের সাথে লড়াই করেই গত অর্থ বছরের খরিপ-১,খরিপ-২ ও রবি মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলের কৃষিযোদ্ধারা প্রায় ৫০ লাখ টন দানাদার খাদ্য ফসল উৎপাদনে সক্ষম হয়েছিলেন। গত বর্ষা মৌসুম সহ বছরজুড়ে বৃষ্টির অভাবের পরে মৌসুম শেষে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’এ ভর করে প্রবল বর্ষণে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন ব্যাপক ঝুঁকির কবলে পড়ে। গত মে মাসে বরিশাল উপকূলে আছড়ে পরা ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’এর প্রভাবে ২৪ ঘন্টা বরিশালে প্রায় দেড়শ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসের মধ্যে ৬ মাসই বৃষ্টিপাতের সংকটে বোরো ও আউশের পরে আমন আবাদেও সংকট সৃষ্টি হয়। কিন্তু ভাদ্রের ভরা কাটাল ও মরা কাটালে গত এক সপ্তাহের বর্ষণের সাথে জুনের ঢল সহ ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ারের প্লাবনে আবার ঝুঁকির কবলে বরিশাল অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন। তবে খুব শিঘ্রই বরিশালে আমন ফসলী জমি প্লাবনমুক্ত হবে বলে আশা করছেন কৃষিবীদরা।
ডিএই’র মতে, চলতি খরিপ-২ মৌসুমে দেশে ৫৭ লাখ ১৮ হাজার ৩শ হেক্টরে পৌনে ২ কোটি টনেরও বেশী আমন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রনণালয়।  যারমধ্যে বরিশাল অঞ্চলে ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩১০ হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে ২৩ লাখ ৮০ হাজার ৫৫৮টন। গত বছর দেশে আমনের উৎপাদন ছিল প্রায় ১ কোটি ৭৩ লাখ টন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT